করোনার উপসর্গ নিয়ে ১১ জনের মৃত্যু

প্রকাশ | ৩১ মে ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
জ্বর, সর্দি-কাশি ও শ্বাসকষ্ট বা করোনাভাইরাস সংক্রমণের উপসর্গ নিয়ে দেশের ৭ জেলায় আরও ১১ জনের মৃতু্য হয়েছে। শুক্রবার বিকাল থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত চাঁদপুরে চার, সাতক্ষীরায় দুই এবং মানিকগঞ্জ, খুলনা, টাঙ্গাইল, ঝিনাইদহ ও দিনাজপুরে একজন করে ব্যক্তির মৃতু্য হয়েছে। আমাদের আঞ্চলিক অফিস, স্টাফ রিপোর্টার ও প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদ- চাঁদপুর : চাঁদপুরে করোনা উপসর্গ সর্দি-কাশি, জ্বর, গলাব্যথা নিয়ে এক সাংবাদিক, দুই নারীসহ চারজন মৃতু্যবরণ করেছেন। শুক্রবার বিকেল থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে তারা মারা যান। জানা গেছে, চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে আবুল হাসানাত হাসেম (৫২) নামে এক সাংবাদিক 'আমার অবস্থা ভালো না। আমাকে সবাই মাফ করে দেবেন। আমার সন্তানদের একটু দেখবেন। আমিন'- লিখে ফেসবুক ওয়ালে মাফ চেয়ে শনিবার গভীর রাতে একটি পোস্ট দেন। সবাইকে কাঁদিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার দু'ঘণ্টার মধ্যেই করোনা উপসর্গ নিয়ে চাঁদপুর সরকারি হাসপাতালে মারা যান। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক এবং ফরিদগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী গুণিজন স্মৃতি সংসদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতিও ছিলেন। এছাড়াও করোনা উপসর্গ নিয়ে বাবা ছেলের মৃতু্যর দুদিন পর চাঁদপুরের কচুয়ার পালগিরী গ্রামের সরকার বাড়ির ফজিলেতুন্নেসা (৭০) মৃতু্যবরণ করেছেন। তিনি শনিবার দুপুরে নিজ বাড়িতেই মারা যান। এ নিয়ে গত এক সপ্তাহে একই পরিবারের ছেলে মানিক সরকার (৫০), বাবা বাচ্চু সরকার (৮০) ও মাতা ফজিলেতুন্নেসা মারা যাওয়ায় পুরো এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। এদিকে, করোনা উপসর্গ নিয়ে শুক্রবার মধ্যরাতে চাঁদপুর শহরের ট্রাকরোডে রোজগার্ডেন নামক ভবনে ছকিনা বেগম (৮০) নামে এক নারীর মৃতু্য হয়। এছাড়াও শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টায় শহরের ট্রাক রোড কাজী অফিস সংলগ্ন ৪ তলা ভবনে মো. আবুল খায়ের মিজি (৫২) নামে আরেক ব্যক্তি করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। চাঁদপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. সাখাওয়াত উলস্নাহ ওইসব মৃতু্যর তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, সবাই করোনা উপসর্গ জ্বর, সর্দি ও কাশিতে ভুগছিলেন। তাই সবার নমুনা সংগ্রহ করে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই দাফন করার জন্য বলা হয়েছে। সাতক্ষীরা : জ্বর, সর্দি-কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক ব্যবসায়ীসহ দুইজনের মৃতু্য হয়েছে। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. রফিকুল ইসলাম শনিবার সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। মৃতদের মধ্যে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঘোনা ইউনিয়নের কাথন্ডা গ্রামের এক কৃষক (৩৫) ও তালা উপজেলার মাঝিয়াড়া গ্রামের এক হার্ডওয়্যার ব্যবসায়ী (৬৫) রয়েছেন। হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগে শুক্রবার রাতে তাদের মৃতু্য হয় বলে রফিকুল জানান। সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন অফিসের মুখপাত্র ডা. জয়ন্ত সরকার বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে ওই হার্ডওয়্যার ব্যবসায়ীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় শুক্রবার সকালে আইসিইউ বিভাগে ভর্তি করা হয়। পরে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ২টার তার মৃতু্য হয়। জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে বুধবার দুপুর ১টার ওই কৃষককে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। জয়ন্ত বলেন, 'ওই কৃষকের নমুনা সংগ্রহ করে খুলনা পিসিআর ল্যাবে পাঠানো হয়েছে; রিপোর্ট এখনো আসেনি। তার বাড়ি ও তার শ্বশুরবাড়ি অবরুদ্ধ করা হয়েছে। মারা যাওয়া অপর একজনের নমুনা সংগ্রহ এবং তার বাড়িও অবরুদ্ধ করা হয়।' মানিকগঞ্জ : মানিকগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালে আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক ব্যক্তির (৩৩) মৃতু্য হয়েছে। শুক্রবার রাত ২টার দিকে আইসোলেশন ওয়ার্ডে ওই ব্যক্তির মৃতু্য হয়। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আরশ্বাদ উলস্নাহ শনিবার সকালে এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আরশ্বাদ উলস্নাহ শনিবার সকালে জানান, বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে দৌলতপুর উপজেলার ওই ব্যক্তি শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে আসেন। এরপর তাকে হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। ওই দিনই তার শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। শনিবার দুপুর পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষার ফলাফল পাওয়া যায়নি। খুলনা : করোনার উপসর্গ নিয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের করোনা সাসপেক্টেড আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক ব্যক্তির (৫৫) মৃতু্য হয়েছে। শনিবার সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে তার মৃতু্য হয়। হাসপাতাল প?রিচালক ডা. মুন্সী রেজা সে?কেন্দার জানান, জ্বর, সর্দি-কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে ওই ব্যক্তি বৃহস্পতিবার হাসপাতালে ভর্তি হন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার সকালে তিনি মারা গেছেন। তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে, কিন্তু রেজাল্ট এখনো পাওয়া যায়নি। টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইলের গোপালপুরে করোনার উপসর্গ নিয়ে শুক্রবার গরিবের ডাক্তার হিসেবে খ্যাত প্রশান্ত কুমার চন্দ নামের এক ফার্মাসিস্টের মৃতু্য হয়েছে। সে উপজেলার ঝাওয়াইল বাজারের প্রয়াত প্রভাত চন্দের ছেলে ও প্রসন্ন মেডিকেল হলের স্বত্বাধিকারী ছিল। রাতেই তার মরদেহ সরকারি নিয়মে ঢাকায় তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। এলাকাবাসী জানায়, ফার্মাসিস্ট এবং প্রাইভেট প্র্যাকটিশনার প্রশান্ত কুমার চন্দের (৪৭) হৃদরোগ ও শ্বাসকষ্ট ছিল। পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন তিনি জ্বর, কাশি ও সর্দি নিয়ে ঢাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে অবস্থার অবনতি ঘটলে বৃহস্পতিবার তাকে ঢাকাস্থ ধানমন্ডি আনোয়ার খান মডার্ন কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করে আইসিইউতে রাখা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার দুপুর সাড়ে ৩টায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রফেসর ডা. রফিকুল ইসলাম জানান, 'প্রশান্ত তার গ্রামের ছেলে। করোনার উপসর্গ নিয়ে তিনি বৃহস্পতিবার এখানে ভর্তি হন। তাকে সব ধরনের চিকিৎসা দেওয়া হয়। করোনা পরীক্ষার জন্য তার শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।' ঝিনাইদহ : করোনা উপসর্গ নিয়ে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে এক যুবকের (৩৬) মৃতু্য হয়েছে। শনিবার ভোর ৪টার দিকে সে মারা যায়। ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার আয়ুব আলী জানান, গত ২৭ মে সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ওই যুবক। করোনা উপসর্গ থাকায় তাকে হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। একই সময় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছিল। এরপর শনিবার ভোরে তার মৃতু্য হয়। তবে, তার নমুনা পরীক্ষার ফলাফল এখনো আসেনি। দিনাজপুর : করোনা উপসর্গ নিয়ে দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে এক বৃদ্ধের (৭০) মৃতু্য হয়েছে। শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৫টায় দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃতু্য হয় এবং ওই দিন রাতে তার নিজ বাড়ি মালিপাড়া গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। এই ঘটনার পর থেকে তার পরিবারের সদস্যদের নমুনা সংগ্রহ করে তার বাড়িটি লকডাউন করেছে উপজেলা প্রশাসন। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার হাসানুল হোসেন বলেন, করোনা উপসর্গ নিয়ে ওই ব্যক্তি তিন দিন পূর্বে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন, সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃতু্য হয়। তিনি বলেন মৃতু্যর পর দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে, রিপোর্ট এলে জানা যাবে তিনি করোনায় আক্রান্ত ছিলেন কি না।