নারীর বহ্নিশিখা মানেই জাতির উন্নয়ন

জাগো নারী জাগো বহ্নিশিখা নজরুলের এ তেজদ্বীপ্ত কবিতার মতো নারী আজ জেগেছে সবর্ত্র। তাদের এ জাগরণে আকাশে বাতাসে ধ্বনিত হচ্ছে নারীর জয়গান। নারী যদি শুধু ঘরেই থাকে তবে পৃথিবী তার জৌলুস হারাবে। জাতিসংঘ স্বীকৃত বিশ্ব নারী দিবস উপলক্ষে আজ ফ্রেন্ডস ফোরাম পাতায় নারীদের স্বাধিকারের বিষয় নিয়ে কয়েকটি লেখা তুলে ধরা হয়েছে। ২০২৫ সালের নারী দিবসের প্রতিপাদ্য ইংরেজিতে ভড়ৎ ধষষ ড়িসবহ ধহফ মরৎষং : ৎরমযঃং, বয়ঁধষরঃু, বসঢ়ড়বিৎসবহঃ বাংলায় 'অধিকার, সমতা, ক্ষমতায়ন/নারী ও কন্যার উন্নয়ন'

প্রকাশ | ০৮ মার্চ ২০২৫, ০০:০০

নিপা আহমেদ সারাহ্‌
৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। ১৯১১ সালের ১৯ মার্চ প্রথম নারী দিবস উদযাপন করা হয়। পরবর্তী সময়ে জাতিসংঘ ১৯৭৫ সালের ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। এ বছর এই দিবসটি উদযাপনের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ইংরেজিতে হচ্ছে- ভড়ৎ ধষষ ড়িসবহ ধহফ মরৎষং : ৎরমযঃং, বয়ঁধষরঃু, বসঢ়ড়বিৎসবহঃ এবং বাংলায় হচ্ছে- 'অধিকার, সমতা, ক্ষমতায়ন/নারী ও কন্যার উন্নয়ন'। সমাজে নারীর প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা জানানো এবং নারীদের আর্থিক, সামাজিক এবং রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করা অবশ্য কর্তব্য। এই দিবসটির সূচনা হয় নারী শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। নারী-পুরুষের সমঅধিকার আদায়ের প্রত্যয় নিয়ে এ দিবসটি যথাযথ মর্যাদায় পালনের যাত্রা শুরু হয়। সময় এখন নারীর, বদলে যাচ্ছে জীবনযাত্রা। প্রজন্ম হোক সমতার এবং নারী পাক তার অধিকার। নারী-পুরুষ সমতায় উন্নয়নের যাত্রা, বদলে যাবে বিশ্ব, কর্মে যোগ হবে নতুন মাত্রা। নারীর ক্ষমতায়নের ফলে মানবতার উন্নয়ন হচ্ছে। যে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীর অংশগ্রহণের মাধ্যমে সমতায় নিরাপদ ভবিষ্যৎ গড়া, সমাজে শান্তি ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। একটি সুন্দর পৃথিবী গড়তে নারী নির্যাতন ও সহিংসতা বন্ধ করা অতীব জরুরি। নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে পদক্ষেপ নেয়া, নারী ক্ষমতায়ন, ক্ষুধা ও দরিদ্রতা বন্ধ করা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করতে নারীদের পাশাপাশি পুরুষদেরও এগিয়ে আসতে হবে। নারী মানেই হার না মানা একজন মানুষ। তাদের প্রতি সকল বৈষম্য নিরসন করতে হবে। নারীরা হচ্ছে স্নিগ্ধ আলোক রশ্মির মতো, তারা আলো দিয়ে পৃথিবীকে উজ্জ্বল করে। বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন বন্ধে ও তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় নারীদের অবদান শক্তি, সাহস ও ত্যাগ প্রসংশনীয়। নারীরা পরিবার, কর্মক্ষেত্র, সমাজ এবং রাষ্ট্রের সকল স্তরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। নারী শুধু একটি শব্দ নয়, একটি শক্তি, একটি আন্দোলন অর্থাৎ একটি মহাশক্তির নাম নারী। নারীদের স্বপ্ন দেখার এবং তাদের স্বপ্ন পূরণ করার অধিকার রয়েছে। নারীদের সমান অধিকার না দেওয়া পর্যন্ত পূর্ণ স্বাধীনতা অর্জন করা কখনোই সম্ভব নয়। নারী যদি তার শক্তি ও ক্ষমতা বুঝতে পারে, তবে সে গোটা পৃথিবী নিজের হাতের মুঠোয় আনতে পারবে। একজন নারী মা, বোন, স্ত্রী, কন্যা যে রূপেই থাকুক না কেন যখন মুক্তি পায় তখন পুরো সমাজ মুক্তি পায়। একজন নারী পৃথিবীকে নতুনরূপে সাজিয়ে তোলে। নারী হলো সৃষ্টির সেরা শক্তি। একজন নারীর সবচেয়ে শক্তিশালী নিরাপত্তা হলো তার সাহস। নারীর জাগরণ মানেই জাতির জাগরণ। সমাজে নারীরা পদে পদে বঞ্চনার শিকার, সে সমাজে নারীদের জাগতেই হবে। একজন শক্তিশালী নারী তিনিই যিনি প্রতিবাদ করতে জানেন। নারীর মধ্যে আছে অসীম সম্ভাবনা যদি সেটা সঠিকভাবে লালন-পালন করা যায়। একমাত্র নারীই পারে পৃথিবী সুন্দরের দিকে বদলে দিতে। নারী হচ্ছে শক্তির প্রতীক, সমতার আধার। নারীকে শিক্ষিত করলেই সমাজ তথা দেশ শিক্ষিত হয়ে উঠবে। নারী যদি নিজের ওপর বিশ্বাস রাখে সাহসী হয় এবং স্বপ্নকে অনুসরণ করে তবেই সফলতা অর্জন করা সম্ভব। আর্থসামাজিক গোড়ামি, ধর্মান্ধতার কারণে নারীরা আজও পিছিয়ে আছে। ধর্ষণ, এসিড, যৌতুক ও শিশু নির্যাতনের মতো নির্যাতনের স্বীকার এখনো বাংলার নারী। বাংলার নারী বেগম রোকেয়া হতে অদ্যাবধি নারীরা স্বীয় মর্যাদার অধিকার আদায়ের সংগ্রাম করে যাচ্ছে। জাতি-ধর্ম, বর্ণ, পেশা, শ্রেণি বিবেচনায় না নিয়ে সকল ক্ষেত্রে নারীকে সম্মান দিতে হবে। নারীর অগ্রযাত্রায় আমাদের সকলের ইতিবাচক সচেতনতা প্রয়েজন। আসুন আমরা সকলে মিলে নারীদের প্রতি সহিংসতা ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই। একটি ন্যায়সঙ্গত ও সমতাভিত্তিক সমাজ গড়ি। আসুন সবাই মিলে পুরাতনকে ভেঙে ফেলে নতুন কিছু চিন্তা করি, ভালো কিছু চিন্তা করি। নারী মুক্তির জন্য নতুন কিছু করি এবং নারী-পুরুষ সমতায় নতুন পৃথিবী গড়ি। জয়তু সমতাভিত্তিক সমাজ, জয়তু নারী।