শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

যাত্রী সংকটে লোকসান নিয়েই চলছে বিমান

রেজা মাহমুদ
  ১৩ জুলাই ২০২০, ০০:০০
আপডেট  : ১৩ জুলাই ২০২০, ০০:১১

দীর্ঘ বিরতির পর বিমান চলাচল শুরু হলেও এখনো তা স্বাভাবিক গতি অর্জন করতে পারেনি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা সংক্রমণের তীব্রতা অব্যাহত থাকায় অধিকাংশ দেশে যাত্রীদের ১৪ দিনের আইসোলেশন পূর্ণ করতে হয়। আর এই শর্তের কারণেই ভ্রমণ করতে নারাজ বেশিভাগ যাত্রী। বিমান ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ২১ জুন লন্ডনে প্রথম আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক ফ্লাইট পরিচালনা করেছিল। সেদিন ৭০ শতাংশ আসন পূর্ণ হয়। তবে ফিরতি ফ্লাইটে মাত্র ২৩ জন যাত্রী নিয়ে ফিরেছিল বিমানটি। ৩০ শতাংশ কম 'লোড ফ্যাক্টরের' কারণে প্রথম এই ফ্লাইটে বিমানের লোকসান গুনতে হয় ১০ লাখ টাকার বেশি। ১৭ মার্চ বিমান চলাচল স্থগিতের আগে অধিকাংশ বাণিজ্যিক ফ্লাইটের প্রায় দুই সপ্তাহের সব টিকিট অগ্রিম বিক্রি হয়েছিল। পরে আন্তর্জাতিক রুটের সব টিকিটের অর্থ যাত্রীদের ফেরত দেওয়া হয়। যাত্রী না থাকায় একদিন পর অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটগুলোও বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এদিকে মে মাসে সোনালী ব্যাংক থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকার উদ্দীপনা প্যাকেজের আওতায় এক হাজার কোটি টাকা নিয়ে কাজ শুরু করেছিল প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু যাত্রী সংকটের কারণে উত্তরণের বিপরীতে সংস্থাটির অপারেশনাল লোকসান ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে। বিমানের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মার্চঅবধি এই সংস্থার রাজস্ব হ্রাসের পরিমাণ ছিল প্রায় ৪০০ কোটি টাকা, তবে মে মাসে সেটা প্রায় চারগুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৫২৭ কোটি টাকা। সংস্থাটি বলছে, রাজস্বর এই ক্ষতি বিমানের টিকিটের মূল্যেও প্রভাব ফেলেছে। বিমান এখন লন্ডন রুটের জন্য স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি দাম আদায় করে চলেছে। বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মোকাব্বির হোসেন বলেন, বিমান চলাচল শিল্প ধীরে ধীরে চলতে শুরু করেছিল, তবে গন্তব্য দেশগুলোতে কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থা যাত্রীদের ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করেছে। ফলে আমরা লোকসানের মধ্যেই ফ্লাইট পরিচালনা করছি। তবে কতদিন এভাবে চালিয়ে যেতে পারব, সেটা জানি না। বিমান কোভিড -১৯ শুরু হওয়ার আগে ১৭টি আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করত। বর্তমানে সপ্তাহে একবার শুধু লন্ডন রুটে চলছে। তবে শিগগিরই দুবাই ও আবুধাবী রুটে সিডিউল ফ্লাইট চালুর প্রস্তুতি চলছে। ঢাকা থেকে তুর্কি, কাতার এবং এমিরেটস এয়ারওয়েজসহ আরও কয়েকটি বিদেশি বিমান সংস্থাকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালনা করার জন্য অনুমতি দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে তুর্কি প্রথমে বিমানের ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দিলেও ৩ জুলাই ফের বাতিল ঘোষণা করা হয়। এই স্থগিতাদেশ জুলাই পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। তুর্কি এয়ারলাইন্সের একটি সূত্র বলছে, সংক্রমণের হার বাড়ছে- এমন দেশগুলো থেকে ফ্লাইটের অনুমতি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তুর্কি সরকার। বিমান সংস্থাগুলো ধীরে ধীরে আন্তর্জাতিক রুটে তাদের বিমান চলাচল পুনরায় শুরু করছে, যদিও যাত্রী কমে যাওয়া সংস্থাগুলোকে নিরুৎসাহিত করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। আন্তর্জাতিক এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইএটিএ) সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় বলেছে, মে মাসে যাত্রীদের চাহিদা মে-২০১৮ এর তুলনায় ৯১.