ঝুঁকিতে পড়েছে ২৯ ভাগ বোরো ধান

প্রকাশ | ৩০ মে ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত বোরো ধান সংগ্রহ করছেন কৃষক -যাযাদি
হাওড়ের ধান এবার কোনো বালা-মুসিবত ছাড়া কৃষকের ঘরে উঠলেও সারাদেশের বোরো ধানের একটি বড় অংশ ঝুঁকিতে পড়েছে। সুপার সাইক্লোন আম্পান আসার আগে সারাদেশে ৭১ ভাগ বোরো ধান কাটা সম্পন্ন হয় বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে। বাকি থাকা ২৯ ভাগ বোরো ধানের ওপর দিয়ে সুপার সাইক্লোন আম্পান, কালবৈশাখী এবং শীলা বৃষ্টিসহ নানা দুর্যোগ বয়ে যাচ্ছে। যারা ধান কেটে বাড়িতে এনেছেন কিন্তু টানা বৃষ্টি ও ঝড়ের কারণে ১৬ আনা ধান ঘরে তুলতে পারেননি। কৃষকরা জানান, বাড়িতে আনলেও বৃষ্টির কারণে কিছু ধান নষ্ট হবে। ২৯ ভাগ বোরো ধান ঝুঁকির মধ্যে পড়ায় এর মধ্যে থাকা কোনো কৃষকই ১৬ আনা ধান ঘরে তুলতে পারছেন না। গত ২০ মে সারাদেশে ৭১ ভাগ বোরো ধান কাটা সম্পন্ন হয়। ওইদিন রাতেই সুপার সাইক্লোন আম্পান আঘাত হানে। ফলে দেশের ৪৬টি জেলার বোরো ধান, ভুট্টা, তিল, বাদাম, পাট, শাক, সবজিসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এ ছাড়া বৈশাখের শুরু থেকে এবং আম্পানের পরে বিভিন্ন সময়ে কুষ্টিয়া, নাটোর, রাজশাহী, বগুড়া, জয়পুরহাট, রংপুর, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল ও পাবনাসহ বিভিন্ন জেলায় কালবৈশাখী ও শীলা বৃষ্টিতে কৃষকের ধান মাঠে ঝরে পড়েছে। আম ও লিচুর ক্ষতি হয়েছে। ডগা ভেঙ্গে অনেক পাট ক্ষেতে নষ্ট হয়ে গেছে। ২৭ মে পর্যন্ত সারাদেশে ৮৩ ভাগ ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। এখনো মাঠে ১৭ ভাগ ধান রয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর যে পূর্বাভাস দিয়েছে তাতে এই ১৭ ভাগ ধান অধিক ঝুঁকির মধ্যে আছে এবং এখানেও কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আম্পান ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার ধান চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সুপার সাইক্লোন আম্পান আসার আগে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে নোটিশ করে বলা হয়, যেসব জমির ধান ৮০ ভাগ পেকেছে সেগুলো কেটে ফেলার জন্য। এ নির্দেশনা পাওয়ার পর অনেকে ৭০ ভাগ পেকেছে এমন জমির ধান কেটে ফেলে। আম্পানের কারণে আগে যারা ধান কেটেছে সেখানেও ২০-৩০ ভাগ ফলন কম হয়েছে। যারা কাটতে পারেননি তাদের শতভাগই পানিতে ডুবে গেছে। এ ক্ষতি এবং এখন কালবৈশাখীতে ধানের যে ক্ষতি হচ্ছে তাতে জাতীয় ফলনেও প্রভাব পড়বে। একই সঙ্গে চলতি বোরো মৌসুমে দুই কোটি চার লাখ মেট্রিক টন চালের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তা পূরণ হবে কিনা সেটা নিয়েও অনেকে সংশয় প্রকাশ করছেন। কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড়ের তান্ডবে ৪৭ হাজার হেক্টর জমির বোরো ধান, তিন হাজার ২৮৪ হেক্টর জমির ভুট্টা, ৩৪ হাজার ১৩৯ হেক্টর জমির পাট, দুই হাজার ৩৩৩ হেক্টর জমির পান, ৪১ হাজার ৯৬৭ হেক্টর জমির সবজি, এক হাজার ৫৭৫ হেক্টর জমির চীনা বাদাম, ১১ হাজার ৫০২ হেক্টর জমির তিল, সাত হাজার ৩৮৪ হেক্টর জমির আম, ৪৭৩ হেক্টর জমির লিচু, ছয় হাজার ৬০৪ হেক্টর জমির কলা, এক হাজার ২৯৭ হেক্টর জমির পেঁপে, তিন হাজার ৩০৬ হেক্টর জমির মরিচ, ৬৪০ হেক্টর জমির সয়াবিন, সাত হাজার ৯৭৩ হেক্টর জমির মুগ ডাল এবং ছয় হাজার ৫২৮ হেক্টর জমির আউশ ধানের চারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভোলা সদর উপজেলার চন্দ্র প্রসাদ ৭নং ওয়ার্ডের কৃষক মো. খলিল বলেন, ছয় একর জমিতে বোরো ধান চাষ করেছিলাম। এর মধ্যে দুই একর জমির ধান কাটতে পেরেছি। বাকি চার একর জমির ধান আম্পানের কারণে পানিতে ডুবে গেছে। এই চার একর জমির ধান পুরোটাই নষ্ট হয়ে গেছে। এখান থেকে এক কেজি ধানও পাইনি। তিনি বলেন, শুধু আমার নয়। আমার স্কিমে ২৫ একর জমিতে ধান চাষ হয়েছিল। সেখান থেকে অর্ধেক ধান কৃষক কাটতে পেরেছে আর অর্ধেক পানিতে ডুবে নষ্ট হয়েছে। এ ছাড়া ভোলার অনেক কৃষকই ধান কাটতে পারেননি এবং ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কারণে অনেকে ৭০ ভাগ ধান পেকেছে এমন ধানও কেটেছেন বলে জানান কৃষক খলিল। কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক ২১ মে আম্পানের পরের দিনই অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তান্ডবে মোট এক লাখ ৭৬ হাজার সাত হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে। এসব জমিতে থাকা বিভিন্ন ফসলের ৫-৫০ শতাংশ পর্যন্ত ক্ষতি হয়েছে। তিনি বলেন, উপকূলীয় অঞ্চলের ১৭ জেলার শতকরা ৯৬ ভাগসহ সারাদেশে ইতোমধ্যে ৭২ শতাংশ বোরো ধান কাটা হয়েছে। খুলনা অঞ্চলে প্রায় ৯৬-৯৭ ভাগ ধান কাটা হয়। সাতক্ষীরায়ও ৯০ ভাগের বেশি ধান কাটা হয়েছে। পটুয়াখালীরও প্রায় সব ধান কাটা হয়। তবে ভোলায় ধানের ক্ষতি হয়েছে বেশি। সুপার সাইক্লোন আম্পানে কৃষকের ধানের ক্ষতির বিষয়ে কথা হয় ইমেরিটাস প্রফেসর ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি, পরিকল্পনা কমিশনের সাবেক সদস্য (সচিব) ড. এমএ সাত্তার মন্ডলের সঙ্গে। তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্পানে অনেক কৃষকই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেকে সময় ও শ্রমিকের অভাবে ধান কাটতে পারেননি। তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তিনি বলেন, তবে লেট ভ্যারাইটি ধানগুলো এখনো কাটা বাকি আছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর যে পূর্বাভাস দিয়েছে তাতে যেসব কৃষকের ধান কাটতে বাকি তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। কারণ প্রতিদিনই দেশের কোনো না কোনো অঞ্চলে কালবৈশাখী হচ্ছে। তবে আম্পান এবং কালবৈশাখীর কারণে কৃষকের ধান নষ্ট হলেও খাদ্য ঘাটতির কোনো আশঙ্কা নেই। এতে মোট ফলনে প্রভাব পড়বে ও কৃষক ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যেটা আমাদের সারপস্নাস হওয়ার কথা ছিল সেটা হবে না। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করে তাদের প্রণোদনা দেওয়া যেতে পারে।