করোনা উপসর্গে আরও ১৯ জনের মৃতু্য

প্রকাশ | ৩০ জুন ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
জ্বর-সর্দি ও শ্বাসকষ্টের মতো করোনা উপসর্গ নিয়ে দেশের ৯ জেলায় রোববার ও সোমবার ব্যবসায়ীসহ ১৯ জন মৃতু্যবরণ করেন। তাদের মধ্যে গোয়ালন্দে ১ জন, বরিশালে ৫, কুমিলস্নায় ৬, রাজশাহীতে ১, সিরাজগঞ্জে ১, চুয়াডাঙ্গায় ১, ঝিনাইদহে ১, কুষ্টিয়ায় ২ জন এবং নাটোরে ১ জন মারা গেছেন। আমাদের আঞ্চলিক অফিস, প্রতিনিধি ও সংবাদদাতাদের পাঠানো খবর : গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) : রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে কোভিড-১৯ এর (করোনাভাইরাস) উপসর্গ নিয়ে এক মাছ ব্যবসায়ীর (৬০) মৃতু্য হয়েছে। রোববার রাত সোয়া ৯টার দিকে গোয়ালন্দ পৌরসভার নিজ বাড়িতে তিনি মারা যান। সোমবার সকালে তার মৃতদেহ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে পৌরসভার কেন্দ্রীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। মৃত ব্যক্তির ছেলে জানান, বাবা গোয়ালন্দ বাজারে মাছ ব্যবসা করতেন। সারা দিন বরফজাত মাছ বেচাকেনা করায় মাঝে মধ্যে ঠান্ডা লাগত। এক সপ্তাহ ধরে বাবার শরীরে জ্বর ও সর্দি ছিল। তবে রোববার জ্বর তেমন একটা ছিল না। এরপর পৌরসভার স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের পরামর্শে তাকে গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে নিয়ে যান। দুপুরের দিকে চিকিৎসকরা তার করোনার নমুনা সংগ্রহ করেন। বাড়ি ফিরে আসার পর রাত ৯টা ২০ মিনিটের দিকে তিনি মারা গেছেন। বরিশাল : বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫ জনের মৃতু্য হয়েছে। রোববার সকাল থেকে সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যে তাদের মৃতু্য হয়। হাসপাতাল সূত্র জানায়, রোববার সকাল ৮টার দিকে মারা যান এক নারী (৪০)। বাকেরগঞ্জ উপজেলার ওই নারী করোনার উপসর্গ নিয়ে ২৫ জুন এ হাসপাতালের করোনার ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছিলেন। রোববার সকালে তিনি মারা যান। এর আগে তার নমুনা পরীক্ষার ফল করোনা নেগেটিভ আসে। রোববার সকাল পৌনে ১০টার দিকে পৌনে দুই ঘণ্টার ব্যবধানে মারা যান আরেক নারী (৬০)। বরিশাল নগরের বাসিন্দা এই বৃদ্ধা করোনার উপসর্গ নিয়ে ২৬ জুন বিকাল সাড়ে ৪টায় এই হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছিলেন। ভর্তির পর তার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছিল। ফল এখনো আসেনি। রোববার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে এ হাসপাতালে মারা যান এক যুবক (৩৫)। বরিশালের উজিরপুর উপজেলার ওই ব্যক্তি ২৫ জুন উপসর্গ নিয়ে এ হাসপাতালে ভর্তির পর নমুনা পরীক্ষায় তার করোনা নেগেটিভ ফল আসে। রোববার রাত ১০টার দিকে মারা যান বরিশালের বাকেরগঞ্জের এক বৃদ্ধ (৭০)। তিনি ১৮ জুন এই হাসপাতালে উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। তার নমুনা পরীক্ষার ফলে করোনা নেগেটিভ আসে। সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় এক বৃদ্ধা (৬২) মারা যান। তিনি পটুয়াখালীর গলাচিপা সদরের বাসিন্দা ছিলেন। তিনি ১৯ জুন করোনা উপসর্গ নিয়ে এ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। এ হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ড এত রোগীর মৃতু্যর বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালক মো. বাকির হোসেন সোমবার দুপুরে বলেন, 'বিভাগের সব জেলার গুরুতর রোগীদের শেষ মুহূর্তে এ হাসপাতালে পাঠানো হয়। দেখা যায়, যেসব রোগী এখানে আসেন, তাদের বেশির