অনলাইনে বেড়েছে আম কেনাবেচা

ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বড় বড় শহর-অঞ্চল থেকে ভিডিও কলের মাধ্যমে অর্ডার দিচ্ছেন ক্রেতারা

প্রকাশ | ২৮ জুন ২০২০, ০০:০০ | আপডেট: ২৮ জুন ২০২০, ১০:১১

যাযাদি রিপোর্ট

এবার রাজশাহীর আম বেচাকেনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে ডিজিটাল মাধ্যম তথা অনলাইন। করোনাভাইরাসের কারণে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার আমের হাটগুলোতে ক্রেতা কম। তবে এতে আম বিক্রি বন্ধ নেই। হাটের বেচাকেনার অভাব পূরণ করছে অনলাইন মাধ্যমগুলো। সরাসরি গ্রাহকের উপস্থিতি না থাকলেও অনলাইন অর্ডারের কারণে বেড়েছে কর্মতৎপরতা। এতে করে পড়াশোনা জানা বেকারদের একটি অংশ রোজগারের পথও পেয়েছেন। ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বড় বড় শহর-অঞ্চল থেকে ভিডিও কল দিচ্ছেন ক্রেতারা। আমের কোয়ালিটি দেখে অর্ডার দিচ্ছেন। অর্ডার দেয়ার পরের দিনই ঢাকার বাসায় বা ঠিকানানুযায়ী বাসায় বসে আম পেয়ে যাচ্ছেন গ্রাহকরা। অনলাইনে আমের অর্ডারের কারণে ভালো দামও পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন আম চাষি ও আড়তদাররা। চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমচাষি হাসান আল সাদী পলাশ বলেন, 'করোনার কারণে এবার রাজশাহী-চাঁপাইয়ের সব আমচাষি দুশ্চিন্তায় ছিলেন। এখন পর্যন্ত আম কেনার জন্য আগের মতো পার্টি (ক্রেতা) নেই। তবে তাদের অভাব পূরণ করছে অনলাইন পার্টি। তারা ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে আম ঘরে ঘরে পৌঁছে দিচ্ছেন। অনলাইনে অর্ডার নিয়ে এখান থেকে আম কিনে তারা কুরিয়ার, ট্রেন ও ডাকবিভাগের গাড়িতে নির্দিষ্ট স্থানে আম পৌঁছাচ্ছে। সেখানে আরেক টিম আম বুঝে নিয়ে ঘরে ঘরে পৌঁছে দিচ্ছেন।' তিনি বলেন, 'চাঁপাইনবাবগঞ্জে এত অনলাইনের লোক আগে ছিল না। এবার অনেক শিক্ষিত বেকার লোক অনলাইনের মাধ্যমে আম সরবরাহ করে ভালো টাকা রোজগার করেছেন।' এ প্রসঙ্গে রাজশাহী এগ্রো ফুড প্রডিউসার সোসাইটির চেয়ারম্যান আনোয়ারুল হক বলেন, 'ডিজিটালের সুবাদে অনলাইন পোর্টাল, ফেসবুক পেজ ও ফেসবুক-ম্যাসেঞ্জারের বিভিন্ন গ্রম্নপে প্রচারণা চালিয়ে অর্ডার নিচ্ছেন অনলাইন আম ব্যবসায়ীরা। অনলাইনে অর্ডার, বিকাশে পেমেন্ট আর কুরিয়ার, ম্যাংগো ট্রেন, ডাকবিভাগে পণ্য পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। তবে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে আম পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে সরকার কথা রাখলেও কুরিয়ার সার্ভিসগুলো কথা রাখেনি। তারা আগের মতই গলাকাটা চার্জ নিয়েছে। ডিজিটালি আম বেচাকেনায় এটা একটা নতুন দিক খুলে গেল। শুধু আমের ক্ষেত্রে নয়, অন্যান্য ফলের ক্ষেত্রে এটা হতে পারে।' তিনি বলেন, 'করোনার কারণে আম বিক্রি নিয়ে কৃষকরা যেভাবে চিন্তিত ছিল, অনলাইন তার অনেকটা দূর করেছে। আমের প্রডাকশন কম হলেও দাম ভালো পাচ্ছেন চাষিরা।' চাঁপাইনবাবগঞ্জের আড়তদার বাহরাম আলী এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, 'করোনার বছর হিসেবে আমের ব্যবসা ভালো হচ্ছে। আগের মতো পার্টি আসছে না। স্বাভাবিক অবস্থা থাকলে যে ব্যবসা হতো, তা হচ্ছে না। তবে যুবক কিছু লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে এই আমের সিজনে। অনলাইনে তারা অর্ডার নিয়ে আমাদের কাছ থেকে আম কিনে নিচ্ছেন এবং গ্রাহকের কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। ফলে আড়তদার, বাগান মালিক, চাষি ও অনলাইন ব্যবসায়ী সবাই লাভবান হচ্ছে। অন্য শহরে যারা আম গ্রাহকের ঘরে পৌঁছে দিচ্ছেন, তারাও লাভবান হচ্ছেন।' রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামসুল হক বলেন, 'গত মৌসুমে কিছু অনলাইন ব্যবসা হয়েছে, তবে এত বেশি না। গত বছর ৪-৫ জন ব্যক্তি অনলাইনে ব্যবসা করেছিলেন। কিন্তু এবার প্রায় অর্ধ শতাধিক ব্যক্তি অনলাইনে আমের ব্যবসা করছেন। তারা এই ব্যবসার মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গ্রাহকের কাছে আম পৌঁছে দিচ্ছেন।' ঢাকার জিগাতলায় বসবাস করা অনলাইন আম ব্যবসায়ী হাসান আলী বলেন, 'রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, দিনাজপুর ও রংপুরে অনলাইনে অর্ডার দেয়া হয়। আমরা বিকাশ অথবা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠিয়ে দেই। আড়তদাররা আম পাঠালে কুরিয়ার সার্ভিস থেকে রিসিভ করে সেগুলো ঢাকা শহরের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে দেই। বাসায় পৌঁছে দেয়া বাবদ গ্রাহকরা আমাদের আলাদা সার্ভিস চার্জ দিচ্ছেন।' 'রাজশাহীর আম বাজার' ফেসবুক পেজের মালিক আবদুল জলিল বলেন, 'অনলাইনে অর্ডার নিয়ে আমরা পাঁচ বছর থেকে ব্যবসা করে আসছি। অনলাইনে এখন প্রচুর সাড়া পাচ্ছি। প্রতিদিন বিভিন্ন শহর থেকে অর্ডার পাচ্ছি এবং সে অনুযায়ী আম পৌঁছে যাচ্ছে।'