কৃষি পরিবার সবচেয়ে বেশি বরিশালে

অন্যের জমি ব্যবহারকারী পরিবারের মধ্যে ২২ দশমিক ০৬ শতাংশ পলস্নী এলাকায় এবং ৩ দশমিক ৮৮ শতাংশ শহর এলাকায় বাস করে। সর্বোচ্চসংখ্যক অন্যের জমি ব্যবহারকারী পরিবার রংপুর বিভাগে ২৬ দশমিক ৮৪ শতাংশ, এরপরই রয়েছে রাজশাহী বিভাগে ২৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ। সিলেট বিভাগে ২৩ দশমিক ৫০ শতাংশ।

প্রকাশ | ২৫ জুলাই ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
যাযাদি ডেস্ক মেহেরপুর গাংনী উপজেলার কাথুলি ইউনিয়নের শামসুল হক (৫৫)। পিতা জমির উদ্দিন। তার পরিবারে মোট সদস্য সংখ্যা ৬ জন। তার নিজস্ব কোনো জমি নেই। কিন্তু চার বিঘা জমিতে তিনি ধান, পাট, গম ও সবজিসহ নানা ধরনের আবাদ করেন। চার বিঘার মধ্যে এক বিঘা জমি বছরে ১০ হাজার টাকা চুক্তিতে আবাদ করেন। এছাড়া ২ লাখ টাকার বিনিময়ে ২ বিঘা জমি বন্ধক নিয়েছেন। জমির মালিক যেদিন দুই লাখ টাকা ফেরত দেবেন সেদিন শামসুল হক জমি বুঝিয়ে দেবেন। এছাড়া ৫ মণ ধান দেওয়ার চুক্তিতে নিয়েছেন এক বিঘা জমি। এভাবেই নানা উপায়ে অন্যের জমিতে ফসল ফলিয়ে সংসার চলছে তার। শামসুল হক জানান, বাপ-দাদার ভিটেমাটিতেই মাথা গোঁজার জায়গা আছে। তবে আবাদ করার কোনো জমি নেই। অন্য জনের জমিতে আবাদ করার ঝুঁকি বেশি। ফসল নষ্ট হলেও তবে জমির মালিককে ঠিকই টাকা দিতে হয়। শামসুল হকের মতো এমন চাষীর সংখ্যা দেশে ৬৭ লাখ ৬৩ হাজার ৪৮৭ জন। এ সংখ্যা দেশের মোট পরিবারের ১৯ দশমিক ০৩ শতাংশ। অন্যের জমি ব্যবহারকারী পরিবারের মধ্যে ২২ দশমিক ০৬ শতাংশ পলস্নী এলাকায় এবং ৩ দশমিক ৮৮ শতাংশ শহর এলাকায় বাস করে। সর্বোচ্চসংখ্যক অন্যের জমি ব্যবহারকারী পরিবার রংপুর বিভাগে ২৬ দশমিক ৮৪ শতাংশ, এরপরই রয়েছে রাজশাহী বিভাগে ২৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ। সিলেট বিভাগে ২৩ দশমিক ৫০ শতাংশ। বিভাগওয়ারী রংপুর বিভাগে ২৬ দশমিক ৮৩ বা ১১ লাখ ১১ হাজার ১৯৭ পরিবার অন্যের জমিতে কৃষি কাজ করে। এর পরেই রাজশাহী বিভাগে ২৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ বা ১১ লাখ ৯৭ হাজার ৬৬৭ জন পরিবার অন্যের জমিতে কৃষি কাজ করে। খুলনা বিভাগে ২৪ দশমিক ০৪ শতাংশ বা ৯ লাখ ৭৯ হাজার ৭২৫ ও সিলেট বিভাগে ২৩ দশমিক ৫০ শতাংশ ৪ লাখ ৫৯ হাজার ৪৬৭ পরিবার অন্যের জমিতে কৃষি কাজ করে। কৃষি কাজে অন্যের জমি সবচেয়ে কম ব্যবহার করা হয় ঢাকা বিভাগে। মাত্র ১২ দশমিক ২৪ শতাংশ বা ১১ লাখ ৬৯ হাজার ১২৮ পরিবার। এছাড়া বরিশালে ১৭ দশমিক ৭৬ শতাংশ বা ৩ লাখ ৫০ হাজার ৩৩৭, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৫ দশমিক ৫০ শতাংশ বা ৯ লাখ ৭০ হাজার ৬৭৩, ময়মনসিংহ বিভাগে ১৯ দশমিক ১০ শতাংশ বা ৫ লাখ ২৫ হাজার ২৯৩টি পরিবার কৃষি কাজে অন্যের জমির ওপর নির্ভরশীল। ষষ্ঠ কৃষি (শস্য, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ) শুমারিতে (২০১৯) এমন তথ্য উঠে এসেছে। বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) ওয়ার্ল্ড প্রোগ্রাম ফর দ্য সেনসাস অব অ্যাগ্রিকালচার-২০২০ গাইডলাইন মোতাবেক এই কৃষি শুমারি পরিচালিত হয়েছে। সদ্য