২৫ মণের টাইগার নিয়ে দুশ্চিন্তায় মালিক

প্রকাশ | ১০ জুলাই ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
মালিকের পরিচর্যায় ২৫ মণ ওজনের টাইগার -যাযাদি
আদর করে নাম রাখা হয়েছে টাইগার, বয়স তিন বছর চার মাস। ছয় ফুট উচ্চতার টাইগারের গায়ের চামড়ায় সাদা-কালোর এক অনন্য মিশেল। এমনিতে খুব শান্ত প্রকৃতির, কিন্তু মাঝে-মধ্যেই রেগে গর্জে ওঠে টাইগার। তবে কাউকে আক্রমণ করে না। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলায় টাইগার নামের এক ষাঁড় গরুর কথা এখন সবার মুখে-মুখে। করোনাভাইরাসের এই মহাদুর্যোগেও টাইগারের খাতির-যত্নের কোনো কমতি নেই। ২৫ মণ ওজনের টাইগারকে প্রতিদিন তিন বেলা শ্যাম্পু দিয়ে গোসল করানো হয়। লোকমুখে আদুরে এই টাইগারের কথা জানতে পেরে এখন প্রতিদিনই খামারে এসে ভিড় করছেন উৎসুক জনতা। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে টাইগারকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তার মনিব আব্দুল কাইয়ূম। এ বছর কোরবানির পশুর হাটে টাইগারকে তুলতে পারবেন কি-না সেটি নিয়ে শঙ্কা কাটছে না তার। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চার বছর আগে আখাউড়া উপজেলার মোগড়া ইউনিয়নের কুসুমবাড়ি এলাকায় ২২টি গরু নিয়ে খামার করেন স্থানীয় ধাতুরপহেলা গ্রামের বাসিন্দা মিন্টু মিয়া। এখন তার খামারে ৪৬টি গরু রয়েছে। এর মধ্যে ৩৭টি গাভী ও ৯টি ষাঁড়। মিন্টু মিয়া প্রবাসে থাকায় তার ভাই আব্দুল কাইয়ূমই খামারের দেখাশোনা করেন। তিন বছর চার মাস আগে খামারে একটি অস্ট্রেলিয়ান জাতের গাভী টাইগারের জন্ম দেয়। জন্মের সময় বাছুর টাইগারের ওজন ছিল ৩৫ কেজি। এরপর কোরবানির পশুর হাটে বিক্রির উদ্দেশ্যে শুরু হয় টাইগারের পরিচর্যা। জন্মের পর থেকেই টাইগারকে দেওয়া হয় বাড়তি যত্ন। প্রতিদিন তিনবেলা শ্যাম্পু দিয়ে গোলস করানোর পর পরম যত্নে টাইগারকে খাবার খাওয়ান খামারের কর্মচারীরা। খড়, গমের ভুসি, ভুট্টা, আটা, ছোলা, নেপিয়ার ঘাসসহ বিভিন্ন ধরনের দানাদার খাবার খাওয়ানো হয় টাইগারকে। এখন পর্যন্ত টাইগারের পরিচর্যায় খরচ হয়েছে আনুমানিক আড়াই লাখ টাকা। জন্মের পর থেকেই টাইগারের পরিচর্যা করছেন খামারের কর্মচারী এরশাদ মিয়া। তিনি জানান, প্রতিদিন সকাল ৮টায় টাইগারকে গোসল করানো হয়। গোসলের ১০ মিনিট পর খাবার দেওয়া হয়। এরপর আবার দুপুর ২টায় গোসল করিয়ে খাবার দেওয়া হয়। সর্বশেষ রাত ৮টায় আবারও গোসল করোনার পর খাবার দেওয়া হয়। প্রতিদিন টাইগারকে বিভিন্ন ধরনের প্রায় ৫০ কেজি খাবার খাওয়ানো হয়। করোনাভাইরাসের প্রকোপ না থাকলে ঢাকা অথবা চট্টগ্রামের বড় পশুর হাটে টাইগারের দাম অন্তত ১০ লাখ টাকা হতো বলে জানিয়েছেন খামারি কাইয়ূম। কিন্তু এখন এত দামে বিক্রির জন্য বড় পশুর হাটগুলোতে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয় বলে দাম ধরা হয়েছে ছয় লাখ ৬০ হাজার টাকা। কিন্তু এ দামেও টাইগার বিক্রি হবে কি-না সেটি নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন খামারি। এছাড়া টাইগারকে হাটে তোলা নিয়েও সংশয় কাজ করছে খামারি কাইয়ূমের মনে। এ বছর পশুর হাটে টাইগারসহ ছয়টি ষাঁড় গরু হাটে বিক্রি করার পরিকল্পনা ছিল খামারি কাইয়ূমের। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে এখন সব পরিকল্পনা ভেস্তে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। খামারি আবদুল কাইয়ূম বলেন, সম্পূর্ণ প্রাকৃতিকভাবে টাইগার বেড়ে উঠেছে। আমরা মোটাতাজাকরণের জন্য কোনো ওষুধ খাওয়াইনি। প্রতিদিনই বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষজন এসে ভিড় করছেন টাইগারকে এক নজর দেখার জন্য। যদি করোনাভাইরাসের প্রকোপ না থাকত, তাহলে টাইগারকে ঢাকা অথবা চট্টগ্রামের বড় পশুর হাটগুলোতে নিয়ে যেতাম। সেখানে টাইগার অন্তত ১০ লাখ টাকায় বিক্রি হতো। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে সবাই সমস্যায় আছেন, সেজন্য আমরা টাইগারের দাম অনেক কম ধরেছি। কিন্তু এরপরও টাইটাগরকে হাটে তুলতে পারব কি-না সেটি নিয়ে চিন্তায় আছি। এ ব্যাপারে আখাউড়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. কামাল বাশার বলেন, স্বাভাবিক খাবারেই টাইটগার বেড়ে উঠেছে। আমরা নিয়মিত টাইগারের পরিচর্যা সম্পর্কে খামারিকে পরামর্শ দিয়েছি। পাশাপাশি টাইগারের পরিচর্যাকারীকে প্রশিক্ষণও দিয়েছি।