বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদযাত্রায় পদে পদে ভোগান্তি

যাযাদি রিপোর্ট
  ৩১ জুলাই ২০২০, ০০:০০
বৃহস্পতিবার রাজধানীর মহাখালী টার্মিনালের সামনে বাসের অপেক্ষায় থাকা ঘরমুখো মানুষ -যাযাদি

দরজায় কড়া নাড়ছে মুসলমানদের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার বাড়ি ফেরা মনুষের সংখ্যা কম হলেও ভোগান্তি কমেনি। বাসা থেকে বের হয়ে পথে পথে ভোগান্তি পেরিয়ে বাড়ি ফিরছেন ঘরমুখো মানুষ। বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর বাস, ট্রেন ও লঞ্চ টার্মিনালে যাত্রীদের তেমন ভিড় লক্ষ করা যায়নি। কিন্তু বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘরমুখো মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। মানুষের ভিড় তুলনামূলক কম থাকায় অনেকেই মনে করেছিলেন এবার হয়তো ঈদযাত্রা স্বস্তির হবে। কিন্তু বাসা থেকে বের হয়ে স্টেশনে পৌঁছার আগেই যানজটে পড়তে হয়েছে। রাজধানীর প্রবেশদ্বারগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একদিকে যাত্রীবাহী গাড়িগুলো ঢাকা ছেড়ে যাচ্ছে অন্যদিকে গরুবাহী ট্রাকগুলো ঢাকায় প্রবেশ করছে। এর ফলে বিভিন্ন সড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। এদিকে, করোনা সংক্রামণ রোধে গণপরিবহণে স্বাস্থবিধি মানার ব্যাপারে নির্দেশনা থাকলেও অনেক ক্ষেত্রেই তা মানা হয়নি। দুপুরের পর গুলিস্তান থেকে ছেড়ে যাওয়া অনেক পরিবহণে পাশাপাশি সিটে দু'জন এবং গাদাগাদি করে যাত্রী পরিবহণ করতে দেখা গেছে। কিছু কিছু যাত্রী মাস্ক পরলেও অনেকের মুখে মাস্কও ছিল না। যাত্রী উঠানোর সময় কোনো ধরনের স্প্রেও করেনি। বৃহস্পতিবার প্রভাতী বনশ্রী পরিবহণের অন্তত ৫টি বাসে এমন চিত্র দেখা গেছে। যাত্রীদের অভিযোগ, চালক-হেলপার একে তো বেশি ভাড়া আদার করছেন। অন্যদিকে জোরপূর্বক অতিরিক্ত যাত্রী তুলে নিচ্ছেন। এ ব্যাপারে কেউ প্রতিবাদ করলে যাত্রীদের বাস থেকে নেমে যাওয়ারও হুমকি দিচ্ছেন পরিবহণ শ্রমিকরা। এ প্রসঙ্গে আলাপকালে পরিবহণটির সোহেল রানা নামের একজন চালক জানান, এক সিটে একজন করে নিলে বাড়তি ভাড়া দিতে চান না অনেকেই। তাই বাধ্য হয়ে দু'জন করে নিতে হচ্ছে। অন্য এক চালক জানান, সামনে ঈদ। নিজেদের কিছু টাকার প্রয়োজন। তাছাড়া মালিক বেশি টাকা জমা নিচ্ছে। এ জন্য বাধ্য হয়ে দুই সিটেই কিছু কিছু যাত্রী তুলছেন তারা। বৃহস্পতিবার সকালে গবতলী, মহাখালী ও যাত্রাবাড়ী বাস টার্মিনালে যাত্রীদের তেমন ভিড় লক্ষ করা যায়নি। কিন্তু এর ব্যতিক্রম ছিল গুলিস্তান ও ফুলবাড়িয়া বাস টার্মিনালে। সকাল থেকেই মানুষের ভিড় লেগে যায়। বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে যানজটও দেখা দেয়। গাড়িগুলো নির্ধারিত সময়ে ছাড়তে পারেনি। এর কারণ হিসাবে পরিবহণের কর্মকর্তারা জানান, বিভিন্ন সড়কের পাশে পশুর হাট বসেছে। সেখানে যানজটের কারণে গাড়িগুলো সময় মতো ঢাকায় ঢুকতে পারছে না। তাই নির্ধারিত সময়ে বাসগুলো ছেড়ে যেতে পারেনি। গতকাল দুপুরে ফুলবাড়িয়া বাস টার্মিনালে কথা হয় গোপালগঞ্জের যাত্রী আনিসুর রহমানের সঙ্গে। তিনি জানান, গ্রামে যাওয়ার জন্য বিআরটিসি এসি বাসের টিকিট কেটেছেন। নির্ধারিত সময়ের এক ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও বাসের দেখা মেলেনি। কাউন্টার থেকে জানানো হয়েছে। সড়কে যানজটের কারণে গাড়ি টার্মিনালে পৌঁছাতে পারেনি। বৃহস্পতিবার গাবতলী বাস টার্মিনালে যাত্রীরারাও নির্ধারিত সময়ে বাসে উঠতে পারেননি। অনেকেই সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করেও বাসের দেখা পাননি। যাত্রীদের অভিযোগ বাসের আসন পূর্ণ না হওয়ায় কাউন্টার থেকে গাড়ি ছাড়া হয়নি। কিন্তু কাউন্টারের দায়িত্বরতরা জানান, সড়কে যানজটের কারণে এমন পরিস্থিতি হয়েছে। তাছাড়া