পালটা-পালটি সংবাদ সম্মেলন

রংপুরে এমপির সঙ্গে স্থানীয় জাপার বিরোধ

প্রকাশ | ০৪ জুন ২০২০, ০০:০০

রংপুর প্রতিনিধি
ডিও লেটারে স্বাক্ষর না করাকে কেন্দ্র করে রংপুর সদর-৩ আসনের সংসদ সদস্য রাহগীর আল মাহী সাদ এরশাদ ও জাতীয় পার্টির রংপুর মহানগরের সভাপতি সিটি কপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার মধ্যে বিরোধ তৈরি হয়েছে। এ নিয়ে পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করেছেন তারা। বুধবার দুপুরে পলস্নী নিবাসে সাদ এরশাদ ও এর আগে সকালে দলের জেলা কার্যালয়ে মোস্তাফিজার রহমান সংবাদ সম্মেলন করেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পলস্নী নিবাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বুধবার দুপুরে পলস্নীনিবাসে এরশাদ পুত্র রাহগীর আল মাহী সাদ সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে বলেছেন, ডিও লেটারে (চাহিদাপত্র) স্বাক্ষর না করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে মতবিনিময় সভায় হট্টগোল করে তাকে ও তার স্ত্রীকে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। এ ঘটনায় স্থানীয় নেতাদের ইন্ধন রয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, ঈদের পর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নেতা-কর্মীদের নিয়ে বৈঠক করছিলাম। সেখানে ডিও লেটারে স্বাক্ষর না দেওয়ায় তাকে ও তার স্ত্রীকে গালিগালাজ করে ও ভয়ভীতি দেখিয়ে লাঞ্ছিত করা হয়। অস্ত্র নিয়ে তার বাসায় হামলা চালিয়ে তার ব্যক্তিগত গাড়ি, চেয়ার, টেবিল ভাংচুর করা হয়। নিজের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেছেন, বিষয়টি তিনি দলের চেয়ারম্যান, মহাসচিব, সংসদের বিরোধী দলীয় নেত্রীসহ সরকারকে অবহিত করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সাদ এরশাদের স্ত্রী মাহিমা সাদ এ সময় কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, তাকে অশ্লীল ভাষায় গালাগাল দেওয়াসহ জীবননাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে। এরশাদের পুত্রবধূ হয়ে রংপুরে তাকে লাঞ্ছিত হতে হবে তা তিনি জীবনে কল্পনাও করেননি। অন্যদিকে, পলস্নীনিবাসে মঙ্গলবারের রাতের ঘটনার সুষ্ঠু দাবিসহ আটক নেতাকে ছেড়ে দিতে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি ও সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। বুধবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে নগরীর সেন্ট্রাল রোডের জাতীয় পার্টি অফিসে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে বলেন, বহিরাগত ও ভাড়াটে গুন্ডাদের সাথে নিয়ে রংপুরে রাজনীতি করছেন সংসদ সদস্য সাদ এরশাদ। তার লেলিয়ে দেওয়া বাহিনী ২৭ নম্বর ওয়ার্ড জাপার সাধারণ সম্পাদক টিপু সুলতানকে মারধর করেছে। অন্যায়ভাবে তাকে পুলিশে সোপর্দ করে ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে চেষ্টা করছে। ওই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তসহ প্রকৃত দোষীদের গ্রেপ্তার ও আটক নেতাকে ছেড়ে দিতে ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেন সিটি মেয়র মোস্তফা। ঘটনার দ্রম্নত কোনো সুরাহা না হলে বৃহত্তর কর্মসূচি দেওয়ার হুশিয়ারি দেন তিনি। সংবাদ সম্মেলন শেষে দলীয় অফিস থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে গিয়ে শেষ হয়। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, জাপা জেলা ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হাজী আব্দুর রাজ্জাক, মহানগর যুগ্ম সম্পাদক লোকমান হোসেন, যুব সংহতির জেলা সেক্রেটারি হাসানুজ্জামান নাজিম, মহানগর সভাপতি শাহীন হোসেন জাকির, সাধারণ সম্পাদক শান্তি কাদেরী, স্বেচ্ছাসেবক পার্টিও সভাপতি ফারুক মন্ডল প্রমুখ। একাধিক সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার পলস্নী নিবাসে সিটি করপোরেশন এলাকার কয়েকটি ওয়ার্ডের জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ঈদ-পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময় করছিলেন জাপা সংসদ সদস্য সাদ এরশাদ। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে সাদ এরশাদকে উদ্দেশ্য করে ২৭ নং ওয়ার্ড দলের সাধারণ সম্পাদক টিপু সুলতান একটি ডিও লেটারে স্বাক্ষর না করা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বক্তব্য দেন। ওই বক্তব্যের পর পক্ষে-বিপক্ষে সেখানে দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে টিপু সুলতানকে আটক করে তাজহাট থানায় নিয়ে যায়। এদিকে জাপার ওয়ার্ড নেতাকে আটকের খবর ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা পলস্নী নিবাসের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। এই বিক্ষোভ চলে মধ্যরাত পর্যন্ত। আটকের বিষয়ে মহানগর পুলিশের তাজহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ রোকনুজ্জামান বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জাপা নেতা টিপু সুলতানকে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য তাকে থানায় আনা হয়। এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পলস্নী নিবাস এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বলে তিনি জানান।