৭ মাসেও মিলছে না পাসপোর্ট আটকে আছে দুই লাখ

প্রকাশ | ০৫ জুন ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রাদুর্ভাবের কারণে দীর্ঘ ৬৬ দিন বন্ধ ছিল পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সব কার্যালয়। তবে ৩১ মে থেকে অধিদপ্তর খোলার পরেও বন্ধ রয়েছে নতুন করে পাসপোর্ট দেওয়ার কার্যক্রম। এর ফলে আটকে আছে সারাদেশ ও প্রবাসীদের প্রায় দুই লাখ পাসপোর্ট আবেদন। বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর জানায়, সাধারণ ছুটির পর ৩১ মে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের কার্যালয়গুলো খুললেও পাসপোর্ট প্রদানের বিষয়ে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এসব নির্দেশনায় বলা হয়, নতুন পাসপোর্টের আবেদন এবং বায়ো-এনরোলমেন্ট বন্ধ থাকবে। যাদের পাসপোর্টের মেয়াদ এখনো ছয় মাসের বেশি রয়েছে তাদের পাসপোর্ট রিনিউ/রি-ইসু্য আপাতত বন্ধ থাকবে। এদিকে ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে পাসপোর্টের আবেদন করে এখনো পাসপোর্ট পাননি- এমন অনেক ভুক্তভোগী প্রতিনিয়ত ভিড় করছেন পাসপোর্ট অধিদপ্তরে। আহমেদ নূর নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা বলেন, 'আমি গত ১৩ নভেম্বর পাসপোর্টের আবেদনপত্র জমা দিয়ে ফিঙার প্রিন্ট ছবিসহ বায়ো-এনরোলমেন্ট করে আসি। স্স্নিপে পাসপোর্ট ডেলিভারির কথা বলা হয়েছিল ২০১৯ সালের ৪ ডিসেম্বর। তবে সর্বশেষ ৪ জুন পর্যন্ত পাসপোর্ট হাতে পাইনি।' তিনি বলেন, মেসেজে পাসপোর্ট আবেদন প্রক্রিয়ার সর্বশেষ অবস্থা জানতে চাইলে দীর্ঘদিন ধরে 'পেন্ডিং ফর পাসপোর্ট পারসোনালাইজেশন' লেখা দেখাচ্ছে। চলতি বছরের মার্চে আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে খোঁজ করলে তারা জানান, তিন দিন পর দিয়ে দেবে। তবে জুনেও পাসপোর্ট হাতে পাইনি। অথচ এক দালাল ১৫০০ টাকার বিনিময়ে তিন দিনে প্রিন্ট করে দেবেন বলে আমাকে জানান। এ ছাড়া আমার পরিচিত অনেকেই দালাল ধরে ডেলিভারির তারিখের আগেই পাসপোর্ট নিয়ে নিয়েছে। তারেক মাহমুদ নামের আরেক অবেদনকারী বলেন, 'আমি দীর্ঘদিন আগে ই-পাসপোর্টের আবেদন করেছিলাম। অবশেষে ৮৭ দিন পর ৪ জুন পাসপোর্ট হাতে পেলাম।' পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী শাহাদাত হোসেন বলেন, 'আমি ২০১৯ সালের ২৬ নভেম্বর আমার স্ত্রী ও মায়ের জন্য মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের (এমআরপি) আবেদন করি। সশরীরে ৫-৬ বার আগারগাঁওয়ের প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে খোঁজ নিই। তারা বলেন যে দ্রম্নত হয়ে যাবে। তবে জুন মাস পর্যন্ত পাসপোর্ট হাতে পাইনি।' তবে সাত দিনের জরুরি পাসপোর্টের জন্য আবেদন করে দেড় থেকে দুই মাসে পাসপোর্ট পেয়েছেন- এমন অভিযোগও করেছেন ভুক্তভোগীরা। এ বিষয়ে বহির্গমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ বলেন, 'করোনাকালীন আপাতত বায়ো-এনরোলমেন্ট করার ঝুঁকি রয়েছে। তাই এটা চালু হতে কিছু সময় লাগবে। আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। তবে পরিস্থিতি ভালো হলে আশা করছি দ্রম্নতই এই কার্যক্রম চালু করতে পারব।' তিনি বলেন, করোনার এই সংকটের মধ্যেও পাসপোর্ট প্রিন্টের কাজ চলছে। যাদের জরুরি প্রয়োজন, তাদের অগ্রাধিকার দিয়ে পাসপোর্ট প্রিন্ট করা হচ্ছে। পাসপোর্ট অধিদপ্তরের আরেকজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, নতুন পাসপোর্ট দেওয়ার ক্ষেত্রে পাসপোর্ট গ্রহীতার ছবি তোলা, ফিঙ্গার প্রিন্ট, আইরিশ পিকচারসহ বেশ কিছু কার্যক্রম রয়েছে, যেগুলো নিয়ে গ্রহীতাকে সরাসরি অফিসে আসতে হবে। এই কার্যক্রম সম্পন্ন করার সময় করোনা ছড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তিনি বলেন, ই-পাসপোর্ট ও এমআরপি দুই ক্ষেত্রে নতুন পাসপোর্ট আবেদন বন্ধ রয়েছে। তবে বাংলাদেশে বসবাসরত বিদেশি যাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়েছে বা হয়ে যাচ্ছে, তাদের ভিসার আবেদন করার প্রক্রিয়া চালু রয়েছে। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, পাসপোর্ট প্রদান বন্ধ থাকলেও জরুরি ভিত্তিতে দেশের বাইরে যেতে হবে- এমন অনেকের পাসপোর্ট দেওয়া হচ্ছে। তবে সেক্ষেত্রে প্রমাণপত্র দেখাতে হবে।