বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংক্রমণের ঝুঁকিতে নৌযাত্রীরা, মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি

যাযাদি রিপোর্ট
  ০৩ জুন ২০২০, ০০:০০
রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে করোনার ঝুঁকি নিয়েই ভিড় করছেন যাত্রীরা -যাযাদি

করোনাভাইরাসের কারণে টানা দুই মাস বন্ধ থাকার পর গত রোববার (৩১ মে) থেকে সারা দেশে নৌপথে লঞ্চ চলাচল শুরু হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে শারীরিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে লঞ্চ পরিচালনার নির্দেশনা থাকলেও তা পুরোপুরি পালন করতে দেখা যায়নি লঞ্চ মালিক ও যাত্রীদের। মাস্কের সঠিক ব্যবহার করতে দেখা যায়নি অর্ধেকের বেশি যাত্রীকে। ফলে একে অন্যের কাছ থেকে সংক্রামিত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে যাত্রীরা।

লঞ্চের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির যাত্রীরা শারীরিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললেও ব্যতিক্রম দেখা গেছে ডেকের তৃতীয় শ্রেণির যাত্রীদের। তারা শারীরিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই যাতায়াত করছেন। ফলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও লঞ্চ মালিকদের শারীরিক দূরত্ব মানাতে হিমশিম খেতে হয়েছে।

এদিকে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ কার্যক্রমে অবহেলা করায় বিআইডবিস্নউটিএ'র চাঁদপুর বন্দর কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করাসহ অতিরিক্ত যাত্রী বহনের অপরাধে সুন্দরবন-৮ লঞ্চকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

এদিকে করোনা সংক্রমণ রোধে যাত্রীদের সচেতনতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন নৌপ্রতিমন্ত্রী।

সরেজমিনে সদরঘাটে গিয়ে দেখা যায়, সদরঘাটের প্রবেশমুখে বসানো হয়েছে জীবাণুনাশক টানেল। তবে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে যাত্রীদের তেমন ভিড় লক্ষ্য করা যায়নি। কিন্তু লঞ্চ থেকে নেমে যাত্রীদের টার্মিনালের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব দূরে থাক করোনা আক্রান্ত হওয়া থেকে নিজেদের রক্ষা করতে কোনো বিধিই মানতে দেখা যায়নি। বেশিরভাগেরই মাস্ক থাকলেও সেটি সঠিকভাবে ব্যবহার করতে দেখা যায়নি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে লঞ্চে যাত্রী চলাচলে সর্বাত্মক চেষ্টা করছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। স্বাস্থ্যবিধি ও সরকারি নির্দেশনা মানতে যাত্রী, লঞ্চ মালিক ও শ্রমিকদের সচেতনতা বাড়াতে কাজ করছে তারা। বিআইডবিস্নউটিএ বারবার শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাচলের জন্য মাইকিং করলেও তা মানতে দেখা যায়নি যাত্রীদের।

এদিকে দূরপালস্নার লঞ্চ সন্ধ্যা থেকেই সদরঘাট থেকে ছেড়ে যায়। বিকেল হতেই সদরঘাটে মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। তবে সকাল থেকেই যাত্রীরা সদরঘাটে আসতে থাকেন। যেসব যাত্রীর মুখে মাস্ক ছিল না তাদের সদরঘাটে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়। বন্দরের ভেতরে জীবাণুনাশক টানেল থাকলেও অনেক যাত্রীর তা ব্যবহারে অনীহা দেখা গেছে। এছাড়া হাত ধোয়ার জন্য বেশ কয়েকটি বেসিন বসানো হয়েছে। অনেক যাত্রী আগ্রহ দেখালেও বেশিরভাগ যাত্রী হাত না ধুয়েই লঞ্চে ওঠেন।

সকালে যে লঞ্চ ছেড়ে গেছে সেখানে লঞ্চের ডেকে গাদাগাদি করে যাত্রীদের বসতে দেখা গেছে।

বরিশাল থেকে ছেড়ে আসা এমভি পূবালী-৯-এর যাত্রী ইকবাল হোসেন বলেন, লঞ্চে ওঠার সময় স্যানিটাইজার করাসহ মাস্ক পরা নিশ্চিত করলেও পরবর্তীতে আর কোনো কিছু লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। শারীরিক দূরত্বের জন্য এক মিটার দূরত্ব বজায় রাখার কথা বলা হলেও লঞ্চের ভেতর সেটা কেউ মানছেন না। যেমন আমি আমার পরিবার নিয়ে আসছি। এখন তাদের সঙ্গে আমি কীভাবে দূরত্ব বজায় রাখব।

তিনি বলেন, কেবিনে যারা আসছেন তারা শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে পারেন। কিন্তু আমার মতো যারা ডেকে বসে আসছেন তাদের এ দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব নয়। এছাড়া প্রশাসনের ভয়ে ঘাট থেকে যাত্রী কম নিয়ে ছাড়লেও বিভিন্ন স্থান থেকে যাত্রী নামানো ও ওঠানো হয়। ফলে প্রথমে দূরত্ব বজায় থাকলেও পরে সেটা আর মানা সম্ভব হয় না।

