'আড়ি' বেঁতের তৈরি একটি প্রাচীন বস্তু। প্রাচীনকাল থেকেই কৃষকদের ধান পরিমাপের একমাত্র বস্তু ছিল এই আড়ি। কৃষিপ্রধান বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি পরিবারে ধান ও চাল পরিমাপের এ বস্তু দেখা গেলেও তা কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে। তবে কিছু কিছু কৃষি পরিবার এখনো স্ব-যত্নে সংরক্ষণ করে রেখেছে আবহমান বাংলার এই বস্তুটি।
জানা যায়, কৃষকরা নতুন ধান ঘরে তোলার আগেই বিভিন্ন বাজার থেকে ধান পরিমাপের আড়িসহ অন্যান্য উপকরণ কিনে আনত। বর্তমানে ডিজিটাল পরিমাপক যন্ত্র আবিষ্কৃত হওয়ায় সেই আড়ি'র কদর একেবারে নেই বললেই চলে। আড়ির ব্যবহার না থাকায় এখন বেঁত শিল্পীরা আড়ি আর তৈরি করেন না। সেই সময় কৃষকরা আড়ি মেপে নতুন ধান বস্তায় ভরে গোলা ভর্তি করলেও এখন সে চিত্র চোখে পড়ে না।
সীতাকুন্ডের ভায়েরখিল এলাকার সত্তরোর্ধ ধান চাষি অজি উলস্ন্যাহ বলেন, তখনকার দিনে তারা আড়ি মেপে ধান বিক্রি করতেন। যুগের চাহিদার কারণে এখন ডিজিটাল পরিমাপ যন্ত্রে ধান মেপে বিক্রি করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, সে সময় আড়ি ছাড়াও সেরি ও পাইয়ামালার প্রচলন ছিল। এসব বস্তু ঘরের সৌভাগ্যের প্রসূতি হিসেবেও বিবেচনা করা হতো। যে গৃহস্থ পরিবারে এসব বস্তু না থাকে তাদের বদনাম হতো। আড়ি ও সেরি তৈরি হতো বেঁত দিয়ে এবং পাইয়ামালা তৈরি হতো নারকেলের কোসা দিয়ে। কালের বিবর্তনে এসব হারিয়ে যাওয়ায় বর্তমান প্রজন্ম আড়ি, সেরি ও পাইয়ামালা কি জিনিস তা চিনে না। তারা পরিচিত হচ্ছে আধুনিক পরিমাপক যন্ত্রের সঙ্গে। এছাড়া সেরি ও পাইয়ামালা গ্রামীণ গৃহস্থবাড়ির ধান, চাল, কুড়া ও বিভিন্ন জাতের বীজ পরিমাপের বস্তু ছিল।
বাড়বকুন্ডের হাতিলোটা এলাকার কৃষক দেলোয়ার হোসেন জানান, এখন থেকে ১০ বছর আগেও সিংহভাগ ধানচাষি ধান পরিমাপের প্রধান বস্তু হিসেবে আড়ি ব্যবহার করত। আধুনিক পরিমাপক যন্ত্র আবিষ্কার হওয়ার পর থেকে আড়ি'র ব্যবহার ধীরে ধীরে কমে আসতে থাকে। তবে প্রয়োজনের তাগিদে অনেককে আড়ি, সেরি ও পাইয়ামালার পরিবর্তে টিনের কৌটাকে পরিমাপক হিসেবে ব্যবহার করতে দেখা যাচ্ছে।