রাশেদ চৌধুরীর রাজনৈতিক আশ্রয় পর্যালোচনার উদ্যোগ যুক্তরাষ্ট্রের

প্রকাশ | ২৬ জুলাই ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডে মৃতু্যদন্ড মাথায় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে থাকা রাশেদ চৌধুরীকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্ত পর্যালোচনার উদ্যোগ নিয়েছে দেশটির বিচার বিভাগ। মার্কিন সাময়িকী পলিটিকো শুক্রবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বার গত ১৭ জুন দেশটির ইমিগ্রেশন আপিল বোর্ডের কাছে রাশেদ চৌধুরীর রাজনৈতিক আশ্রয় মামলার নথি পর্যালোচনার জন্য তলব করেছেন। পলিটিকো লিখেছে, বারের এই পদক্ষেপের চূড়ান্ত ফলাফল হিসেবে রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে তার রাজনৈতিক আশ্রয় হারাতে পারেন এবং তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোও হতে পারে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ও বাঙালির স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ হত্যা করা হয়। সে সময় দেশের বাইরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের আমলে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশের মধ্য দিয়ে এই হত্যাকান্ডের বিচারের পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়, যাতে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিরা ছাড়া পেয়ে যায়। ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পথ উন্মুক্ত হয়। তখন বিচার শুরু হলেও বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় যাওয়ার পর বিচারের গতি শ্লথ হয়ে যায়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় যাওয়ার পর বিচার শুরু হলে বিচার শেষে ২০১০ সালে পাঁচ খুনির মৃতু্যদন্ড কার্যকর করা হয়। তবে দন্ডিত পাঁচ খুনি এখনও বিভিন্ন দেশে পালিয়ে আছেন, তাদের একজন সাবেক সেনা কর্মকর্তা রাশেদ চৌধুরী আছেন যুক্তরাষ্ট্রে। বাংলাদেশ সরকার বহু বছর ধরে রাশেদ চৌধুরীকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছে। গত বছর মে মাসে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত অ্যাসিসট্যান্ট সেক্রেটারি অ্যালিস ওয়েলসের সঙ্গে এক বৈঠকের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন জানান, বাংলাদেশে রাশেদ চৌধুরীর বিচারের নথিপত্র চেয়েছে ওয়াশিংটন। পরে চলতি বছর এপ্রিলেও ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলারের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা হয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনের। বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের রাতে কর্নেল (অব.) সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খানসহ আরও কয়েকজনের সঙ্গে রেডিও স্টেশন নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে ছিলেন সেনা কর্মকর্তা রাশেদ চৌধুরী। পরে হত্যাকান্ডে জড়িত অন্য সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিদেশে চলে যান তিনি। এরপর জিয়াউর রহমানের আমলে 'পুরস্কার হিসেবে' তাদের বিভিন্ন দূতাবাসে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফেরার পর যখন বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পথ খুলল রাশেদ চৌধুরী তখন ব্রাজিলে বাংলাদেশ দূতাবাসে কর্মরত। পলিটিকো লিখেছে, ওই সময় রাশেদ বিপদ বুঝে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে যান। ভিজিটর ভিসায় সেখানে গিয়ে দুই মাসের মধ্যে তারা রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেন। প্রায় দশ বছর পর যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন আদালত রাশেদের রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন মঞ্জুর করে। কিন্তু সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করে যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ। সেখানে বলা হয়, বাংলাদেশে সামরিক অভু্যত্থানে অংশ নেওয়া একজন সাবেক সেনা কর্মকর্তা যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়ার যোগ্য হতে পারেন না। কিন্তু মার্কিন বিচার বিভাগের ইমিগ্রেশন আপিল বোর্ড ২০০৬ সালে রাশেদ চৌধুরীর পক্ষেই রায় দেয়। কিন্তু রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসবিরোধী আইন ভঙ্গ করেছিলেন কি না, সেই প্রশ্ন ওঠায় মামলাটি ইমিগ্রেশন আদালতে পুনঃপরীক্ষার জন্য ফেরত পাঠানো হয়। নতুন করে শুনানির পর ইমিগ্রেশন আদালত রাশেদকে রাজনৈতিক আশ্রয় মঞ্জুরের সিদ্ধান্ত বহাল রাখে। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার দন্ডিত ওই খুনিকে ফেরত পাঠানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখে। তারই ধারাবাহিকতায় যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেল গত মাসে মামলার নথি তলব করেন পর্যালোচনার জন্য। এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে রাশেদ চৌধুরীর আইনজীবী মার্ক ফন ডের হাউট পলিটিকোকে বলেন, অ্যাটর্নি জেনারেল ইমিগ্রেশন আদালতের আদেশ 'পাল্টানোর সিদ্ধান্ত' নিয়ে ফেলেছেন বলেই তার মনে হচ্ছে। বার যদি বিচারকের সিদ্ধান্তের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ না করে থাকেন, তাহলে এত বছর পর এ মামলা পুনরায় চালু করার কোনো কারণ দেখছেন না রাশেদের আইনজীবী। বিডিনিউজ