বাংলাদেশে চীনা ভ্যাকসিনের পরীক্ষা আটকে যাওয়ার কারণ

প্রকাশ | ৩০ জুলাই ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
পরীক্ষাগারে ভ্যাকসিন হাতে গবেষক

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে চীনের ভ্যাকসিনের তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা বাংলাদেশে আটকে গেছে। বাংলাদেশের কর্মকর্তারা বলেছেন, এই পরীক্ষা চালানোর ব্যাপারে চীন সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু না জানানোর কারণে তাতে এখনও অনুমতি মেলেনি। অন্য কোনো দেশের ভ্যাকসিন পরীক্ষা বা গবেষণা চালানোর জন্য সরকারের উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্ত প্রয়োজন বলে কর্মকর্তারা উলেস্নখ করেছেন। চীনের সিনোভেক বায়োটেক কোম্পানি ভ্যাকসিনের পরীক্ষা চালানোর জন্য ঢাকায় আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বা আইসিডিডিআরবি প্রস্তুতি নিয়েছিল। এই প্রস্তুতি পর্বে বাংলাদেশের মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল বা বিএমআরসির কাছ থেকে অনুমতিও নিয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে আইসিডিডিআরবি সাতটি হাসপাতালের নির্দিষ্ট করা মানুষের মাঝে ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু করবে- এমন ধারণাও দেওয়া হয়। কিন্তু এরই মাঝে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছিলেন যে, টিকার ট্রায়াল দুই রাষ্ট্রের বিষয় এবং তাতে সিদ্ধান্ত নিতে সময় প্রয়োজন। এমন বক্তব্যের প্রেক্ষাপটে চীনা ভ্যাকসিনের পরীক্ষা নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আব্দুল মান্নান বলেছেন, বিষয়টি নিয়ে চীন সরকার বাংলাদেশ সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু না জানানোর কারণে তা নিয়ে কোনো আলোচনা বা অগ্রগতি নেই। তিনি বলেন, 'আমাদের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগকে বা স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে অফিসিয়ালি কোনো চিঠিপত্র কিন্তু কেউ পাঠায়নি, বা আমরা কারও চিঠি পাইনি বা গ্রহণ করিনি এ প্রসঙ্গে।' তিনি আরও বলেছেন, 'একটি \হকথা বলা যায়, চাইনিজ কোনো টিম এসে যদি ট্রায়ালটা করতে চায়, তাহলে এখানে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পর্যায় থেকে একটা উদ্যোগ নেওয়ার কথা। ঐ চ্যানেল থেকেই কিন্তু কাজটা করার কথা এবং সরকারের একেবারে হাইয়েস্ট লেভেল থেকে সিদ্ধান্তটা হওয়ার কথা। আমার মনে হয় যে, আমরা এখনও সেভাবে অফিসিয়ালি কিছু পাইনি বা কোনো অগ্রগতি নেই।' কয়েকদিন আগে স্বাস্থ্যমন্ত্রীও বলেছিলেন, ভ্যাকসিন পরীক্ষার বিষয়ে চীন সরকারের বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানালে তখন সরকারের পক্ষ তা নিয়ে আলোচনার বিষয় আসবে এবং করোনাভাইরাস সম্পর্কিত সরকারের বিশেষজ্ঞ বা কারিগরি কমিটি পর্যালোচনা করে সুপারিশ করবে। বাংলাদেশে ভ্যাকসিন পরীক্ষার নিয়ম তাহলে কি আছে- এ ব্যাপারে সরকারের বিশেষজ্ঞ বা কারিগরি কমিটির প্রধান অধ্যাপক মো. শহীদুলস্নাহ বলছেন, 'আমাদের দেশে কোনো ভ্যাকসিন বা ঔষধের গবেষণা যদি করতে হয়, তাহলে গবেষকদল প্রথমে একটা ভালো প্রটোকল তৈরি করবে। সেই প্রটোকল তারা বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল বা বিএমআরসি'র কাছে জমা দেবে। বিএমআরসি এথিক্যাল ক্লিয়ারেন্স দেবে। এটা একটা ধাপ।' 'দ্বিতীয় ধাপটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ভ্যাকসিনতো একটা প্রডাক্ট। এটা মানুষের দেহে প্রয়োগ করবে। ফলে কোনো মেডিকেল প্রডাক্ট বা গবেষণার জিনিস বা ওষুধ বাংলাদেশে আনতে হলে ওষুধ প্রশাসনের অনুমোদন নিতে হয়।' তবে এই নিয়মের ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে ভিন্ন ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। সরকার বলেছে, এই নিয়ম দেশীয় গবেষকদের জন্য প্রযোজ্য। স্বাস্থ্য সচিব মো. আব্দুল মান্নান বলেছেন, 'অন্য দেশের গবেষণার জন্য সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত প্রয়োজন।' 'যেহেতু আরেক দেশের টিম আসবে মানে বিশেষজ্ঞরা আসবে। আরেকটা দেশ থেকেতো আসবে। তারা চায়না থেকে আসবে। তারা যখন আসবে বাংলাদেশে একটা অনুমোদনেরওতো ব্যাপার আছে, নাকি? এটাতো আমাদের দেশীয় কোনো গবেষণা প্রতিষ্ঠান নয়। আমারতো মনে হয়, এগুলো নিয়ে আরেকটু চিন্তা-ভাবনা করার বিষয় আছে।' সচিব মি. মান্নান আরও বলেছেন, 'আমরাও অপেক্ষায় আছি, এরকম চিঠিপত্র যদি আমরা পাই আনুষ্ঠানিকভাবে, তাহলে আমরা তার জবাব দেব এবং ব্যবস্থা নেব।' তিনি অবশ্য বলেছেন, চীন সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হলে তখন তা বিবেচনা করা হতে পারে। এদিকে, কয়েক সপ্তাহ আগে চীনের একটি বিশেষজ্ঞ দল ঢাকা সফর করে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বিভাগের বিভিন্ন পর্যায়ে বৈঠক করেছিল। চীনে এই দলটি করোনাভাইরাস সামলানোর তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করার পাশাপাশি বাংলাদেশকে সহায়তা করার কথা বলেছে। সে সময়ই চীনের ভ্যাকসিনের তৃতীয় পর্যায়ে মানুষের মাঝে প্রয়োগের পরীক্ষা বাংলাদেশে করার বিষয়টি সংবাদ মাধ্যমে খবর হয়েছিল। ঢাকায় চীনা রাষ্ট্রদূত প্রথম টিকা গ্রহণকারী হবেন বলে তিনি বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে এমন বক্তব্য দিয়েছিলেন। এরপর চীনা কোম্পানি আইসিডিডিআরবি'র মাধ্যমে এই পরীক্ষা চালানোর প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছিল। কিন্তু বাংলাদেশ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের অনুমতির প্রশ্ন আসায় সেই পরীক্ষা অনিশ্চয়তায় পড়েছে। আইসিডিডিআরবি'র একাধিক সূত্র জানিয়েছে, প্রস্তুতি পর্বে জটিলতা দেখা দেয়ায় বিষয়টিতে তাদের দিক থেকে এখনই নতুন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বিবিসি বাংলা