অনলাইনে পশুর হাটের প্রস্তুতি ডিএনসিসির

প্রকাশ | ০৪ জুলাই ২০২০, ০০:০০

ফয়সাল খান
প্রথম দফায় বেশ কয়েকটি অস্থায়ী কোরবানির পশুর হাটের ইজারা চূড়ান্ত করেও তা থেকে সরে আসার চিন্তা করছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি স্থানে অস্থায়ী হাটের ইজারা বাতিল করার ঘোষণা দিয়েছেন উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম। এছাড়া অনলাইনে কোরবানির পশু কেনাবেচায় জোর দিচ্ছে সংস্থাটি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, চলমান বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় হাট না বসানোর চিন্তা চলছে। যেসব এলাকায় বসতি কম এমন এলাকা নির্ধারণ করা হচ্ছে। আশপাশের দুই-তিনটি এলাকা মিলিয়ে এক একটি হাট করা হতে পারে। এরই মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বেশ কয়েকটি স্থানে অস্থায়ী কোরবানির পশুর হাট না বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে গণমাধ্যমে পাঠানো এক ভিডিও বার্তায় সংস্থাটির মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, হাট ইজারা দিয়ে হয়তো কোটি টাকা আয় করা যাবে। কিন্তু টাকার চেয়ে মানুষের জীবনের মূল্য অনেক বেশি। তাই আমি ঢাকার বাইরের দিকে তুলনামূলক কম ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় হাট বসানোর জন্য নির্দেশ দিয়েছি, যেন ব্যবসায়ীরা পশু বিক্রিও করতে পারেন, আবার জনস্বাস্থ্যও বিবেচনায় রাখা যায়। ডিএনসিসি মেয়র বলেন, তেজগাঁও, আফতাবনগর, মিরপুরের ইস্টার্ন হাউজিং ও ভাসানটেক এলাকায় বড় হাট বসে প্রতিবার। সেখান থেকে অনেক টাকা আয়ও হতো। কিন্তু এ বছর করোনা বিবেচনায় এলাকাবাসীর স্বাস্থ্যের কথা ভেবে এসব স্থানে হাট বসতে দেব না। উত্তরা ১০, ১১ ও ১২ নম্বর সেক্টরে বড় হাট বসত। গত বছর এই হাটের ইজারা ছিল ৪ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। কিন্তু এ বছর এখানে হাট বসতে দেব না। উত্তরাবাসীর জন্য উত্তরা-১৭ নম্বর সেক্টরের বৃন্দাবন এলাকায় বড় হাট বসবে। তারা সেখান থেকে পশু কিনতে পারবেন। এই এলাকায় মানুষের বসবাসও কম। মোহাম্মদপুরের বাসিন্দাদের জন্য বসিলায় একটা হাট দেওয়া হবে। এছাড়া হাট থাকবে পূর্বাচল ব্রিজ সংলগ্ন মস্তুল ডুমনী ও ১০০ ফুট সড়কের সাইদ নগর এলাকায়। গাবতলীতে স্থায়ী পশুর হাট থাকবে উলেস্নখ করে তিনি আরও বলেন, 'যেখানেই হাট বসুক না কেন, সব হাটেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। আমি অনুরোধ করব, শারীরিকভাবে দুর্বল, অসুস্থ ব্যক্তি, বয়স্ক মানুষ ও শিশুরা যেন পশুর হাটে না আসে এবার। ইজারদারদের বলা থাকবে, যেন পশুর হাটে নূ্যনতম ৫ ফুট দূরে দূরে গরু রাখার ব্যবস্থা করে তারা। হাটে পর্যাপ্ত বেসিন ও হাত ধোয়ার ব্যবস্থা থাকতে হবে, জনগণকে সচেতন করার লক্ষ্যে একটু পরপর মাইকিং থাকতে হবে। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে সব হাটে ম্যজিস্ট্রেট টহল থাকবে। ইজারাদারদের সতর্ক থাকতে হবে, নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। তা না করলে ইজারা বাতিল করা হবে।' ডিএনসিসির একটি সূত্র বলছে, বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অস্থায়ী পশুর হাট বন্ধ করে দেওয়ায় ডিজিটাল পস্নাটফরমে পশু বেচাকেনার চিন্তা করছে সংস্থাটি। এ নিয়ে ডিএনসিসির সঙ্গে সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, এটুআই, ইক্যাব, এবং আই-ল্যাব যৌথভাবে কাজ শুরু করেছে। তাছাড়া ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ইক্যাবের সহযোগিতায় পশু এবং পশুর মাংসের হোম ডেলিভারি দেওয়ার প্রথমিক পরিকল্পনা করছে ডিএনসিসি। এদিকে, করোনা পরিস্থিতিতে ঘণবসতি ও রেড জোন এলাকায় না বসানো বা স্থানান্তর নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। তবে সংস্থাটির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন জানিয়েছেন, এখনো হাট স্থানান্তরের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না আসলেও এ নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে। আগামী কর্মদিবসে এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে। করোনাভাইরাসের কারণে অস্থায়ী কোরবানির পশুর হাট বসানোর ক্ষেত্রে জনসমাগম ও স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন বলে জানান তিনি। প্রসঙ্গত, আসন্ন ঈদুল আজহায় পশু কেনাবেচার জন্য ঢাকায় স্থায়ী ও অস্থায়ী মোট ২৬টি পশুর হাট বসানোর সিদ্ধান্ত নেয় দুই সিটি করপোরেশন। এর মধ্যে ঢাকা উত্তরে ১০টি ও দক্ষিণে ১৬টি হাট বসানোর কথা ছিল। সে লক্ষ্যে ৪টি করে মোট ৮টি অস্থায়ী পশুর হাটের ইজারাও সম্পন্ন করেছে সংস্থা দুটি।