করোনাযোদ্ধা সাধনার জীবন থেমে গেল দুর্ঘটনায়

প্রকাশ | ০৮ জুলাই ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
সন্দেহভাজন করোনা রোগীদের নমুনা সংগ্রহ করতেন সাধনা মিত্র (৫০)। নমুনা সংগ্রহের একপর্যায়ে নিজেই করোনায় সংক্রমিত হন। সুস্থ হয়ে তিনি আবার ফিরে যান নমুনা সংগ্রহের কাজে। দৃঢ় মনোবল এবং যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে করোনাকে জয় করলেও সড়ক দুর্ঘটনার কাছে হেরে গেছেন তিনি। প্রায় নয় ৭ \হঘণ্টা মৃতু্যর সঙ্গে লড়ে অবশেষে হার মেনেছেন সোমবার রাত পৌনে ১২টার দিকে খুলনার একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। সাধনা মিত্র যশোরের মনিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ইপিআই) পদে কর্মরত ছিলেন। তিনি স্বামী, দুই মেয়ে ও এক ছেলে রেখে গেছেন। মনিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শুভ্রা রানী দেবনাথ বলেন, সোমবার বিকেলে সাধনা মিত্র একটি জরুরি কাজে স্বাস্থ্য সহকারী জাহিদুল ইসলামের মোটরসাইকেলে করে যশোর-চুকনগর আঞ্চলিক মহাসড়ক দিয়ে কেশবপুর যাচ্ছিলেন। বেলা সোয়া তিনটার দিকে উপজেলার ছাতিয়ানতলা এলাকায় পৌঁছালে মোটরসাইকেলের চাকার সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে তিনি মহাসড়কের ওপর পড়ে যান। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। সঙ্গে সঙ্গে তাকে কেশবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে ভর্তি করা হয়। কিন্তু অবস্থার অবনতি হওয়ায় পরে তাকে খুলনার বেসরকারি গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাত পৌনে ১২টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেখানে তিনি মারা যান। শুভ্রা রানী দেবনাথ আরও বলেন, সাধনা খুব ভালো স্বাস্থ্যকর্মী ছিলেন। তিনি একের পর এক উপজেলার সন্দেহভাজন করোনা রোগীদের নমুনা সংগ্রহ করেছেন। এক সময় নিজেই কোভিড-১৯ আক্রান্ত হন। যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে করোনা জয় করেছেন। পরে তিনি আবার নমুনা সংগ্রহের কাজ শুরু করেন। তার মৃতু্যতে অনেক ক্ষতি হয়ে গেল। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্স সূত্র জানায়, মনিরামপুরে নমুনা সংগ্রহ শুরু হয় গত ২ এপ্রিল থেকে। প্রথম দিন থেকেই নমুনা সংগ্রহ করেন সাধনা মিত্র। এ পর্যন্ত তিনি প্রায় ১০০ জনের নমুনা সংগ্রহ করেছেন। নমুনা সংগ্রহের একপর্যায়ে তাঁর শ্বাসকষ্ট, জ্বর ও গলাব্যথা হয়। ২৭ এপ্রিল তিনি নিজের নমুনা সংগ্রহ করলেন, সঙ্গে আরও ছয় স্বাস্থ্যকর্মীর। ২৯ এপ্রিল নমুনা পরীক্ষার ফলাফল এলো। তাতে তিনিসহ চারজনই করোনা পজিটিভ। এরপর তিনি বাসায় আইসোলেশনে চলে যান। আইসোলেশনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছেন। এরপর দুবার তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়। দুবারই ফল আসে নেগেটিভ। গত ১৪ মে তিনি সুস্থতার ছাড়পত্র পান। এরপর নিয়ম মেনে বাসায় কোয়ারেন্টিনে (সঙ্গ নিরোধ) থেকে আবার কাজে নেমে পড়েন তিনি। গত ১ জুন প্রথম আলোয় 'করোনা জয়ী সাধনা আবার নমুনা সংগ্রহের কাজে' শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। সে সময় তিনি বলেছিলেন, 'যত দিন করোনাভাইরাস থাকবে, ততদিন আমি এই সেবা দিয়ে যাব।'