লিবিয়ায় মানব পাচার

১৩ জেলায় গ্রামে গ্রামে সক্রিয় শতাধিক চক্র

প্রকাশ | ০৭ জুন ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
লিবিয়ায় ২৬ বাংলাদেশি হত্যার ঘটনায় রাজধানীতে ১০৮ মানব পাচারকারী এবং ছয়টি ট্রাভেল এজেন্সির বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এতে লিবিয়া, দুবাইসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত মানব পাচারকারীদের আসামি করা হয়েছে। ইতোমধ্যের্ যাব-১ ও সিআইডি পৃথক অভিযানে ১৩ মানব পাচারকারীকে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে। গত শুক্রবার বিকালে সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফারুক হোসেন মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, '১ জুন পল্টন থানায় মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে প্রথম একটি এবং ৪ জুন পল্টন ও বনানী থানায় পৃথক আরও দুটি মামলা হয়েছে। ২০১৮ সালের ফেব্রম্নয়ারি থেকে ২০২০ সালের মার্চ পর্যন্ত পাচারের শিকার হওয়া ভিকটিমের হয়ে এসব মামলা করা হয়েছে।' প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় মামলা যথাক্রমে ৩৮, ৩৬ ও ৩৪ জন মানব পাচারকারীর বিষয়ে তথ্য দেয়া হয়েছে। তিন মামলায় মোট নামীয় আসামি ১০৮ জন। মামলার এজাহারে উলেস্নখ করা হয়েছে, গত ২০১৮ সালের ফেব্রম্নয়ারি থেকে ২০২০ সালের মার্চের ২০ তারিখের মধ্যে ৩৮ জন বাংলাদেশিকে ইতালিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাঠানোর কথা বলে পাচার করা হয়। ১৩ জেলার গ্রামে গ্রামে পাচারচক্র লিবিয়ায় ৩৮ বাংলাদেশিকে দুই বছর ধরে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে সংগ্রহ করে পাচার করা হয়েছে। পাচারের সঙ্গে দেশের ১৩টি জেলার শতাধিক ব্যক্তি জড়িত। মানব পাচারের গ্রম্নপগুলো দেশের মাদারীপুর, কিশোরগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর, নোয়াখালী, কুমিলস্না, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, নড়াইল, বরগুনা ও ঢাকায় সক্রিয় রয়েছে। এসব জেলায় সক্রিয় মানব পাচারকারী হলো-মাদারীপুরের রাজৈরে নূর হোসেন শেখ, নজরুল, রবি, জুলহাস শেখ, মিরাজ হাওলাদার, রাসেল মীর, রাজন ওরফে বুলেট, মোমিন, ইলিয়াছ মীর এবং শিবচরের জাকির মিয়া। ঢাকার রমনার বেইলী রোডের নুরজাহান আক্তার (৪০), আবদুস সাত্তার (৫০), রুজভেল্ট ট্রাভেল এজেন্সির পরিচালক আকবর হোসেন এবং মগবাজার ওয়্যারলেস গেটের খালিদ চৌধুরী (৪৮) এবং বনানীর বেঙ্গল টাইগার ওভারসিস লিমিটেড। গোপালগঞ্জের মকসুদপুরের রব মোড়ল, কুষ্টিয়ার মিরপুরের হাজি কামাল, ফরিদপুরের বক্স সরদার, নড়াইলের মোক্তার মোলস্না, কিশোরগঞ্জ ভৈরবের শাওন ও জাফর। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ার রফিকুল ইসলাম সেলিম ও হোসাইন, কুমিলস্নার সনাতন দাশ ওরফে দাদা, শরীফ হোসেন, শরীফের দুই সহযোগী সোহেল পাজারী ও হারুন। শরীয়তপুরের রফিকুল ইসলাম, বরগুনার পাথরঘাটার সজল ও ইদ্রিস আলী। নোয়াখালী সোনাইমুড়ীর রুবেল মির্জা, নাসির উদ্দিন মির্জা ও রিপন মির্জা। তারা তিনজন ছদ্মনাম ব্যবহার করে। তাদের সবার ছদ্মনাম গুডলাক। মধ্যপ্রাচ্যের সক্রিয় চক্র মিশরে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গার আবদুর রহমান তৌহিদ, নোয়াখালীর কাজী শরীফ ও কাজী ইসমাঈল হোসেন এবং দুবাইয়ে কুষ্টিয়ার সাদ্দাম হোসাইন। অপরদিকে লিবিয়ার বেনগাজীতে আবদুলস্নাহ নামে একজন সক্রিয়। সিআইডি জানিয়েছে, বিভিন্ন এজেন্সির ও রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক, কর্মচারী ও তাদের দালালরা এসব মানব পাচার চক্রের সদস্য। তারা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে বেকার যুবকদের টার্গেট করে স্বচ্ছল জীবনের স্বপ্ন দেখিয়ে ইউরোপে পাঠানোর কথা বলে। এরপর তিন-চার লাখ টাকার বিনিময় তাদের অবৈধভাবে ইউরোপে পাঠানোর চেষ্টা করে। লিবিয়ায় তাদের নেয়ার পর জিম্মি করে পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায়ের চেষ্টা করে। গ্রেপ্তার হয়েছে যারা পাচারচক্রের আট সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছের্ যাব। রাজধানীর গুলশান থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে পাচারচক্রের মূল হোতা কামাল উদ্দিন ওরফে হাজি কামালকে, কিশোরগঞ্জ থেকে হেলাল মিয়া, খবির উদ্দিন, শহিদ মিয়া, বরগুনার পাথরঘাটা এলাকা থেকে সজল ও ইদ্রিস আলী, গোপালগঞ্জের মকসুদপুর থেকে সেন্টু শিকদার ও নার্গিস বেগমকে। এ ছাড়াও সিআইডি গ্রেপ্তার করেছে গোপালগঞ্জ থেকে লিয়াকত শেখ ও জুলহাস সরদার, ফরিদপুর থেকে বাচ্চু, শেখ মাহবুব ও শেখ সাহাদুরকে। সিআইডির বক্তব্য সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফারুক হোসেন বলেন, 'এখানে অনেক ধরনের অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। হত্যা, অস্ত্র, পাচার, মানিলন্ডারিং, নির্যাতনসহ অসংখ্য অপরাধ হয়েছে। ভিকটিম অসংখ্য, তাই একাধিক মামলা হতে পারে। চাইলে ভিকটিমরাও মামলা করতে পারেন। সিআইডি বাদী হয়ে তিনটি মামলা করেছে। মামলাগুলোর তদন্ত শুরু হয়েছে।' প্রসঙ্গত, গত ২৮ মে লিবিয়ার মিজদা শহরে মানব পাচারকারীদের হাতে ২৬ বাংলাদেশি নিহত ও ১২ জন আহত হয়েছেন। বাংলাদেশি একটি দালালচক্র উন্নত জীবনের প্রলোভন ও মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই তাদের লিবিয়ায় নিয়ে যায়। ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে তাদের ইতালি হয়ে ইউরোপে প্রবেশ করানোর আশ্বাস দিয়েছিল তারা। কিন্তু, লিবিয়াতে পাচারকারী স্থানীয় চক্রটি তাদের মারধর করে মুক্তিপণ চায়। এ সময় মুক্তিপণ চাওয়া নিয়ে দ্বন্দ্বে পাচারকারীদের স্থানীয় হোতা প্রথমে নিহত হয়। এরপর পাচারকারীদের নির্বিচার গুলিবর্ষণে ওই হতাহতের ঘটনা ঘটে। বাংলা ট্রিবিউন