৩% হ্রাস পেয়েছে। আইএটিএর এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ ক্ষেত্রে পুনরুত্থানের করণীয় নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। সমস্ত এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগর, মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউরোপীয় ক্যারিয়ারের যাত্রী চাহিদা গত বছরের তুলনায় ৯৮%-এরও বেশি কমেছে। সিভিল এভিয়েশন অথরিটি অব বাংলাদেশের (সিএএবি) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান বলেছেন, সংক্রমণের হার বেশি হওয়া সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক রুটে নির্ধারিত ফ্লাইট পুনরায় চালু করে একমাত্র বাংলাদেশ। তিনি বলেন, কোভিড ১৯-এর নেগেটিভ ছাড়পত্র দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করা গেলেও অন্য দেশগুলো ছাড়পত্র গ্রহণ না করে তারা ১৪ দিনের আইসোলেশন ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু ইউরোপ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এতটা কঠোর নয় বলেও তিনি জানান। এই মুহূর্তে কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের কারণে চীন কোনো বিদেশি নাগরিককে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। ভারত এখনো আন্তর্জাতিক ফ্লাইট উড়ান পুনরায় চালু করেনি। থাইল্যান্ডে সংক্রমণের হার খুব কম, তবুও আন্তর্জাতিক যাত্রীদের আগমনে ১৪ দিনের পৃথকীকরণের আদেশ দেয় সরকার। বাংলাদেশ বিদেশি নাগরিকদের প্রবেশের অনুমতি দিলেও ক্রমবর্ধমান সংক্রমণের হার বাড়ায় ইতালি, জাপান, তুর্কি এবং দক্ষিণ কোরিয়া বিদেশিদের প্রবেশ সীমিত করেছে, যেখানে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানসহ ১০টি দেশে রয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহণ সমিতি (আইএটিএ) পৃথকীকরণ ব্যবস্থার বিরোধিতা করে বলেছে, এটি পুরোপুরি ভ্রমণ বন্ধ করে দেওয়ার পরিস্থিতি তৈরি করছে। বাধ্যতামূলক পৃথকীকরণ ব্যবস্থা জনগণকে ভ্রমণ থেকে বিরত রাখে, সাম্প্রতিক জনমত গবেষণায় দেখা গেছে, ৮৩% ভ্রমণকর্মী কোনো গন্তব্যে পৌঁছার পর যদি তাদের ওপর কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থা আরোপ করা হয়, তবে তারা ভ্রমণ থেকে বিরত থাকবে। দেখা যায়, কোয়ারেন্টিন আরোপকারী দেশগুলোর আগমন ৯০% এরও বেশি হ্রাস পেয়েছে। আইএটিএ জানিয়েছে, নিরাপদে অর্থনীতির পুনঃসূচনা একটি অগ্রাধিকার। এর মধ্যে ভ্রমণ এবং পর্যটন অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। পৃথক ব্যবস্থাগুলো মানুষকে সুরক্ষিত রাখতে ভূমিকা রাখতে পারে, তবে বিকল্প ধারাবাহিক ব্যবস্থার মাধ্যমে ঝুঁকি হ্রাস করতে হবে। ইউএস-বাংলার উপদেষ্টা সিকদার মেজবাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ব্যবসায়িক কার্যক্রম না থাকায় লোকজন ভ্রমণ করছেন না। পাশাপাশি সংক্রমণের ক্রমবর্ধমান সংখ্যা যাত্রীদের যাতায়াত থেকে দূরে রেখেছে। এই পরিস্থিতির মধ্যেও ইউএস-বাংলা সর্বনিম্ন দুই হাজার ৫০০ টাকায় টিকিট দিচ্ছে এবং ক্যারিয়ার ভ্রমণকারীদের মধ্যে আস্থা বাড়াতে সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা নিয়ে বিমান চালনা চালিয়ে যাচ্ছে বলেও তিনি জানান। কোভিড -১৯ এর প্রাদুর্ভাবে জুনঅবধি ইউএস-বাংলার প্রায় ৪০০ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে