বন্দরের নিরাপত্তায় বসছে আরও লাগেজ স্ক্যানার

প্রকাশ | ২৯ জুলাই ২০২০, ০০:০০

আহমেদ তোফায়েল
লাগেজ স্ক্যানার

আমদানি-রপ্তানিতে রাজস্ব ফাঁকি প্রতিরোধ এবং রাষ্ট্রের নিরাপত্তা জোরদারে দেশের সব বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরে আরও লাগেজ স্ক্যানার বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। রাজস্ব প্রশাসন মনে করছে, সব বন্দরে আরও স্ক্যানার বসানো হলে রাজস্ব ফাঁকি প্রতিরোধের পাশাপাশি কনটেইনারে কোনো বিস্ফোরক, অস্ত্র বা নিরাপত্তা হুমকি সৃষ্টিকারী কোনো পণ্য আছে কি না, তা যেমন পুরোটা যাচাই করা সম্ভব হবে, তেমনি জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ কোনো পণ্য দেশে প্রবেশ করতে পারবে না। পাশাপাশি চোরাচালানও নিয়ন্ত্রণ করা আরও সহজ হবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) এক সিনিয়র কর্মকর্তা যায়যায়দিনকে জানান, প্রাথমিকভাবে ১০টি লাগেজ স্ক্যানার এবং পাঁচটি বডি স্ক্যানার কেনার কথা রয়েছে। তাতে স্বয়ংক্রিয় চেকপোস্টগুলোকে আরও শক্তিশালী করা সম্ভব হবে এবং সারা দেশের কাস্টমস স্টেশনে স্ক্যানার স্থাপনের কথা চিন্তা করেছেন। সম্ভবত প্রাথমিকভাবে ১৫টি স্ক্যানার চলতি অর্থবছরের মধ্যে কেনা হবে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ছয়টি লাগেজ স্ক্যানার দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ২০ হাজার যাত্রীকে স্ক্যান করা হয়ে থাকে। আর চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মাত্র চারটি স্ক্যানার চালু রয়েছে। দেশের সক্রিয় স্থলবন্দর বেনাপোল স্থলবন্দরে রয়েছে দুটি স্ক্যানার মেশিন। আর সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রয়েছে একটি। স্ক্যানার হলো এমন একটি যন্ত্র, যার ভেতর দিয়ে কোনো কনটেইনার বা পণ্যের ব্যাগ প্রবেশ করালে তার ভেতরে কোনো ধরনের পণ্য রয়েছে, তা কম্পিউটারে দেখা যায়। বন্দর দিয়ে আমদানি হওয়া পণ্য স্ক্যানিং করে খালাস করা হলে কোনো আমদানিকারক এক পণ্য এনে অন্য পণ্য ঘোষণা দিয়ে বিদেশে অর্থ পাচার করতে পারবেন না। আবার বেশি দামের পণ্য এনে কম দামি পণ্য হিসেবে বা উচ্চ শুল্ককরের পণ্য আমদানি করে বিনা শুল্ক বা কম শুল্কের পণ্য হিসেবে ছাড় করাতে পারবেন না। জানা গেছে, পণ্যভেদে স্ক্যানার বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। যেমন পণ্যবাহী কনটেইনার পরীক্ষার জন্য ফাস্ট স্ক্যানার, গাড়ি স্ক্যানিংয়ের জন্য ভেহিকল স্ক্যানার, যাত্রী স্ক্যানিংয়ের জন্য হিউম্যান বডি স্ক্যানার, যাত্রীর লাগেজ স্ক্যানিংয়ের ক্ষেত্রে ব্যাগেজ স্ক্যানার ব্যবহার করা হয়। তাই প্রয়োজন অনুযায়ী একেক বন্দরে একেক রকম স্ক্যানার বসাতে হয়। জানা যায়, প্রায় ৩০টি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা নানা কৌশল নিয়েও বিমানবন্দরের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না। প্রতিদিনই স্বর্ণ, ডলার, বিদেশি মুদ্রাসহ হরেক রকমের চোরাই মালামাল পাচার হচ্ছে। যদিও বিমানবন্দরের স্ক্যানিং মেশিনগুলোও ঠিকভাবে তদারকি করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রসঙ্গত, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই আমদানি-রপ্তানির শতভাগ পণ্য স্ক্যানিং করার জন্য এনবিআরকে দেশের সব বন্দরে স্ক্যানার বসানোর নির্দেশ দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১০০টি স্ক্যানার কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে অর্থমন্ত্রী এক সভায় এনবিআরের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, কেবল চট্টগ্রাম বন্দরে স্ক্যানার বসালে হবে না। তখন অপরাধীরা চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানি না করে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বা মোংলা বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি করবে। তাই সব বন্দরেই স্ক্যানার বসাতে হবে। জানা গেছে, যেসব পণ্য রপ্তানির বিপরীতে সরকার থেকে নগদ সহায়তা পাওয়া যায়, অনেক রপ্তানিকারক ওই সব পণ্য রপ্তানি না করে কনটেইনারের ভেতর অন্য পণ্য পাঠান। কিংবা কেউ কেউ উচ্চ শুল্কমূল্যের পণ্য আমদানি করে কম শুল্কমূল্যের পণ্যের ঘোষণা দেন। স্ক্যানার বসালে এসব অপরাধ কমবে। যার ফলে সরকারের রাজস্ব আয় বেড়ে যাবে। জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এমন পণ্য বা বিস্ফোরক জাতীয় দ্রব্য আমদানি করতে পারবে না। পাশাপাশি যাত্রী কিংবা যাত্রীর লাগেজ শতভাগ স্ক্যানিং হলে চোরাচালানও নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়ে আসবে। বেবিচক ও শাহজালাল বিমানবন্দর সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালে দেশের তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ব্যবহার করে ৮২ লাখ ৬৪ হাজার যাত্রী আসা-যাওয়া করেছেন। এর মধ্যে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে ওই বছর আসা-যাওয়া করেছেন প্রায় ৭১ লাখ যাত্রী। প্রতি মাসে গড়ে যার সংখ্যা প্রায় ৫ লাখ। অর্থাৎ প্রতিদিন ৯ হাজার ৮৩৩ জন যাত্রী দেশে ফিরেছেন দেশের বৃহত্তম এই বিমানবন্দর দিয়ে। ২০১৯ সালে এই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১০ হাজার ১৬৬ জন। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে চলতি বছরের মার্চ থেকে এই সংখ্যা কমতে শুরু করে।