লকডাউনে দিশেহারা সীতাকুন্ডের কৃষক

প্রকাশ | ০৯ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০

সবুজ শর্মা শাকিল, সীতাকুন্ড (চট্টগ্রাম)
চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে ক্রেতাশূন্য সবজি বাজার -যাযাদি
সবজি-ভান্ডার খ্যাত চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড উপজেলার কৃষকরা তাদের সবজি নিয়ে চরম বেকায়দায় পড়েছেন। লকডাউনের কারণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকাররা এখানে সবজি কিনতে না আসায় সবজির দাম কমতে শুরু করেছে। ফলে তারা বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির শিকার হবেন বলে সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন। অন্যদিকে দেশের চলমান পরিস্থিতির মধ্যেও ক্ষতি পোষাতে কয়েকজন সবজি ব্যবসায়ী কিছু কিছু সবজি রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে পাঠাতে চাইলেও তারা হাইওয়ে পুলিশের চাঁদাবাজির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সীতাকুন্ডে শীত-গ্রীষ্ম সব মৌসুমেই বিপুল পরিমাণ সবজির আবাদ হওয়ায় এ উপজেলাকে বলা হয় সবজি-ভান্ডার। এখানে রয়েছে চারটি বড় সবজির বাজার। পৌরসদরের মোহন্তেরহাট উপজেলার সবচেয়ে বড় বাজার। সবজি বিক্রিতে এর পরেই অবস্থান বড়দারোগারহাট, শুকলালহাট ও কুমিরা বাজারের। উপজেলা কৃষি অফিসের সহকারী কৃষি ও উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র নাথ জানান, শুধুমাত্র শীত মৌসুমেই এখানে প্রায় ৫ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে নানা রকম সবজির চাষ হয়। হেক্টরপ্রতি সবজি উৎপাদন হয় গড়ে ২০ হাজার মেট্টিক টন। প্রায় একই পরিমাণ জমিতে সবজির আবাদ হয় গ্রীষ্মকালেও। এই বিপুল পরিমাণ সবজি স্থানীয় বাজারের চাহিদা পূরণ করে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানো হয়। তবে করোনাভাইরাস আতঙ্কে সবজি রপ্তানি থমকে গেছে। উপজেলার মুরাদপুরের কৃষক জানে আলম ও সৈয়দপুরের কৃষক আবদুল আওয়াল জানান, প্রতি মঙ্গল ও শুক্রবার পৌরসদরের মোহন্তের বাজার এবং রবি ও বুধবার বাড়বকুন্ডের শুকলালহাটে সবজির বিশাল হাট বসে। এছাড়া অন্যান্য দিন সকালে কৃষক খেত থেকে সবজি নিয়ে বাজারে গিয়ে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করেন। লকডাউনের কারণে রোববার সবজির হাট অন্য হাটের মতো জমেনি। কৃষকরা জানান, শীতের বেশিরভাগ সবজি এখনো আছে। এর সঙ্গে গ্রীষ্মকালীন কিছু সবজিও বাজারে এসে গেছে। ফলে বাজারে আগের চেয়ে কম মূল্যে সবজি বিক্রি হচ্ছে। এখানে পাইকারি মূল্যে প্রতি কেজি ঢেঁড়স বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকায়, বরবটি ২০ টাকা, টমেটো ২ টাকা, ঝিঙ্গা ১৫-২০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ১০-১৫ টাকা পিস, বেগুন ১৮-২০ টাকা, কাঁচামরিচ ৪০-৫০ টাকা, লাউ আকৃতি অনুযায়ী প্রতি পিস ১০-১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লকডাউন না হলে এসব সবজি কেজিতে আরও ৫-১০ টাকা পর্যন্ত বেশি দরে বিক্রি হতো, এতে কৃষকরা অনেক লাভবান হতেন। সীতাকুন্ড সবজি ভান্ডারের মালিক সুনীল দাশ বলেন, লকডাউনের কারণে ঢাকা-চট্টগ্রামের পাইকাররা না আসায় তারা নিজেরাই কিছু কিছু সবজি ঢাকায় বিক্রির জন্য পাঠিয়েছেন। কিন্তু গত শুক্রবার কুমিলস্নার দাউদকান্দি হাইওয়ে পুলিশ তার সবজির ট্রাক আটকে ৩ হাজার টাকা আদায় করেন। একইভাবে আরও ১২টি ট্রাক থেকেও একই হারে টাকা আদায় করা হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি। তিনি বলেন, দুঃসময়ে চাঁদাবাজির শিকার হলে কেউ সবজি নিয়ে ঢাকায় যাবেন না।