ভাগেরই ফুসফুস শক্ত হয়ে যায়। এতে অক্সিজেন দেওয়া হলে এসব রোগীর ফুসফুস আর সক্রিয় হয় না। ফলে এসব রোগী মারা যান। কুমিলস্না : করোনার রোগীদের চিকিৎসার জন্য স্থাপিত কুমিলস্না কোভিড-১৯ হাসপাতালে রোববার সন্ধ্যা ৭টা ২০ মিনিট থেকে রাত ২টা ৪৫ মিনিটের মধ্যে (৭ ঘণ্টা ২৫ মিনিটের ব্যবধানে) আরও ৬ জন মারা গেছেন। তাদের ৬ জন করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। হাসপাতালের পরিচালক মো. মুজিবুর রহমান সোমবার সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, কুমিলস্নার আদর্শ সদর উপজেলার ৪৫ বছরের এক নারী শ্বাসকষ্ট নিয়ে গত ২২ জুন ভর্তি হন। তিনি রোববার সন্ধ্যা ৭টা ২০ মিনিটে মারা যান। একই উপজেলার ৫৫ বছরের এক নারী ২৬ জুন ভর্তি হয়ে রোববার রাত ৯টা ১০ মিনিটে মারা যান। একই উপজেলার ৬০ বছর বয়সি এক বৃদ্ধ রোববার দুপুরে ভর্তি হয়ে রাত ২টায় মারা যান। বরুড়া উপজেলার ৫০ বছরের এক পুরুষ রোববার দুপুরে ভর্তি হয়ে রাত ১২টা ২৮ মিনিটে মারা যান। রোববার চান্দিনা উপজেলার ৬৭ বছরের এক বৃদ্ধ গতকাল দুপুরে ভর্তি হয়ে রাত ১১টা ৪০ মিনিটে মারা যান। একই উপজেলার ৬৭ বছরের এক বৃদ্ধা ২৭ জুন ভর্তি হয়ে গতকাল রাত ২টা ৪৫ মিনিটে মারা যান। হাসপাতালের পরিচালক চিকিৎসক মো. মুজিবুর রহমান বলেন, বর্তমানে কোভিড হাসপাতালে ১০৮ জন রোগী ভর্তি আছে। এর মধ্যে করোনা রোগী ৩১ জন ও উপসর্গের ৭৭ জন। আইসিইউতে ভর্তি আছেন ৯ জন। সোমবার নতুন করে ভর্তি হয়েছেন ২৪ জন। এ হাসপাতালে গত ৩ মে থেকে ২৯ জুন পর্যন্ত ৭১৭ জন ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৪৬৯ জন। এ পর্যন্ত মারা গেছেন ১৩৯ জন। করোনায় ২৫ জন এবং উপসর্গ নিয়ে ১১৪ জন মারা যান। রাজশাহী : জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে রাজশাহীতে তবিবুর রহমান (৫৪) নামে এক সাংবাদিক চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। তিনি স্থানীয় দৈনিক সোনালী সংবাদের চিফ রিপোর্টার ও বাংলাদেশ বেতারের রাজশাহী প্রতিনিধি ছিলেন। তবিবুর রহমান জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে রোববার সন্ধ্যায় নগরের ক্রিশ্চিয়ান মিশন হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখান থেকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠালে কর্তব্যরত চিকিৎসক রাত সোয়া ৯টায় তাকে মৃত ঘোষণা করেন। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক সাইফুল ফেরদৌস বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, জ্বর ও প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট থাকায় তবিবুর রহমানকে রোববার সন্ধ্যায় নগরের ক্রিশ্চিয়ান মিশন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠালে সেখানে তিনি মারা যান। সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জে করোনা উপসর্গ নিয়ে একজনের মৃতু্য হয়েছে। সোমবার সকালে সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। তিনি বলেন, শহরের মিরপুর বিড়ালাকুঠি মহলস্নার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আবুল হোসেন (৮০)। সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলাম হীরা বলেন, বয়োবৃদ্ধ আবুল হোসেন কয়েকদিন ধরে জ্বর ও ঠান্ডাজনিত রোগে ভুগছিলেন। রোববার রাতে তার শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং সোমবার সকালে তিনি মারা যান। মৃত ব্যক্তি ও তার পরিবারের সদস্যদের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা : করোনা উপসর্গ নিয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বদর উদ্দিন (৭০) নামে