প্রয়াত প্রকল্পের সাবেক পরিচালক (যুগ্ম সচিব) জাফর আহমেদ খান বলেন, দেশে অন্যের জমি ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৬৭ লাখ ৬৩ হাজার ৪৮৭টি, যা মোট পরিবারের ১৯ দশমিক ০৩ শতাংশ। রংপুরে এই হার বেশি। অনেকে দেখা যায়, বাবার জমিতে কৃষি কাজ করেন। এটাও অন্যের জমি হিসেবে ধরা হয়েছে। মূলত নিজের নামে জমি না থাকলে পিতা-মাতার জমিও অন্যের হিসেবে দেখানো হয়েছে। অনেকে দেখা যায়, বাবার ১০ বিঘা জমিতে কৃষি কাজ করেন। কিন্তু বাবা সেই সন্তানের নামে দেননি। এটাও অন্যের জমি হিসেবে দেখানো হয়েছে। বিবিএস সূত্র জানায়, প্রাথমিক ফলাফলে পাওয়া দেশে মোট কৃষি পরিবার ১ কোটি ৬৫ লাখ ৬২ হাজার ৯৭৪টি, যা দেশের সর্বমোট খানার ৪৬ দশমিক ৬১ শতাংশ। পলস্নী এলাকায় কৃষি পরবারের হার ৫৩ দশমিক ৮২ শতাংশ এবং শহর এলাকায় এর হার ১০ দশমিক ৪৬ শতাংশ। কৃষি পরিবার সবচেয়ে বেশি বরিশাল বিভাগে ৬৬ শতাংশ। এছাড়া ময়মনসিংহে ৫৫ দশমিক ৭৫ ও রংপুরে ৫৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ। প্রতিবেদন সূত্রে আরও জানা গেছে, দেশে মোট পরিবারের মধ্যে ৪ দশমিক ৩ শতাংশের মৎস্য চাষের জমি রয়েছে। পলস্নী এলাকায় এর হার ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ, যেখানে শহরে এর হার ০ দশমিক ৯০ শতাংশ। মৎস্য চাষাধীন সর্বোচ্চ ১০ দশমিক ৮৮ শতাংশ পরিবার বরিশাল বিভাগে এবং খুলনায় ৯ দশমিক ৫৯ শতাংশ। এছাড়া চট্টগ্রামে ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ পরিবার মৎস্য চাষে জড়িত। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগাধীন বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বু্যরো বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার গাইডলাইন অনুসারে সারা দেশে শহর ও পলস্নী এলাকায় এটি বৃহৎ আকারে পরিচালিত অন্যতম পরিসংখ্যানিক কার্যক্রম। প্রতি দশ বছর অন্তর কৃষি শুমারি অনুষ্ঠিত হয়। কৃষি শুমারির দ্বিতীয় জোনাল অপারেশনে সারা দেশের ১ লাখ ৬৭ হাজার ৬টি এলাকায় গণনা কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এতে অংশ নেন ১ লাখ ৩৮ হাজার ৮১৫ জন গণনাকারী। অর্থাৎ প্রতিটি এলাকার জন্য একজনেরও কম গণনাকারী গণনা কাজ সম্পন্ন করেন। এছাড়া ২২ হাজার ৩৭৩ জন সুপারভাইজার, ২১৯ জন সহকারী জেলা সমন্বয়কারী, ৭৮ জন জেলা সমন্বয়কারী এবং ১০ জন বিভাগীয় সমন্বয়কারী কাজ করেন এই প্রকল্পের আওতায়। স্বাধীনতার আগে তথা পূর্ব পাকিস্তানে ১৯৬০ সালে প্রথম নমুনা আকারে কৃষি শুমারি অনুষ্ঠিত হয়। স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭৭ সালে প্রথম কৃষি শুমারি হয়। এরপর ১৯৮৩ থেকে ১৯৮৪ সালের কৃষি শুমারিতে দুই ভাগে পৌর এলাকাসহ সব কৃষি খানা গণনার আওতায় আনা হয়। ১৯৯৬ সালের কৃষি শুমারিতে সব শহর ও পলস্নী এলাকার কৃষি খানাকে পৃথক প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে আওতায় আনার পরিকল্পনা থাকলেও শুধু পলস্নী এলাকার তথ্য সংগ্রহ করা হয়। সর্বশেষ ২০০৮ সালে সব শহর ও পলস্নী এলাকার সব কৃষি খানাভিত্তিক তথ্য সংগ্রহ করা হয়। বাংলানিউজ