হুরাসাগর নদীর বুকজুড়ে এখন ধুধু বালুচর

প্রকাশ | ০৮ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০

শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি
ভারত কর্তৃক পানির প্রবাহ একতরফাভাবে নিয়ন্ত্রণ করায় উত্তরাঞ্চলের অন্যান্য নদীর মতো সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার প্রাচীন নদী হুরাসাগরের পানি শুকিয়ে ধুধু বালুচরে পরিণত হয়েছে। সেই সঙ্গে জলাবায়ুর বিরূপ প্রভাব, অবৈধ নদী দখল আর ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের ফলে দিন দিন মরে যাচ্ছে এ উপজেলার যমুনা, করতোয়া, বড়াল, ধলাইসহ আরও ৪টি নদী। ১৯৭৫ সালের ১২ এপ্রিল ভারত কর্তৃক ফারাক্কা ব্যারাজ চালুর পর থেকেই ক্রমে ক্রমে শাহজাদপুরের নদীগুলোর মরণদশা শুরু হয়। নদী আছে পানি নেই। প্রতি বছর বন্যা মৌসুমে বালুর আস্তরণ জমতে জমতে হুরাসাগর নদী হারাচ্ছে তার নির্দিষ্ট প্রবাহ। আর সেই সঙ্গে নদী তীর ভরাট করে গড়ে উঠছে অবৈধ বসতবাড়ি এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। নদীতে বালু জমে বিশাল বিশাল চর সৃষ্টি হয়েছে। বিগত বছরগুলোর তুলনায় এ বছরের পরিস্থিতি অত্যন্ত ভয়াবহ। গত বছরে হুরাসাগর নদীতে গ্রীষ্ম মৌসুমে ক্ষীণ স্রোতধারা থাকলেও এ বছর তার আগেই নদীতে কোনো পানি নেই। ফলে এ অঞ্চলের কৃষক, জেলেদের জীবন-জীবিকায় নেমে এসেছে ভয়াবহ বিপর্যয়। এই নদী ৪টির শাখা-প্রশাখাসহ এ অঞ্চলের অসংখ্য খাল-বিল শুকিয়ে যাওয়ায় ভূ-উপরস্থ পানির স্তর বা উৎস হারিয়ে যাচ্ছে। এতে করে সেচ সংকটেরও আশঙ্কা করা হচ্ছে ব্যাপকভাবে। খোদ সিরাজগঞ্জ জেলায় সেচনির্ভর ১ লাখ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করতে পানির স্তর নিচে নামার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই নদীর নাব্যতা সংকটের ফলে নৌ-চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। সরে জমিনে ঘুরে দেখা যায়, হুরাসাগর নদীর রতনকান্দী বটতলা, কুঠিবাড়ী, চর পোরজনা, বাচড়া, ডায়া, রুপবাটি, কৈজুরী অংশে চর জেগে ওঠায় সেখানে হচ্ছে ধান, সরিষা ও বিভিন্ন সবজি চাষাবাদ। এ ব্যাপারে হাবিবুলস্নাহনগর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ জানান, এক সময়ের খরস্রোতা হুরাসাগর নদী দেখেই মনে হচ্ছে না নদীর প্রবাহ। নদীসংলগ্ন আমার বাড়ির নিচ দিয়ে বারো মাস পানি থাকত। গুণটানা নৌকা চলত। সেসব এখন শুধুই স্মৃতি। নদীর রতনকান্দী বটতলা অংশে বালু আর ধানখেত। ফলে হুরাসাগর নদীর অবস্থা স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ। এই নদীর সবটুকুই এখন ধুধু বালুচর। মাঝে মাঝে দু-একটা জায়গায় পানির দেখা মিললেও তা যৎসামান্য। তাই হুরাসাগর নদীর প্রবাহ কমে এখন মৃতু্য নদীতে পরিণত হয়েছে।