কুষ্টিয়ার বিআরবিতে করোনার বিস্ফোরণ, কর্তৃপক্ষ উদাসীন

প্রকাশ | ০৯ জুলাই ২০২০, ০০:০০

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
কুষ্টিয়ার বিসিক শিল্পনগরীতে অবস্থিত বিআরবি গ্রম্নপ অব ইন্ডাস্ট্রিজে গত সাতদিনে করোনায় তিন কর্মকর্তার মৃতু্য হলেও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জীবন রক্ষায় উদাসীন কর্তৃপক্ষ। বিআরবিতে কর্মরত শতাধিক ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হলেও চিকিৎসাসেবা পাচ্ছে না প্রতিষ্ঠানটির বিশেষায়িত হাসপাতালে। আক্রান্তরা নিজ বাড়িতে নিজের উদ্যোগে নিচ্ছেন চিকিৎসাসেবা। এমনকি চাকরি হারানোর ভয়ে কর্মরতরা গোপন করছেন অসুস্থতার কথা। জানা গেছে, গত ২৯ জুন বিআরবিতে কর্মরত অবস্থায় মারা যান হিসাব বিভাগের সহ-ব্যবস্থাপক আলী আহমদ লিটন। অফিসে হাজিরা দেওয়ার পর অফিসের কাজে বাইরে রওয়ানা হলে গাড়িতেই মৃতু্যর কোলে ঢলে পড়েন তিনি। ২ জুলাই করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যান স্টোর অফিসার ফজলুল হক এবং ৫ জুলাই কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃতু্যবরণ করেন আইটি অফিসার আমজাদ হোসেন জুয়েল। মারা গেছেন কর্মকর্তা লিটনের মাও। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী জানিয়েছেন, বিআরবিতে কর্মরত শতকরা ২০ ভাগ শ্রমিক-কর্মচারী করোনায় আক্রান্ত। সুস্থ হওয়ার পর চাকরিতে যোগদান করতে না দেওয়ায় এখন যারা উপসর্গে ভুগছেন তারা আর পরীক্ষা করাচ্ছেন না। বাড়িতে বসেই বিভিন্ন ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধ খাচ্ছেন আর অফিস করছেন। সূত্র জানিয়েছে, গত ২৪ ফেব্রম্নয়ারি একসঙ্গে চাকরিচু্যত করা হয়েছে ২৯ জনকে। তারা তাদের জামানতের টাকার জন্য আবেদন করে আজও ফেরত পাননি টাকা। জামানতের টাকা পাওয়ার জন্য চাপাচাপি করলে চুরির মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠানোর ঘটনা ঘটেছে। কুষ্টিয়া থানার অর্ধেক চুরি মামলার বাদী বিআরবি। ফলে কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী অসুস্থ থাকার পরেও তাদের জামানতের টাকা এবং চাকরি হারানোর ভয়ে মুখ বন্ধ করে কাজ করে যাচ্ছেন। কুষ্টিয়ার পিসিআর ল্যাবের তথ্যমতে, বিআরবির ডেপুটি ম্যানেজার মহিউদ্দিন ও তুহিনুল আলম, কোয়ালিটি কন্ট্রোল অফিসার আব্দুল জলিল, আইটি বিভাগের এজিএম মাহাফুজ আলী জনি, ইঞ্জিনিয়ার সালাউদ্দিন, পার্সেস অফিসার কাওসার, হিসাব রক্ষণ অফিসার রাসেল, হিসাব রক্ষণ অফিসার সালাউদ্দিন, সিনিয়র এপিআরও কামরুজ্জামান, হেলপার শারমিন খাতুন, রেজাউল, হিসাব রক্ষক মজিদ, সহ-হিসাব রক্ষক গৌতম, শ্রমিক আশরাফুল, কারপেন্টার মাসুদ রানা প্রমুখ করোনা পজিটিভ হয়ে বাড়িতে আছেন। আর যারা চাকরি হারানোর ভয় পাচ্ছেন তারা করোনা উপসর্গ থাকা সত্ত্বেও পরীক্ষা করাতে যাচ্ছেন না। যারা আক্রান্ত হয়েছেন তাদের বাড়িতে এখন পর্যন্ত বিআরবির পক্ষ থেকে কোনো খোঁজ-খবর নেওয়া হয়নি বলে জানা গেছে। এদিকে, তাদের চিকিৎসার জন্যও বিআরবির পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। করোনা আক্রান্ত এক কর্মকর্তা বলেন, বিআরবির বিশেষায়িত হাসপাতাল রয়েছে কিন্তু তাদের চিকিৎসা না দিয়ে বাড়িতে আইসোলেশনে রেখে মৃতু্যর মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। কুষ্টিয়া সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জোবায়ের হোসেন চৌধুরী বলেন, শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিআরবি একটি বড় প্রতিষ্ঠান। সরকারি সিদ্ধান্ত হলে লকডাউনের ব্যবস্থা করা হবে। এ ব্যাপারে বিআরবি গ্রম্নপের চেয়ারম্যান মজিবর রহমানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, 'যারা মারা গেছেন তারা কেউ কর্মরত অবস্থায় মারা যাননি। আর যারা আক্রান্ত তাদের হোম আইসোলেশনে পাঠানো হয়েছে।'