চট্টগ্রামে করোনার বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় গলদ

প্রকাশ | ৩০ জুন ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসায় সংশ্লিষ্ট হাসপাতালগুলোতে বেড়েছে পিপিই, মাস্ক, হ্যান্ড গস্নাভস, সুঁই, সিরিঞ্জ, গজ কাপড়, নেজাল সোয়াব, স্যালাইন এবং স্যানিটাইজারের ব্যবহার। এসব সামগ্রী একবার ব্যবহারের পর ফেলে দেওয়া হচ্ছে আশপাশের ডাস্টবিনে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় গলদ থাকায় কয়েকদিন ধরে উন্মুক্ত অবস্থায় পড়ে থাকছে এসব সামগ্রী। এতে বাড়ছে সংক্রমণের ঝুঁকি। এসব বর্জ্য মানবস্বাস্থ্যের জন্য ভয়ঙ্কর ঝুঁকি বিবেচনায় সঠিক ব্যবস্থাপনার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর গত ১৩ জুন হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোকে ৪ পাঁচটি নির্দেশনা মানতে চিঠি দেয়। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, প্রত্যেক স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে এসব বর্জ্য আলাদা করার প্রক্রিয়া সম্পর্কে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। দুই স্তরবিশিষ্ট পস্নাস্টিক ব্যাগের দুই-তৃতীয়াংশ এসব বর্জ্য ভর্তি করে ব্যাগের মুখ ভালোভাবে বেঁধে আলাদা বিনে রাখতে হবে, বিনের গায়ে লেখা থাকতে হবে কোভিড-১৯ বর্জ্য। তবে সরকারি হাসপাতালগুলোতে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হলেও বেসরকারি হাসপাতালে এমন কোনো উদ্যোগ এখনো নেওয়া হয়নি। আবার সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানেই প্রতিদিন করোনার বর্জ্য অপসারণেও তদারকি নেই। চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বাংলাদেশ রেলওয়ে হাসপাতাল, বিআইটিআইডি, হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতাল, ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল এবং বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতালে এখন চলছে করোনা রোগীদের চিকিৎসা। এ ছাড়া চট্টগ্রাম মা-শিশু ও জেনারেল হাসপাতাল, ম্যাক্স হাসপাতাল, ন্যাশনাল হাসপাতাল, পার্কভিউ হাসপাতাল, ডেল্টা হাসপাতাল, মেডিকেল সেন্টার, সার্জিস্কোপ হাসপাতাল, সিএসটিসি হাসপাতাল, সিএসসিআর হাসপাতাল, এশিয়ান হাসপাতাল, ওয়েল হাসপাতাল, মেট্রোপলিটন হাসপাতাল, শিপ ব্রেকার্স অ্যাসোসিয়েশন হাসপাতাল, ফিল্ড হাসপাতাল, চসিকের আইসোলেশন সেন্টার এবং ব্যক্তি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত দুই-একটি মিনি হাসপাতালে চলছে করোনাসহ বিভিন্ন উপসর্গে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা। সঙ্গে রয়েছে ১৮৩টি ডায়াগনস্টিক সেন্টারও। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পেছনে ও চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের পাশে কয়েকদিন ধরে পড়ে থাকা মেডিকেল বর্জ্য কুড়াতে দেখা গেছে পথশিশুদের। কাক-কুকুর মিলে ছড়িয়ে দিচ্ছে বিভিন্ন সামগ্রী। এতে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে এসব এলাকায়। জানা গেছে, চট্টগ্রামের হাসপাতালগুলো থেকে প্রতিদিন গড়ে ৮-১০ টন মেডিকেল বর্জ্য আসছে। বর্জ্য ফেলার জন্য নগরের আরেফিন নগর ও হালিশহরে চসিকের দুটি ভাগাড় রয়েছে। নগরের প্রতিদিনের প্রায় তিন টন বর্জ্য ফেলা হয় সেখানে। এর সঙ্গে রয়েছে হাসপাতাল বর্জ্যও। এসব বর্জ্য জীবাণুমুক্ত করার বিশেষ কোনো ব্যবস্থা নেই। চমেক হাসপাতালে দুটি ইনসিনারেটর মেশিন থাকলেও সেগুলো অচল হয়ে পড়ে আছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় দক্ষ জনবলও নেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। রোববার চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পেশাগত ও পরিবেশগত স্বাস্থ্যের বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি সম্পর্কিত বিভাগীয় কর্মশালায় চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর সংক্রমণ রোধ, পরিবেশের সুরক্ষা ও বাসযোগ্য পৃথিবী গড়তে হাসপাতালগুলোর যেকোনো বর্জ্য নির্দিষ্ট বিনে রেখে দিন শেষে তা মাটির নিচে পুঁতে বা পুড়িয়ে ধ্বংস করার তাগিদ দেন। তিনি বলেন, যত্রতত্র বর্জ্য ফেললে একদিকে দূষণ ও অন্যদিকে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে ব্যবহৃত পিপিই, মাস্ক, স্যানিটাইজারের কৌটা ও হ্যান্ড গস্নাভস নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলতে হবে। হাসপাতালের কিছু কিছু বর্জ্যে বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যবস্থাপনা করা যেতে পারে। হাসপাতালের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা যাতে স্বাস্থ্যসম্মত হয়, সেদিকে সবাইকে নজর দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। চমেক হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম সেবা সংস্থাকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মেডিকেল বর্জ্য অপসারণে মাসে ৮০ হাজার টাকা দিচ্ছে। প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় ৫-৬ ড্রাম বর্জ্য কাভার্ড ভ্যানে তুলে নিয়ে যায় প্রতিষ্ঠানটি। এরপরও প্রতিদিন জমে থাকছে প্রচুর বর্জ্য। চসিকের প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা শেখ শফিকুল মান্নান সিদ্দিকী বলেন, চট্টগ্রামে প্রতিদিন সৃষ্ট বর্জ্য দুটি ভাগাড়ে ফেলা হচ্ছে। এর সঙ্গে যাচ্ছে মেডিকেল বর্জ্যও। সেবকরা এসব বর্জ্য অপসারণে কাজ করছে। তবে মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য আলাদা ব্যবস্থা বা রিসাইক্লিং করার ব্যাপারে অবগত নন বলে জানান তিনি। সিভিল সার্জন ডা. শেখ ফজলে রাব্বি বলেন, মেডিকেল বর্জ্য যত্রতত্র ফেলা ঠিক নয়। আবার একদিনের বর্জ্য কয়েকদিন ধরে ফেলে রাখাও যাবে না। করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসায় ব্যবহৃত স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী যেখানে-সেখানে ফেলা হলেও তা আরও ঝুঁকিপূর্ণ হবে। গত মার্চ মাসে এ বিষয়ে হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। এ ব্যাপারে তদারকি বাড়াতে হবে। পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগরের একজন কর্মকর্তা বলেন, হাসপাতালগুলোতে ব্যবহৃত বর্জ্য উন্মুক্ত স্থানে না ফেলতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। গাইডলাইন মেনে এসব বর্জ্য রিসাইক্লিং করার পর পুঁতে ফেলতে হবে। করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসায় ব্যবহৃত সামগ্রী কোনোভাবেই খোলা স্থানে ফেলা যাবে না।