গতানুগতিক বাজেট প্রত্যাখ্যান বিএনপির

প্রকাশ | ০৩ জুলাই ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে স্বাস্থ্য খাতকে প্রাধান্য না দিয়ে নতুন অর্থবছরের জন্য একটি গতানুগতিক ও অবাস্তবায়নযোগ্য বাজেট জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে বলে তা প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি। বৃহস্পতিবার দুপুরে উত্তরার বাসা থেকে ইন্টারনেটে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ প্রতিক্রিয়া জানান। তিনি বলেন, 'এই বাজেটটা কোনোমতেই বাস্তবায়নযোগ্য নয়। অর্থাৎ এত আয় তারা কোত্থেকে করবেন সেটা তারা সুনির্দিষ্টভাবে বলেননি। রাজস্ব আয় যেটা বলেছেন, এটা একেবারেই সম্ভব নয়। কারণ গত বছরের সব অভিজ্ঞতায় দেখা যায় যে, ৫০ ভাগও তারা আদায় করতে পারেননি। এই বাজেট করোনাকালীন সময়ের বাজেট নয়। এটা হচ্ছে একটা প্রোটোটাইপ বু্যরোক্রেটিভ একটা ফরমেটে ফেলে দিয়ে তারা এই বাজেট তৈরি করেছে। এই বাজেট কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা এই বাজেট ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি।' মির্জা ফখরুল বলেন, মহামারির মধ্যে স্বাস্থ্য ও মানুষের জীবন-জীবিকা রক্ষাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে এখন আপৎকালীন একটা বাজেট সরকারের তৈরি করা উচিত ছিল। বাজেটে যেসব কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে তা সার্বজনীন নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, 'কর্মসূচিগুলো কিছু নির্দিষ্ট দল-গোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে গৃহীত। এভাবে মূলত রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় গোষ্ঠীতন্ত্র লালন করা হচ্ছে।' মির্জা ফখরুল বলেন, মহামারির কারণে অর্থনীতিতে দীর্ঘকাল যে মন্দা থাকবে তাতে মানুষের আয় ও অভ্যন্তরীণ ভোগ উলেস্নখযোগ্যভাবে কমে গিয়ে রাজস্ব আয়ে চরম ঘাটতি তৈরি হবে। 'এই ঘাটতি গিয়ে ঠেকবে প্রায় ৪ লাখ কোটি টাকায়। ঘাটতি মেটানোর জন্য সরকারের মূল পদক্ষেপ হবে ঋণ করা। বাজেটেই উলেস্নখ করা হয়েছে ব্যাংক থেকে নেওয়া হবে ৮৫ হাজার কোটি টাকা যেটা শেষ পর্যন্ত দ্বিগুণে গিয়ে দাঁড়াবে। ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের এই অকল্পনীয় পরিমাণ টাকা ধার করার ফলে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ একেবারে শূণ্যের কোঠায় চলে আসবে যা, কর্মসংস্থানের পথ একেবারেই বন্ধ করে দেবে।' অর্থনীতির সাবেক এই ছাত্র মনে করেন, তখন পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারকে বিপুল পরিমাণ টাকা ছাপাতে হবে। তার ফলে দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি তৈরি হয়ে সামষ্টিক অর্থনীতি প্রচন্ড দুর্বল হবে, যার ফল হবে মারাত্মক। বাজেট স্বাস্থ্য খাত ও ?কৃষি খাত কম বরাদ্দ এবং মেগা প্রকল্পগুলোতে বরাদ্দ দেওয়ার কঠোর সমালোচনা করেন বিএনপি মহাসচিব। এই বাজেট প্রত্যাখ্যান করে দল থেকে কোনো কর্মসূচি দেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'প্রতিবাদ কর্মসূচি নির্ভর করে সময় ও কালের ওপরে। এখন যে সময়টা চলছে এ সময়ে কোনো কর্মসূচি দেওয়াটা খুবই কঠিন। আমরা তো আমাদের বক্তব্য বলে যাচ্ছি। আমাদের নেতা-কর্মী তাদেরকে বাঁচানোটা আমাদের দায়িত্ব। ইতোমধ্যে আমাদের প্রায় ৭৬ জনের বেশি নেতা-কর্মী মৃতু্যবরণ করেছেন। আমাদের অসংখ্য কর্মী আক্রান্ত হয়েছেন। এমন কোনো কর্মসূচি আমরা করব না সেখানে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।' বাজেট পাসের পরদিন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল লন্ডনে যাওয়ার সমালোচনাও করে তিনি বলেন, পরীক্ষার কিটের অভাবে, হাসপাতালে অক্সিজেনের অভাবে দেশের মানুষ মারা যাচ্ছে। আর অর্থমন্ত্রী গেলেন বিদেশে- এটা জনগণের সঙ্গে মশকরা ছাড়া আর কিছু না। মোবাইল ফোন সেবার ওপর কর না কমানোয় এবং করোনাভারাইস সংক্রমণ শনাক্তকরণে পরীক্ষায় ফি নির্ধারণের সমালোচনাও করেন তিনি। ফখরুল বলেন, 'উদ্দেশ্য একটাই টেস্টকে নিরুৎসাহিত করা। এটা (ফি) মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো।'