কোটা বিলুপ্তি বাস্তবায়ন ৪০তম বিসিএস থেকে

প্রকাশ | ০২ জুলাই ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
'কোটা বিলুপ্তি বাস্তবায়ন হবে ৪০তম বিসিএস থেকে। তবে মঙ্গলবার চূড়ান্ত ফল প্রকাশ হওয়া ৩৮তম বিসিএসে নিয়োগে আগের সিদ্ধান্ত বহাল রয়েছে।' এ কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক। বুধবার তিনি বিষয়টি নিশ্চিত করেন। পিএসসির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক বলেন, 'কোটার বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে- তা ৪০তম বিসিএস পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্ট করে উলেস্নখ করেছি। সেখানে বলা হয়েছে যে, ৪০তম বিসিএস পরীক্ষায় কোটার বিষয়ে সরকারের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুসরণ করা হবে। সরকার যদি কোটা বাতিল করে তবে সেটি কার্যকর করা হবে। সেক্ষেত্রে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হবে।' পিএসসি সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ৪০তম বিসিএসের আবেদন গ্রহণ শুরু হয়ে ১৫ নভেম্বর শেষ হয়। ইতোমধ্যে ৪০তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা শেষ হলে তার ফল প্রকাশের পর লিখিত পরীক্ষা শেষ করা হয়েছে। লিখিত পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নের কাজ শুরু করেছে পিএসসি। এই বিসিএসের লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেওয়া প্রায় ২০ হাজার প্রার্থী এখন ফলের অপেক্ষায় আছেন। ৪০তম বিসিএসে মোট এক হাজার ৯০৩ জনকে নিয়োগের সুপারিশ করবে পিএসসি। এ নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটার বিষয়ে সরকারের সর্বশেষ গ্রহণ করা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পিএসসির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক বলেন, 'বিসিএস পরীক্ষায় কোটা দেওয়া বা বাতিলের ক্ষমতা পিএসসির হাতে না, এটি সম্পূর্ণ সরকারের সিদ্ধান্ত। সরকারিভাবে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় আমরা তা অনুসরণ করে ফলাফল প্রকাশ করে থাকি। তবে কোটা বাতিল হওয়ায় আগের চাইতে অনেক বেশি মেধাবি বিসিএস পরীক্ষায় সুযোগ পাবে।' জানা গেছে, ৪০তম বিসিএসের মাধ্যমে প্রশাসন ক্যাডারে ২০০, পুলিশে ৭২, পররাষ্ট্রে ২৫, কর ২৪, শুল্ক আবগারিতে ৩২ ও শিক্ষা ক্যাডারে প্রায় ৮০০ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। তবে এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। ৩০ জুন ৩৮তম বিসিএস পরীক্ষার চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। এতে বিভিন্ন ক্যাডারে দুই হাজার ২০৪ জনকে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে। এর আগে ২০১৯ সালের ৩০ এপ্রিল চিকিৎসক নিয়োগে ৩৯তম বিসিএসের (স্পেশাল) ফল প্রকাশ ও নিয়োগ কার্যক্রম শেষ হয় বিদ্যমান কোটা পদ্ধতিতেই। বেশ কয়েকবার এই কোটা ব্যবস্থার পরিবর্তন করে সর্বশেষ ৫৫ শতাংশের কোটা করা হয়। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ, জেলাভিত্তিক কোটা ১০ শতাংশ, নারীদের জন্য ১০ শতাংশ এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য ৫ শতাংশ কোটা ছিল। পরে ১ শতাংশ কোটা প্রতিবন্ধীদের জন্যও নির্ধারণ করা হয়। তবে বিভিন্ন বিসিএসের ফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মেধাবীরা উত্তীর্ণ হয়েও একদিকে চাকরি পাননি, আর অন্যদিকে শত শত পদ শূন্য রয়ে গেছে। পিএসসির প্রকাশিত ফলাফল অনুযায়ী, কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া যাওয়ায় ২৮ থেকে ৩৭তম বিসিএসের বিভিন্ন ক্যাডারে অন্তত ছয় হাজার পদ খালি ছিল। এমনকি, শুধু কোটার প্রার্থীদের নিয়োগের জন্য ৩২তম বিশেষ বিসিএস নেওয়া হলেও ওই বিসিএসেও মুক্তিযোদ্ধা কোটার ৮১৭টি, নারী ১০টি ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ২৯৮টিসহ মোট এক হাজার ১২৫টি পদ শূন্য রাখতে হয়। শুধু বিসিএস নয়, রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকসহ অন্যান্য নিয়োগেও একই অবস্থা হয়। এসব কারণে কোটা ব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে চাকরি প্রত্যাশী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন করে। এপ্রিলে সেই আন্দোলন দেশব্যাপী ব্যাপকতা লাভ করে। আস্তে আস্তে সেটি বাংলাদেশের প্রায় সবকটি সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ছড়িয়ে পড়ে এবং শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেন। এরপর পুলিশ কোটা সংস্কার আন্দোলন কর্মীদের ধরপাকড় শুরু করে। তখন দেশবরেণ্য বিভিন্ন লেখক, শিক্ষক কোটা সংস্কার আন্দোলনকর্মীদের পাশে দাঁড়ান। এরই ধারাবাহিকতায় প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে ৪৬ বছর ধরে চলা কোটা ব্যবস্থা বাতিল ঘোষণা করে সরকার।