পরিযায়ী পাখিদের হোক নিরাপদ জলাভূমি

প্রকাশ | ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০

জ্যোতিষ সমাদ্দার বাবু
আমাদের বাংলাদেশ হলো ষড়ঋতুর দেশ। প্রতিটি ঋতুুুই আলাদা আলাদা বৈচিত্র্যের এবং সৌন্দর্য বিরাজ করে। এরই ধারাবাহিকতায় আমাদের মাঝে হাজির হয় শীত ঋতুুু। নতুন ধানে নবান্নের আমেজে ভরা থাকে গ্রামবাংলা। শীতল বাতাসে খেজুর রস আর পিঠাপুলির ঘ্রাণে মন ভরে যায়। আবার প্রকৃতিও সেজে ওঠে নানান সাজে। মাঠজুড়ে হলুদ সরিষা ফুলের সমারোহ, গোলাপ, গাঁদা ফুলের বাগান। মন চায় ঘুরে বেড়াই। এ সময় বিলের পানি কমে যায়, বিলজুড়ে শাপলার ঢ্যাপ আর পদ্মফলের সমারোহ। এ সময় আবার বাড়তি সৌন্দর্যে চলে আসে সুদূর সাইবেরিয়াসহ অন্য দেশ থেকে আসা অতিথি পাখিগুলো। বাংলাদেশের হাওড় ও বিলে দেখা মেলে ঝাঁকে ঝাঁকে এসব নাম না জানা লাখ লাখ অতিথি পাখির। তীব্র শীতে ওইসব অঞ্চলে খাবারের অভাবও দেখা দেয়। সব মিলিয়ে পাখিদের থাকা ও খাবার সংগ্রহ করা তুলনামূলক কঠিন হয়ে পড়ে। তখন পাখিরা ঝাঁকে ঝাঁকে চলে আসে যেসব অঞ্চলের ঠান্ডা কম সেদিকে। আমাদের দেশের বিভিন্ন স্থানে পরিযায়ী পাখিরা আশ্রয় নেয়। শহরের বন্দি মানুষ একটু মনোরঞ্জনের জন্য ছুটে যায় হাওড় বাওড় বিলে প্রাণের পাখির মেলা দেখতে। বালিহাঁস, চখাচখি, রাজহাঁস, সিরিয়া পাতিরা, পিয়াংচিনা, দুর্গা, টুনটুনি, রাজশকুন, লালবন মোরগ, তিলে ময়না, রামঘুঘু, জঙ্গি বটের, মানিকজোড়, গাংকবুতর, নারুদ্দি, চিনাহাঁস, নাইরাল ল্যাঙ্গি, কবালি, যেনজি, প্রোভায়, নাইবাল, ডেলা ঘেনজি, গ্রাসওয়ার, গেন্ডাভার, বারহেড, সোনাজঙ্গ, খুরুলে, কুনচুষী, বাতারণ, শাবাজ, জলপিপি, ল্যাঞ্জা, ভোলাপাখি, হারিয়াল, বনহুর, বুরলিহাস, ধূসর বটের, হলদে খঞ্চনা ও কুলাউসহ নাম না জানা শত শত পাখি। অতিথি পাখিরা তীব্র শীত থেকে বাঁচতে অপেক্ষাকৃত কম শীতের দেশ বাংলাদেশে চলে আসে। রাশিয়া, সাইবেরিয়া, আসাম, ফিলিপাইন অস্ট্রেলিয়া, নর্থ হ্যামাশায়ার, ফিনল্যান্ড, তিব্বতের উপত্যকা, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ পশ্চিম চীনের মালভূমি ও অ্যান্টার্কটিকার চেয়ে বাংলাদেশে তুলনামূলক শীত কম। পাখির কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে ওঠে আমাদের দেশের জলাশয়গুলো। গ্রীষ্মকালে আবার ফিরে যায় তাদের নিজ নিজ দেশে। তীব্র শীত বা তুষারঝড়ের কবল থেকে বাঁচতে হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে এসব পাখি আসে কিন্তু আমাদের দেশের কিছু অসৎ লোভী মানুষ এ সব অতিথি পাখির মাংস খায় এবং পাখি শিকারিরা ফাঁদ ফেলে পাখিদের ধরে নেয়। আমাদের দেশের নদী-নালা, খাল-বিলগুলো শুকিয়ে যাওয়ার কারণে অতিথি পাখির আবাসস্থল এমনিতেই কমে যাওয়ায় পাখি আসাও কমে গেছে। আমাদের সবার উচিত অতিথি পাখির আবাসস্থল নিরাপদ রাখা। এরা পাখি হলেও আমাদের দেশের অতিথি। এ কথাটা মাথায় রেখে তাদের আবাসন ও খাবারের ব্যবস্থা রাখা উচিত। বাংলাদেশের যে সব এলাকায় পরিযায়ী পাখি দেখা যায় সেসব স্থানগুলোর মধ্যে ঢাকার মিরপুর চিড়িয়াখানা, মিরপুর ক্যান্টনমেন্টের পার্শ্ববর্তী লেক, সাভারের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের লেক। সিলেটের পাহাড় ও হাওড় এলাকা, হাকালুকি হাওড়, মৌলভীবাজারের বাইক্কা বিল, হাইল হাওড়, পাত্রখোলা লেক, সুনামগঞ্চের টাঙ্গুয়ার হাওড়, রোয়া বিল, চট্টগ্রামের সন্দীপ, উড়ির চর ও চরণ দ্বীপ, নোয়াখালী জেলার নিঝুম দ্বীপ, হাতিয়া দ্বীপ, চর ওসমান বা শাহেবানিচর, চর পিয়া, বয়ার চর ও চরভাটা, পর্যটন শহর কক্সবাজারের মহেশখালী ও সোনাদিয়া, টেকনাফের সেন্টমার্টিন, শাহপরীর দ্বীপ ও হোয়াইক্যংও, বরিশালের দুর্গাসাগর, ভোলা জেলার মনপুরা দ্বীপ, চর কুকরি-মুকরি, সুন্দরবনের দক্ষিণ উপকূল চরমানিক কালকিনি বা চর নিজাম, পটুয়াখালী জেলার কুয়াকাটা, খেপুপাড়ার কলাপাড়ায়, চরমন্তাজ, সোনার চর, আগুনমুখা নদী, গলাচিপা নদী, নীলফামারীর নীলসাগর, বাফলার বিল, সিরাজগঞ্জের হুরা, পাবনা, সিরাজগঞ্জ ও নাটোর জুড়ে বিস্তৃত চলন বিল, পঞ্চগড়ের ভিতরগড় ও পদ্মার চর, নেত্রকোণার কলমকান্দার হাওড়, কিশোরগঞ্জের নিকলি হাওড় ও কলাদিয়াও পরিযায়ী পাখির আবাসস্থল। পরিযায়ী পাখির অবাধ বিচরণের স্বার্থে সরকারি হিসাব অনুযায়ী, সারাদেশে ১২টি অভয়ারণ্য থাকার কথা। তবে অত্যন্ত দুঃখজনক ব্যাপার হলো, প্রকৃতপক্ষে অভয়ারণ্য বলতে যা বুঝায় তা আজ পর্যন্ত পরিপূর্ণভাবে গড়ে ওঠেনি। আমরা চাই পরিযায়ী পাখির জন্য অবাধ বিচরণ হোক বাংলাদেশ। এ ব্যাপারে সদাশয় সরকার দ্রম্নত পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।