নেই সুস্থ হওয়া করোনা রোগীর কোনো তথ্য

প্রকাশ | ৩০ মে ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
করোনা আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসায় মঙ্গলবার (২৬ মে) চট্টগ্রামে প্রথমবারের মতো দেওয়া হয় পস্নাজমা থেরাপি। চমেক হাসপাতালের রক্ত পরিসঞ্চালন বিভাগের প্রধান ডা. তানজিলা তাবিদের নেতৃত্বে ২৫০ মিলিলিটার পস্নাজমা নিয়ে এই থেরাপির সূচনা হয়। এরপর সুস্থ হওয়া আরেক রোগীর কাছ থেকে বৃহস্পতিবার (২৮ মে) বিকালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পস্নাজমা সংগ্রহ করা হয়। এই পস্নাজমা সংগ্রহের জন্য পোহাতে হয়েছে দুর্ভোগ। কারণ, করোনা ভাইরাসকে জয় করে ফেরা রোগীর রক্তের গ্রম্নপসহ বিশেষ কোনো তথ্য লিপিবদ্ধ নেই সংশ্লিষ্ট হাসপাতালগুলোতে। পাশাপাশি চট্টগ্রামে নেই পর্যাপ্ত পস্নাজমা অ্যাফেরেসিস মেশিন ও সংগৃহীত পস্নাজমা রোগীর শরীরে কিভাবে কাজ করবে তা পরিমাপক অ্যান্টিবডি টাইটার নির্ণায়ক। চিকিৎসকরা বলছেন, সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করার পর করোনা থেকে সুস্থ হওয়া ব্যক্তির পস্নাজমা সংগ্রহ করা হয়। এতে মাত্র ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট সময় লাগে এবং কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। এ ছাড়া কোনো ইনফেকশন হওয়ার আশঙ্কাও নেই। করোনা জয় করার ১৪ দিন পর অ্যাফেরেসিস মেশিনের সাহায্যে ওই ব্যক্তির শরীর থেকে ৪০০ থেকে ৬০০ মিলিলিটার পস্নাজমা (রক্তের জলীয় অংশ) সংগ্রহ করা হয়। এই পদ্ধতিতে রক্তকণিকা (আরবিসি, ডবিস্নউবিসি ও পেস্নটলেট) পস্নাজমাদাতার শরীরে ফিরে যায়। একজন পস্নাজমাদাতা চাইলে ২৮ দিন পর আবারও পস্নাজমা দিতে পারেন। তবে যেসব জায়গায় এই অ্যাফেরেসিস মেশিন নেই, সেখানে এক ব্যাগ রক্ত সংগ্রহের পর সেন্ট্রিফিউজ করে পস্নাজমা আলাদা করা যেতে পারে এবং তা প্রয়োজনমতো করোনার রোগীকে প্রয়োগ করা যেতে পারে। চমেক হাসপাতালের রক্ত পরিসঞ্চালন বিভাগের প্রধান ডা. তানজিলা তাবিদ বলেন, 'এখানে পস্নাজমা সংগ্রহ শুরুর পর থেকে অ্যাফেরেসিস মেশিনের প্রয়োজনীয়তা বেশি অনুভব হচ্ছে। বেসরকারি কয়েকটি স্বাস্থ্যসেবা দানকারী প্রতিষ্ঠানে এই মেশিন থাকলেও চমেক হাসপাতালে নেই। তবে যথাশীঘ্রই একটি অ্যাফেরেসিস মেশিন আসতে পারে। বর্তমানে কনভেনশনাল পদ্ধতিতে পস্নাজমা সংগ্রহ করা হচ্ছে'। চমেক হাসপাতাল মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. অনিরুদ্ধ ঘোষ বলেন, চিকিৎসা বিজ্ঞানে এটি বেশ পুরোনো একটি পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে সাধারণত কোন ভাইরাল সংক্রমণ থেকে সেরে ওঠা মানুষের রক্ত সংগ্রহ করা হয়। এরপর সেই রক্ত সঞ্চালন করা হয় একই ধরনের ভাইরাল সংক্রমণের শিকার রোগীর শরীরে। চট্টগ্রামে পস্নাজমা থেরাপির বিষয়ে এখনই একটি সমন্বিত কর্মকৌশল প্রণয়ন করা প্রয়োজন। জানা গেছে, চট্টগ্রামে করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে এখন পর্যন্ত প্রায় দুইশ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন, যাদের রক্ত সংগ্রহ করে পস্নাজমা থেরাপি দেওয়া সম্ভব পাঁচ শতাধিক সংকটাপন্ন রোগীকে। কিন্তু এসব ব্যক্তির রক্তের গ্রম্নপ বা সংশ্লিষ্ট কোন ডাটাবেজ তৈরি করা যায়নি সমন্বিত উদ্যোগের অভাবে। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ গঠিত চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটির সমন্বয়ক ডা. আ ন ম মিনহাজুর রহমান বলেন, আশঙ্কাজনক হারে করোনা আক্রান্ত হওয়ার বিপরীতে সংকটাপন্ন রোগীর জীবন বাঁচাতে বড় নিয়ামক হয়ে উঠতে পারে এই পস্নাজমা থেরাপি। তবে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরা রোগীদের রক্তের গ্রম্নপের রেকর্ড নেই। চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্ত সহযোগী অধ্যাপক ডা. সামিরুল ইসলাম বাবুর শরীরে পস্নাজমা থেরাপি প্রয়োগের জন্য অনেক খুঁজে করোনাজয়ী মো. তারেককে পাওয়া যায়। তিনি রাজি হওয়ায় এই পস্নাজমা দেওয়া সম্ভব হয়। পরবর্তীতে ২য় দফায় পস্নাজমা দিয়েছেন করোনা থেকে সুস্থ হওয়া সিএমপির সদস্য অরুন চাকমা। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি রিয়াজ হায়দার চৌধুরী বলেন, করোনায় মৃতু্যহার কমাতে 'পস্নাজমা ব্যাংক' গঠন করা দরকার। পুলিশ প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রাথমিকভাবে অন্তত বিভাগীয় পর্যায়ে এ ব্যাংকের কার্যক্রম চালু করতে পারে। এটি এখন খুবই প্রয়োজন। তা ?না হলে যথাযথ প্রস্তুতির অভাবে বাধাগ্রস্ত হতে পারে করোনা চিকিৎসার এই কার্যকর পদ্ধতি।