সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা

মহামারির মধ্যেও 'ব্যক্তিগত' গাড়িকে ঈদযাত্রায় ছাড়

বিশেষজ্ঞরা জানান, রাজধানীতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। ঢাকা থেকে মানুষ যদি নিজস্ব পরিবহণেও গ্রামে যায়, তবে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে

প্রকাশ | ২৩ মে ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে গণপরিবহণ বন্ধ রেখে এবার সবাইকে যার যার অবস্থানে থেকে ঈদ করার কথা সরকারের পক্ষ থেকে বলা হলেও 'ব্যক্তিগত' বাহনে গ্রামে যাওয়ার ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হচ্ছে। পুলিশের জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা বলেন, বৃহস্পতিবার 'উঁচু পর্যায়' থেকে এ বিষয়ে একটি মৌখিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে মাঠ পর্যায়ে। ওই বার্তা পাওয়ার পর ঢাকার গাবতলী থেকে পুলিশের চেকপোস্ট তুলে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মলিস্নক ফখরুল ইসলাম শুক্রবার সকালে বলেন, 'বাড়িতে গিয়ে যারা ঈদ করতে চেয়েছেন, সরকার তাতে সম্মতি দিয়েছে। কিন্তু গণপরিবহণ বন্ধ থাকবে। পুলিশ সড়কে নিরাপত্তা দেবে, তবে সবাইকে নিজস্ব পরিবহণে যেতে হবে।' তবে এ খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় গঠিত 'জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির' একজন সদস্য বলেছেন, এটা করা হলে সারাদেশে ভাইরাস ছড়ানোর ঝুঁকি আরও বাড়বে। ঈদের দুদিন আগে শুক্রবার সকালে মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা নতুন নির্দেশনা অনুযায়ীই কাজ করছেন। ঢাকার ওয়ারী বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, 'কেউ বাড়ি যেতে চাইলে যেতে পারবেন। তবে গণপরিবহণ বন্ধ। তাহলে কীভাবে যাবেন, সহজেই অনুমেয়।' আর ময়মনসিংহের ভালুকা থানার ওসি মাইন উদ্দিন বলেন, নিজস্ব পরিবহণে যাতায়াত করা যাবে। তবে বাস বা গণপরিবহণ ব্যবহার করে কেউ যাতায়াত করতে পারবেন না। কোন ধরনের গাড়ি নিজস্ব পরিবহণের আওতায় পড়বে জানতে চাইলে হাইওয়ে পুলিশের গাজীপুর জেলার এসপি মো. আলী বলেন, 'রেন্ট এ কার নয়, শুধু ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে গ্রামের বাড়ি যাওয়া যাবে।' দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের প্রেক্ষাপটে সরকার প্রথম দফায় ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সব অফিস-আদালত বন্ধ ঘোষণা করে। সে সঙ্গে সারাদেশে সব ধরনের যানবাহন চলাচলেও নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। এরপর ধাপে ধাপে সেই ছুটির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে ৩০ মে পর্যন্ত। এর মধ্যে বিপণিবিতান ও দোকানপাট, মসজিদ এবং পোশাক কারখানার ক্ষেত্রে কিছু বিধি-নিষেধ তুলে দেওয়া হলেও আন্তঃজেলা বাস ও গণপরিবহণে নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকে। নতুন করোনাভাইরাস অত্যন্ত সংক্রামক বলেই সরকারের তরফ থেকে এসব বিধিনিষেধ জারি করা হয়, যাতে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণের এলাকাগুলো থেকে ঈদের সময় মানুষের সঙ্গী হয়ে গ্রামে গ্রামে এ রোগ ছড়িয়ে না পড়ে। গত ১৪ মে সর্বশেষ ছুটির আদেশে বলা হয়, 'সাধারণ ছুটি/চলাচলে নিষেধাজ্ঞার মধ্যে কেউ কর্মস্থল ত্যাগ করতে পারবে না। উক্ত সময়ে সড়কপথে গণপরিবহণ, যাত্রীবাহী নৌযান ও রেল চলাচল এবং অভ্যন্তরীণ রুটে বিমান চলাচল বন্ধ থাকবে এবং মহাসড়কে মালবাহী/জরুরি সেবায় নিয়োজিত যানবাহন ব্যতীত অন্যান্য যানবাহন কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।' সে সময় সারা দেশে গণপরিবহণ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা ৩০ মে পর্যন্ত বাড়ানোর কথা জানিয়ে সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জরুরি পরিষেবার বাহন; খাদ্যসহ সব ধরনের পণ্য; রাষ্ট্রীয় প্রকল্পের মালামাল; জ্বালানি, শিশুখাদ্য, ত্রাণ, কৃষিপণ্য, শিল্পপণ্য, সার ও কীটনাশক, পশুখাদ্য; মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতের উৎপাদিত পণ্য; দুগ্ধ ও দুগ্ধজাত পণ্য এবং জীবনধারণের মৌলিক পণ্য পরিবহণের যানবাহন; ওষুধ, ওষুধশিল্প, চিকিৎসা সেবা ও চিকিৎসা বিষয়ক সামগ্রী বহনকারী গাড়ি এবং গণমাধ্যমের গাড়ি এ নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবে। তবে পণ্যবাহী যানবাহনে যাত্রী পরিবহণ করা যাবে না বলে সতর্ক করে দেওয়া হয় সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে। সরকারের ওই নির্দেশনা আসার পর ১৭ মে থেকে রাজধানীতে প্রবেশ ও বের হওয়ার পথে চেকপোস্ট জোরদার করে পুলিশ। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঢাকায় প্রবেশ বা বের হতে চাইলে বাধার মুখোমুখি হতে হয়। এবার ঈদের সময় অন্যবারের মতো বাড়ি যাওয়া ঠেকাতে পুলিশ 'কঠোর' থাকবে জানিয়ে আইজিপি বেনজীর আহমেদ সে সময় বলেন, 'ছুটিতে অনেকেই গ্রামের বাড়ি যাচ্ছেন। তা ঠিক হবে না। এটি কোনোভাবেই হতে দেওয়া যাবে না। প্রধানমন্ত্রী জনগণের সার্বিক কল্যাণের জন্য যে সব নির্দেশনা দিয়েছেন, তা সকলকে যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে।' কিন্তু ঈদের মাত্র দুদিন বাকি থাকতে ব্যক্তিগত পরিবহণে বাড়ি ফেরার সুযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত আসে। হাইওয়ে পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, বুধবার রাতে গাইবান্ধায় ঝড়ের মধ্যে ট্রাক উল্টে ১৩ জনের মৃতু্যর ঘটনা নিয়ে আলোচনা পর ব্যক্তিগত গাড়িকে ছাড় দেওয়া ওই সিদ্ধান্ত আসে। 'চুরি করে অনেকে যাচ্ছে বিভিন্নভাবে। অন্তত একটা মধ্যম খোলা রাখার জন্য এই ব্যবস্থা।' এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে করোনাভাইরাস মহামারীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় গঠিত 'জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির' সদস্য ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক নজরুল ইসলাম শুক্রবার বলেন, 'এ ধরনের সিদ্ধান্তের কথা আপনার কাছেই প্রথম শুনলাম। যদি হয়ে থাকে তাহলে তো ভাইরাস সারা দেশে ছড়িয়ে যাবে!' তিনি বলেন, 'ঢাকায় ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। সারাদেশের সব জেলায় তত নয়। এখন ঢাকা থেকে মানুষ যদি নিজস্ব পরিবহণেও যায়, ভাইরাসটা তো ছড়িয়ে গেল। এতে ঝুঁকি আরও বেড়ে গেল।'