এক বৃদ্ধের মৃতু্য হয়েছে। সোমবার দুপুরে তার মৃতু্য হয়। বদর উদ্দিন জেলার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা শ্যামপুর গ্রামের মৃত দিদার মন্ডলের ছেলে। চুয়াডাঙ্গা হাসপাতালের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শামীম কবীর জানান, জ্বর, বমি ও শরীরে ব্যথা নিয়ে সকালে হাসপাতালে ভর্তি হন ওই বৃদ্ধা। দুপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জন ডা. এএসএম মারুফ হাসান জানান, করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়ায় বদর উদ্দিনের মরদেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ঝিনাইদহ : কালীগঞ্জে করোনা উপসর্গ নিয়ে মুস্তাক আহমেদ (৫০) নামে এক ব্যক্তি মারা গেছে। রোববার রাত ১০টার দিকে নিজ বাড়িতে তিনি মারা যান। মারা যাওয়া ওই ব্যক্তি দীর্ঘদিন শ্বাসকষ্টে ভুগছিল বলে পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। নিহত মুস্তাক কালীগঞ্জ পৌরসভার হেলাই ইদগাহ পাড়ার মখলেচুর রহমানের ছেলে। স্বাস্থ্য বিভাগ তার নমুনা সংগ্রহ করেছে। কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার শামীমা শিরিন জানান, পৌরসভার হেলাই গ্রামের ৫০ বছরের ওই ব্যক্তি গত রাতে মারা যান। স্থানীয়রা জানান, তার শরীরে করোনা উপসর্গ ছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে মৃত ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। কুষ্টিয়া : কুষ্টিয়া করোনা উপসর্গ নিয়ে সোমবার সকালে বিআরবি গ্রম্নপ অব ইন্ডাস্ট্রিজে কর্মরত এক ব্যক্তি ও রোববার রাতে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় করোনা উপসর্গ নিয়ে আরেক ব্যক্তির মৃতু্য হয়। জানা যায়, কুষ্টিয়া শহরের হরিশংকরপুরের মৃত হুকুম আলীর পুত্র হাবিবুর রহমান (৪০) শুক্রবার শ্বাসকষ্ট ও জ্বর নিয়ে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের ৬নং ওয়ার্ডে ভর্তি হয়। রোববার রাত ৮টায় তিনি মৃতু্যবরণ করেন। তার মৃতু্যর কিছুক্ষণ পর পিসিআর ল্যাবের রিপোর্টে জানা যায়, তিনি করোনা পজিটিভ ছিলেন। এদিকে সোমবার সকালে কুষ্টিয়া বিআরবিতে কর্মরত অবস্থায় প্রধান হিসাবরক্ষক আলী আহম্মেদ লিটন গুরুতর অসুস্থ হয়ে গেলে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে তার মৃতু্য হয়। লিটন চৌড়হাস এলাকার মো. আবুল কাশেম বাবুর ছেলে। তিনি কয়েকদিন ধরে জ্বরে ভুগছিলেন বলে এলাকাবাসী জানায়। নাটোর : নাটোরে করোনা উপসর্গ নিয়ে লোকমান হোসেন নামে ষাটোর্ধ্ব এক ব্যক্তির মৃতু্য হয়েছে। সোমবার সকালে সদর হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃতু্য হয়। লোকমান হোসেন নাটোর সদর উপজেলার চাঁদপুর গ্রামের মৃত সোলেমান হোসেনের ছেলে। তিনি একই উপজেলায় আরমান মোড়ে ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। খবর পেয়ে নাটোর পুলিশ প্রশাসন ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তার বাড়িটি লকডাউন করে দেন। সে সঙ্গে বাড়ির অন্য সদস্যদের নমুনা সংগ্রহ করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। নাটোরের সিভিল সার্জন ডা. কাজী মিজানুর রহমান ও নাটোর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানান, লোকমান হোসেন দীর্ঘদিন ধরে ঢাকায় কাপড়ের ব্যবসা করতেন। কয়েকদিন ধরে তার শারীরিক অসুস্থতা দেখা দিলে গত রোববার তিনি করোনা উপসর্গ নিয়ে তার নাটোরের বাড়িতে চলে আসেন। এরপর তিনি আরও অসুস্থতা বোধ করলে সোমবার সকালে তাকে নাটোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করতে বাড়ি থেকে নিয়ে আসার পথেই তার মৃতু্য হয়।