বরিশাল রুটের পয়সারহাট থেকে ছেড়ে আসা এমভি পূবালী-৯ এর সুপারভাইজার সজল আহমেদ বলেন, লঞ্চ চলাচলে আমরা সরকারের সব নির্দেশনা মেনে যাত্রী পরিবহণ করছি। যাত্রী ওঠার সময় যাদের মাস্ক নেই তাদের লঞ্চে উঠতে দিচ্ছি না। নিয়মিত ডিটারজেন দিয়ে ধোয়া-মোছা হচ্ছে লঞ্চ। পাশাপাশি স্যানিটাইজার করা হচ্ছে প্রত্যেক যাত্রীকে। সরকারের নির্দেশমত অর্ধেক যাত্রী নিয়ে যাতায়াত করছি। এর আগে আমরা প্রায় ৪০০ যাত্রী আনা-নেওয়া করলেও এখন মাত্র ১৮০ জনের বেশি যাত্রী বহন করছি না। তবে নিয়ে যাচ্ছি মাত্র ৮০ থেকে ৯০ জন যাত্রী।

শারীরিক দূরত্ব মান হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা লঞ্চের ভেতরে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য নির্দিষ্ট করে দাগ টেনে দিয়েছি। কিন্তু যাত্রীদের মানাতে আমাদের অনেক কষ্ট হচ্ছে। তাদের বার বার বললেও শোনে না। কেউ বলে আমরা একই পরিবারের। কোনো সমস্যা হবে না। ঘাট থেকে ছাড়ার পর শুধু যাত্রী নামানো হয়, কোথাও থেকে যাত্রী উঠানো হয় না বলেও জানান তিনি।

চাঁদপুর থেকে আসা রফ রফ-৭ এর যাত্রী রায়হান বলেন, মানুষকে সচেতন করা অনেক কষ্ট। আমি প্রথম শ্রেণিতে এসেছি। সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মানা হলেও ডেকে কোনো যাত্রীকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা যায়নি। মাস্ক থাকলেও অনেকে তা পরছেন না। একজন আরেকজনের গা ঘেঁষে বসে আছেন। একই বিছানায় পাঁচ-ছয়জনকে বসে আসতে দেখা গেছে। আসলে গণপরিবহণে শারীরিক দূরত্ব মানা অনেক কঠিন। লঞ্চের লোকজন এসে বার বার বলে যাচ্ছেন তাতে কোনো লাভ হচ্ছে না। কে শোনে কার কথা।

রফ রফ-৭ এর সুপারভাইজার গিয়াস উদ্দিন বলেন, আমরা সকারের নির্দেশমত ধারণক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলাচল করছি। আমাদের ধারণক্ষমতা ৭৮৬ জন অথচ আজ নিয়ে আসছি মাত্র ৩০০ যাত্রী।

\হআইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন গুনে গুনে যাত্রী দিচ্ছে। শতভাগ মাস্ক পরা যাত্রী নিশ্চিত করছি। লঞ্চে ওঠার সময় স্যানিটাইজার করা হচ্ছে। আমরা আমাদের মতো করে সতর্ক করছি। অনেকেই মানছেন না। যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি মানার কথা বললেও তারা বলে একই পরিবারের লোক কিছু হবে না।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহণ কর্তৃপক্ষের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ভোরে যাত্রীদের একটু ভিড় থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীর সংখ্যা কমে গেছে। আবার দুপুরের পর থেকে যাত্রী বাড়বে। কারণ দূরপালস্নার লঞ্চগুলো ভোর ৪টা থেকে সকাল ৬টার মধ্যে চলে আসে। আর ছেড়ে যায় সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৭টার মধ্যে। এ কারণে তখন পন্টুনে ভিড় বেশি থাকে। সে সময়ে যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি মানা সম্ভব হচ্ছে না। আর ১০ নম্বর পন্টুন থেকে হাতিয়া ও বেতুয়ার লঞ্চ এসে ভিড়ে। সেখানে সবচেয়ে বেশি ভিড় থাকে। কারণ ওই অঞ্চলের সঙ্গে বাই রোড যোগাযোগ ব্যবস্থা নেই। তাই তাদের যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হলো লঞ্চ। ফলে ভিড় বেশি থাকায় স্বাস্থ্যবিধি মানা সম্ভব হচ্ছে না। বাকি ঘাটগুলোয় কোনো সমস্যা নেই। বাকি পন্টুনগুলোয় স্বাভাবিকের চেয়েও কম যাত্রী আছে সেখানে সমস্যা হচ্ছে না। ভোর ৪টা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত ৪৫টি লঞ্চ এসেছে। ছেড়ে গেছে ১৫টি।

এছাড়া লঞ্চ টার্মিনালে প্রশাসনের লোকজন প্রতিনিয়ত যাত্রীদের শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। সদরঘাট টার্মিনালে প্রবেশ মুখে বসানো হয়েছে জীবাণুনাশক টানেল।

এদিকে গত রোববার ঢাকা নদী বন্দর (সদরঘাট) পরিদর্শন করে নৌপ্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে যাতায়াত করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, লঞ্চ চলাচলে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি গ্রহণ করেছি। বিআইডবিস্নউটিএ স্বাস্থ্যবিধি মেনে লঞ্চে যাত্রী চলাচলে লিফলেট বিতরণ ও প্রচারণা চালিয়েছে। হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও তাপমাত্রা মাপার যন্ত্রের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে সদরঘাটে প্রবেশ পথের যেগুলোতে জীবাণুনাশক টানেল ছিল না সেগুলো বন্ধ করে দেন তিনি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<101109 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1