দুপুরের পর থেকে অনেক যাত্রী টিকিটও পাননি। বিকালে টিকিটপ্রত্যাশীদের লম্বা লাইন দেখা গেছে। দীর্ঘক্ষণ টার্মিনালে অপেক্ষা করতে হয়েছে অনেককে। অপরদিকে, দীর্ঘ অপেক্ষার পর বাসের দেখা পেলেও যানজটের ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে ঘরমুখো মানুষকে। গতকাল বিকাল পর্যন্ত গাবতলী-আমিনবাজার সড়কে যানজট লেগে থাকতে দেখা যায়। যাত্রীবাহী বাস ও পশুবাহী ট্রাকের চাপে নবীনগর সাভার, আমিনবাজার ব্রিজ থেকে গাবতলী হাট পর্যন্ত রাস্তায় দুই পাশে তীব্র যানজট দেখা দেয়। মহাখালী টার্মিনাল থেকেও বাসগুলো নির্ধারিত সময়ে ছেড়ে যায়নি। সকালের দিকে আসন শূন্য রেখেই টার্মিনাল ছেড়েছে অনেক বাস। এনা পরিবহণের কর্মকর্তা বেলাল হোসেন যায়যায়দিনকে জানিয়েছেন, সকাল থেকে যাত্রী কম থাকায় অনেক বাস আসন ফাঁকা রেখেই ছেড়ে গেছে। কিন্তু দুপুর আর বিকালের দিকে টার্মিনালে প্রচুর যাত্রী এসেছেন বলে জানান তিনি। এদিকে, গাড়ির বাড়তি চাপে দেশের ২১ জেলার যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে তীব্র যানজট দেখা দেয়। মানিকগঞ্জ জেলার প্রবেশ পথের প্রথম বাসস্ট্যান্ড নয়াডিঙ্গী, গোলড়া, মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড, তরা, বানিয়াজুরি, মহাদেবপুর, বরঙ্গাইল, উথুলী এলাকায় ছোট গাড়ি, যাত্রীবাহী পরিবহণসহ মোটরসাইকেলের চাপের কারণে বিভিন্ন স্থানে জটের সৃষ্টি হয়েছে। আনোয়ার নামে এক যাত্রী জানান, ভোরে রাজবাড়ীর উদ্দেশে ঢাকা থেকে রওনা হয়েছি। যানজট পড়ার আগেই পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুট পার হতে পারি। কিন্তু ছোট গাড়ি ও মোটরসাইকেলের যে পরিমাণ চাপ রয়েছে। এর ফলে সরাসরি ফেরিতে ওঠা দায়। এর কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নদীতে তীব্র স্রোত আর ফেরি সংকটের কারণে ঘাটের উভয় পাশে ফেরি পারের যানবাহনগুলোকে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যানবাহণের সারি দীর্ঘ হতে থাকে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ করপোরেশন (বিআইডবিস্নউটিসি) আরিচা সেক্টরের ডিজিএম জিলস্নুর রহমান বলেন, ভোর থেকে পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় ব্যক্তিগত গাড়ি ও মোটরসাইকেলের চাপ বেড়েছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গণপরিবহণও যোগ হয়। দিনভর পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ১৬টি ফেরি দিয়ে যানবাহণ পারাপার করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। লঞ্চে ভিড় : শেষ মুহূর্তে নদী পথে বাড়ি ফেরার জন্য ঢাকা ছাড়ছেন অসংখ্য মানুষ। বৃহস্পতিবার বিকালে সদরঘাট এলাকায় তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। লঞ্চগুলো কানায় কানায় পূর্ণ ছিল। ঝুঁকি জেনেও অতিরিক্তি যাত্রী নিয়ে ছেড়ে গেছে লঞ্চগুলো। গ্রামের বাড়িতে ঈদ উদ্‌যাপন করতে ঢাকা থেকে ঈগল-৮ এ করে সপরিবারে ভান্ডারিয়া যাচ্ছেন মাহমুদ রাকিব। তিনি জানান, প্রতিটি লঞ্চ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ছেড়েছে। লঞ্চের ভেতর স্বাস্থ্যবিধিও মানছেন না যাত্রীরা। তবে নির্ধারিত সময়েই ছেড়ে গেছে প্রতিটি লঞ্চ। ট্রেনে স্বস্তি :সড়ক পথে ভোগান্তি হলেও রেলপথে অনেকটাই স্বস্তিতে বাড়ি ফিরছেন ঘরমুখো মানুষ। আগে থেকে বিক্রি হওয়া টিকিটের যাত্রী নিয়ে নির্ধারিত সময়েই দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে গেছে ট্রেন। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মিয়া জাহান বলেন, এবার সীমিত সংখ্যক টিকিট বিক্রি করায় রেলে তেমন চাপ নেই। স্বাস্থবিধি মেনে নির্ধারিত সময়েই ট্রেনগুলো গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে গেছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে