বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদকে সামনে রেখে সক্রিয় জাল নোট প্রতারক চক্র

যাযাদি রিপোর্ট
  ১২ জুলাই ২০২০, ০০:০০
আপডেট  : ১২ জুলাই ২০২০, ০৭:১৮

আসছে ঈদুল আজহা। ধর্মীয় এ উৎসবকে সামনে রেখে রাজধানীসহ সারাদেশে কোরবানির পশুহাটের আয়োজন চলছে। প্রস্তুত হচ্ছেন ব্যাপারীরা। অন্যদিকে সক্রিয় একশ্রেণির প্রতারক চক্র। বাজারে জালনোট ছড়িয়ে হরিলুট করতে যেন সক্রিয় হয়ে উঠছে বেশকিছু চক্রের সদস্যরা।

লোভ দেখিয়ে ফাঁদে ফেলে লোপাট চালাতে পশুরহাটের ব্যাপারীরা এই চক্রের প্রধান টার্গেট। দেশব্যাপী এই চক্রের শক্তিশালী নেটওয়ার্ক রয়েছে। জালনোট বাজারে ছড়িয়ে দিতে বেছে নিচ্ছেন নানা কৌশল। তবে এসব চক্রের অপতৎপরতা নিষ্ক্রিয় করতে ইতোমধ্যেই গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী

বাহিনী কর্মকর্তারা জানায়, অতীতেও জালনোট প্রস্তুতকারী চক্রের মূলহোতাসহ অসংখ্য সদস্যকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু ৭-৮ মাস বা বছর খানেক পর তারা কারাগার থেকে জামিনে বের হয়ে পুরনো পেশায় ফিরে যাচ্ছেন। কারাগার থেকে বের হওয়ার পরপর পুরনো সব সঙ্গী ও সহযোগীদের নিয়ে স্থান পাল্টে আবার শুরু করছে জালনোট তৈরির কারবার। বিভিন্ন উৎসবকে তারা টার্গেট করে বাজারে জালনোট ছাড়তে সক্রিয় হয়ে ওঠে।

তবে জালনোট চক্রের যেসব সদস্য জামিনে বের হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে জালনোট প্রস্তুতের অভিযোগ বা তথ্য রয়েছে তাদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে। এছাড়াও দেশব্যাপী পশুরহাটগুলোতে জালনোট বিস্তার রোধে এবং বাজার থেকে জালনোট উদ্ধারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছে। সেই সঙ্গে পশুরহাটগুলোতে ব্যাপারী ও ক্রেতা-বিক্রেতা এবং অন্য ব্যবসায়ীদের লেনদেনের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে অনুরোধ জানিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য বিভাগের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার (জেসি) অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মাহবুব আলম বলেন, প্রতি বছরই ঈদকে কেন্দ্র করে সারাদেশেই জালনোট কারবারি চক্রের সদস্যরা সক্রিয় হয়ে ওঠে। আর তাদের টার্গেট থাকে পশুরহাটে আসা ব্যাপারীরা।

তিনি বলেন, আমরা এখন নজরদারি করছি, চক্রের সদস্যদের বিষয়ে আমরা তথ্য সংগ্রহ করছি। বেশকিছু চক্রের মুভমেন্ট পাওয়া যাচ্ছে। কিছু কিছু ঘটনা ঢাকার বাইরে ঘটছে। ঢাকায়ও তারা তৎপরতা চালানোর চেষ্টা করবে। তবে আমরা কঠোর অবস্থানে রয়েছি। জালনোট তৈরি কারবারিদের গ্রেপ্তারে যে কোনো সময় অভিযান পরিচালনা করা হবে।

চলতি বছরের ২৮ জুন দিনগত রাত ১২টার দিকে রাজধানীর মিরপুর থানাধীন ১২/ই বস্নকের ৬২ নম্বর বাসায় এবং ভাটারা থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৪ কোটি টাকা সমমানের জালনোট (১০০০ টাকার নোট) এবং ৪০ লাখ টাকা সমমানের (৫০০ ও ২০০০ রুপির নোট) ভারতীয় রুপিসহ একটি চক্রের ৬ সদস্যকে আটক করের্ যাব-২। অভিযানে জালনোট তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জামাদি (ল্যাপটপ, প্রিন্টার, ডাইস, কাটার) উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও প্রায় ২৫-৩০ কোটি টাকার সমপরিমাণ জালনোট প্রস্তুতের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল (কাগজ, কালি, জলছাপ দেওয়ার সামগ্রী) উদ্ধার করের্ যাব। গ্রেপ্তার মো. সেলিম (৪০), মনির (৪৫), মঈন (৪০), মোছা. রমিজা বেগম (৪০), খাদেজা বেগম (৪০) ও শাহীনুর ইসলাম (১৫) বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।

একই বছরের ১৮ ফেব্রম্নয়ারি রাজধানীর কদমতলীর মুরাদপুর হাইস্কুল রোডে সুফিয়া মঞ্জিলে অভিযান চালিয়ে ৪৫ লাখ টাকা সমমানের জালনোটসহ কাওসার হামিদ খান (৪৫), হেলাল উদ্দিন (৫০) এবং বাবু শেখ (৩৬) নামের একটি চক্রের তিন সদস্য গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সিরিয়াস ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগ। অভিযানে গ্রেপ্তার আসামিদের কাছ থেকে জালনোট তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম, একটি ল্যাপটপ, একটি প্রিন্টার, একটি পেনড্রাইভ এবং চার বান্ডিল কাগজ জব্দ করে গেয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।

র্

যাবের তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, সম্প্রতি মিরপুরের পলস্নবী ও ভাটারা এলাকায়র্ যাবের অভিযানে আটক হওয়া আসামিরা খুব নিখুঁতভাবে জালনোট তৈরি করে আসছিল। তারা দীর্ঘদিন ধরে এই কর্মকান্ডে লিপ্ত। চক্রের সদস্যরা ১০০ টাকার নোট পানিতে সেদ্ধ করে টাকার রং তুলে ফেলত। এরপর শুকিয়ে গেলে ওই টাকার কাগজের উপর ৫০০ টাকার ছাপ দিত। এতে টাকার গোপন নকশা, জলছাপ ও নিরাপত্তার সুতা অক্ষুণ্ন থাকত। এই চক্রটির মূল হোতা সেলিম মিয়া ২০১৮ সালে বিপুল পরিমাণ ভারতীয় রুপি ও জালনোটসহর্ যাবের হাতে আটক হয়েছিল। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে জামিনে বের হয়ে তিনি একই কাজে পুনরায় লিপ্ত হন।

র্

যাব সদর দপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী-বাহিনীর প্রতিষ্ঠালগ্ন (২০০৪ সাল) থেকে ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে এক হাজার ১৫১টি অভিযানে ১ হাজার ৮৮৮ জন দেশি-বিদেশি জালনোট প্রস্তুতকারী ও কারবারি গ্রেপ্তার হয়েছে। এদের বিরুদ্ধে এক হাজার ১০০টি মামলা দায়ের করের্ যাব। এসব অভিযানে ১১ কোটি ২০ লাখ ৬১ হাজার ৭৯৪ টাকা সমমানের জালনোট (দেশি) জব্দ করে। এছাড়াও অভিযানে বিদেশি জালনোট ৪৫ লাখ ৪৯ হাজার ৯১৭ টাকা, ৪ কোটি ৩৬ লাখ ৭৫ হাজার ৬০০ ভারতীয় রুপি, ১৫ লাখ ৫৬ হাজার ২৯২ ইউএস ডলার, ৪৭ হাজার ইউরো, ১৫ হাজার ১৮০ সৌদি রিয়াল, ৮ হাজার ৫৬০ ইরাকি দিনার, ১৪ হাজার ২৭ ইউএই, ২ লাখ মিয়ানমারের কোয়াট, ৩ হাজার ৪০০ মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত, ৫১ হাজার ৫০ পাকিস্তানি রুপি, ২ লাখ ৫০ হাজার তুরস্কের টাকার জালনোট/মুদ্রা জব্দ করা হয়। এছাড়াও পুলিশের বিভিন্ন থানা পুলিশ ও গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের অভিযানে অসংখ্য জালনোট তৈরির কারবারি গ্রেপ্তার হয়েছে।

র্

যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লেফটেনেন্ট কর্নেল আশিক বিলস্নাহ বলেন, জাল টাকার বিস্তার রোধর্ যাবের গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রয়েছে। এর আগেও আমরা অভিযান চালিয়ে অনেক চক্রের সদস্যকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। আগামীতেও আমরা মাঠে যথেষ্ট তৎপর থাকব।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে