ঈদে ঘুরে দাঁড়ানোর আশায় ব্যবসায়ীরা

প্রকাশ | ০৫ জুলাই ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
দীর্ঘদিনের সাধারণ ছুটির পর সীমিত পরিসরে রাজধানীর বিপণিবিতানগুলো খুললেও ক্রেতা নেই -যাযাদি
করোনা পরিস্থিতির মুখে ঈদুল ফিতরে ব্যবসায় ব্যাপক ধস হলেও আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে নতুন করে আশায় বুক বাঁধছেন ব্যবসায়ীরা। দীর্ঘদিনের সাধারণ ছুটির পর সীমিত পরিসরে সবকিছু খুলে দেওয়ায় ধীরে ধীরে মানুষ নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে উঠছেন। সব মিলিয়ে ঈদুল আজহায় বিক্রিবাট্টা হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী ব্যবসায়ীরা। চাঁদ দেখাসাপেক্ষে আগামী ৩১ জুলাই কিংবা ১ আগস্ট ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে। এ উৎসব সামনে রেখে গত ৩০ জুন সরকার পূর্বের সময় বিকাল ৪টার পরিবর্তে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত বিপণিবিতান খোলা রাখা যাবে বলে জানায়। এর আগে করোনা প্রতিরোধের লক্ষ্যে গত ২৬ মার্চ থেকে দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। এরপর ঈদুল ফিতরের আগে আগে ১০ মে থেকে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মানার শর্তে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত শপিংমল ও বিপণিবিতান খোলার অনুমতি দেয় সরকার; কিন্তু সে সময়ও করোনার আশঙ্কায় বিক্রি জমে না ওঠায় বেশিরভাগ বিপণিবিতান বন্ধ ছিল। সে সময় রাজধানীর কেনাকাটার সবচেয়ে বড় স্থান নিউ মার্কেট ও এর আশপাশের বিভিন্ন বিপণিবিতানও বন্ধ রাখা হয়। সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটি শেষে গত ৩১ মে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পুনরায় চালু হয় নিউ মার্কেট। নিউ মার্কেটের চারটি গেটের মধ্যে তিনটি খুলে দেওয়া হয় ক্রেতাদের জন্য। কিন্তু সারাবছরই ভিড় জমে থাকা এসব বিপণিবিতান করোনা আশঙ্কায় এখনো ক্রেতাশূন্য। নিউ মার্কেট, চাঁদনী চক, গাউছিয়া, চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট সবখানেই একই দৃশ্য। কিন্তু আসন্ন ঈদুল আজহা ঘিরে এ পরিস্থিতিতে অনেকটাই কেটে যাবে বলে আশা করছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে এ উৎসব ঘিরে নতুন করে প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। রোজার ঈদ ঘিরে আনা নতুন আনা পোশাকগুলোই কোরবানির ঈদে বিক্রির পরিকল্পনা তাদের। শুক্রবার বর্তমান পরিস্থিতির ব্যাপারে নিউ মার্কেটের সায়েম ফ্যাশনের স্বত্বাধিকারী আসিফ মাহমুদ জানান, নিউ মার্কেট এখনো ফাঁকা। আমরা ক্রেতাদের জন্য অপেক্ষা করছি। তবে এখনো ক্রেতার দেখা পাওয়াটা বেশ দুষ্কর। ঈদুল ফিতরে যারা নতুন পোশাক কেনেননি, তারা ঈদুল আজহায় কিনবেন, আমরা এখন এ প্রত্যাশায় আছি। দেখা যাক কী হয়। নিউ মার্কেট দোকান মালিক সমিতির সহ-সভাপতি আশরাফ উদ্দিন বলেন, নিউ মার্কেট বা এর আশপাশের বিপণিবিতানের মূল ক্রেতারা মা-বোনেরা। তারা মূলত বিকালের পর মার্কেটে আসেন। কিন্তু এর আগ পর্যন্ত বিকাল ৪টায় মার্কেট বন্ধ করে দেওয়ায় আমাদের সেই ক্রেতারা আসেননি। এখন সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত মার্কেট খোলা, তাতেও খুব একটা লাভ হবে না। কারণ ৭টায় মাগরিবের আজান দেয়। মার্কেট বন্ধ করার সময় রাত ৮টা পর্যন্ত করলে ভালো হতো। ঈদের প্রস্তুতির বিষয়ে তিনি বলেন, প্রত্যেকে দোকানদারেরই কিন্তু রোজার ঈদে আনা পণ্যের লট থেকে গেছে। সেগুলোই এবারের ঈদে বিক্রি করার পরিকল্পনা করছেন তারা। আমরা আশাবাদী যে, আসন্ন কোরবানির ঈদ ঘিরে ব্যবসায়ীরা কিছুটা হলেও লাভের মুখ দেখবেন। এদিকে কিছু কিছু ব্যবসায়ী রোজার ঈদের পণ্যের পাশাপাশি কোরবানির ঈদ মাথায় রেখে নতুন ডিজাইনের পোশাকও আনছেন। আজিজ সুপার মার্কেটের ফ্যাশন হাউজ 'ঢাকঢোল'র কর্ণধার আব্দুলস্নাহ রায়হান বলেন, রোজার ঈদে আমাদের মার্কেট খোলা ছিল। কিছু বিক্রিবাট্টা হয়েছে। কোরবানির ঈদে সেটা বাড়বে বলে আশা করছি। অন্যদিকে অনেকের ধারণা কোরবানির ঈদেও বিক্রি তেমন বাড়বে না। বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিনও এরকমই আভাস দেন। তিনি বলেন, আগামী ঈদেও ব্যবসার কোনো সম্ভাবনা নেই। অতি প্রয়োজন ছাড়া কেউই এখন ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। রাস্তায় যে মানুষ দেখছেন, সবাই পেটের দায়ে বের হয়েছেন। শখ করে কেনাকাটা করার মানুষের সংখ্যা ৫ শতাংশও হবে না। সুতরাং সামনের উৎসব ঘিরেও লাভ বা ব্যবসা কোনোটাই হবে না। বরং কোরবানির পশুর হাটের মাধ্যমে নতুন করে করোনাভাইরাস ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে।