করোনায় আরও এক চিকিৎসকের মৃতু্য

প্রকাশ | ০৬ জুন ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
ডা. এসএএম গোলাম কিবরিয়া
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউরোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এসএএম গোলাম কিবরিয়া কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। বৃহস্পতিবার রাত ১টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃতু্য হয় বলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক কনক কান্তি বড়ুয়া জানান। তিনি বলেন, 'ডা. গোলাম কিবরিয়া কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃতু্য হয়।' চিকিৎসকদের সংগঠন 'ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেফটি রাইটস অ্যান্ড রেসপন্সিবিলিটিস'-এফডিএসআরের যুগ্ম সম্পাদক ডা. রাহাত আনোয়ার চৌধুরী জানান, ৩ জুন থেকে হাসপাতালের আইসিইউতে ছিলেন অধ্যাপক কিবরিয়া। তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সিন্ডিকেট সদস্য ডা. কিবরিয়া বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল, বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনসসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূণ দায়িত্ব পালন করেছেন। তার মৃতু্যতে শোক জানিয়ে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের উপাচার্য কনক কান্তি বড়ুয়া শুক্রবার এক বার্তায় বলেন, 'ডা. এসএএম গোলাম কিবরিয়ার মৃতু্যতে চিকিৎসক সমাজের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল। চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিশেষায়িত শাখা ইউরোলজির প্রসারে তিনি অবদান রেখেছেন। অনেক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তৈরিতে তার ভূমিকা ছিল।' এ পর্যন্ত ১৮ চিকিৎসকের মৃতু্য : এফডিএসআর দেশে কোভিড-১৯ এ পর্যন্ত আক্রান্তত্ম একহাজার ৩৭ জন চিকিৎসকের মধ্যে ১৮ জনের মৃতু্য হয়েছে বলে চিকিৎসকদের একটি সংগঠন দাবি করেছে। ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেফটি, রাইটস অ্যান্ড রেসপনসিবিলিটিস-এফডিএসআর নামে সংগঠনটি বলছে, এ ছাড়াও করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে পাঁচজনের মৃতু্য হয়েছে। এফডিএসআরের যুগ্ম সম্পাদক ডা. রাহাত আনোয়ার চৌধুরী শুক্রবার সকালে বলেন, এখন পর্যন্ত নিশ্চিতভাবে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১৮ জন এবং 'কোভিড লাইট সিম্পটম' নিয়ে মারা গেছেন আরও পাঁচজন। 'রোগীদের সংস্পর্শে আসায় চিকিৎসকরা বেশি ঝুঁকিতে। এ কারণে তারা আক্রান্ত হচ্ছেন বেশি। তারা সামনের সারিতে থেকে কাজ করছেন। একইভাবে পুলিশও সামনের দিকে থাকেন। ফলে তারাও আক্রান্ত হচ্ছেন বেশি।' করোনাভাইরাসে চিকিৎসকদের আক্রান্ত ও মৃতু্যর সংখ্যা নিয়ে এফডিএসআরের পরিসংখ্যানের সত্যতা নিশ্চিত করতে পারেনি সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, 'চিকিৎকদের অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছেন, মারা যাচ্ছেন। কিন্তু সঠিক সংখ্যাটি এই মুহূর্তে আমার জানা নেই। তারা অনেকেই পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আক্রান্ত হচ্ছেন। কেউ কেউ এর বাইরেও আক্রান্ত হচ্ছেন।' এফডিএসআরের তথ্য অনুযায়ী, ১৫ এপ্রিল ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের এই সহকারী অধ্যাপক ডা. মঈন উদ্দিন। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত চিকিৎসকদের মধ্যে তিনিই প্রথম। ৩ জুন ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. কর্নেল (অব.) মো. মনিরুজ্জামান। ১৩ মে একই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান অধ্যাপক ডা. আবুল মোকারিম মো. মোহসিন উদ্দিন। এফডিএসআর বলছে, গত ১৮ মে মারা যান ডা. আজিজুর রহমান রাজু, ২২ মে মারা যান মৌলভীবাজারের প্রাক্তন সিভিল সার্জন ডা. এমএ মতিন, ডা. কাজী দিলরুবা খানম। ২৬ মে মারা যান সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. আব্দুর রহমান,গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. আমিনা খান। ২৭ মে মারা যান অধ্যাপক ডা. মোশাররফ হোসেন এবং ৩০ মে মারা যান ডা. সাইদুর রহমান। যক্ষ্ণারোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ওয়াহিদুজ্জামান আকন্দ বাবলু ১ জুন মারা যান, ২ জুন মারা যান প্রখ্যাত ইউরোলজিস্ট ডা. মঞ্জুর রশীদ চৌধুরী, ৩ জুন মারা যান চট্টগ্রামের মেরিন সিটি মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক (মেডিসিন) ডা. এহসানুল করিম। একই দিনে মারা যান ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ মহিউদ্দীন ও ডিজি হেলথের অবসরপ্রাপ্ত ইভালুয়াটার অফিসার ডা. একেএম ওয়াহিদুল হক। ৪ জুন মারা যান ফরেনসিক মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ইমারজেন্সি মেডিকেল অফিসার ডা. মুহিদুল হাসান এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউরোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এস এ এম গোলাম কিবরিয়া। আর করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া পাঁচ চিকিৎসক হলেন- অধ্যাপক ডা. মাহবুবুল আলম, অধ্যাপক (অব.) আনিসুর রহমান, ডা. সারওয়ার ইবনে আজিজ, ডা. সৈয়দ জাফর রুমি ও ডা. তাজউদ্দিন। গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে নতুন এ করোনাভাইরাসে প্রথম সংক্রমণ নিশ্চিত করে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান-আইইডিসিআর। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী ৪ জুন পর্যন্ত সারাদেশে ৫৭ হাজার ৫৬৩ জন এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ৭৮১ জন। এ পর্যন্ত মোট ১২ হাজার ১৬১ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।