বন্যা :এখনো পানিবন্দি কয়েক লাখ মানুষ

প্রকাশ | ৩১ জুলাই ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
দেশে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। বেশিরভাগ নদ-নদীর পানি এখনো বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে। ফলে পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে বন্যাকবলিত অঞ্চলের কয়েক লাখ মানুষ। দুর্গত এসব এলাকায় খাদ্য সংকটের পাশাপাশি বাড়ছে পানিবাহিত রোগ। এদিকে বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, বালু, ধলেশ্বরী ও তুরাগ নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় ঢাকার নিম্নাঞ্চল পস্নাবিত হয়ে মূল শহরের দিকে ধেয়ে আসছে বন্যার পানি। গতকালও নতুন করে অনেক এলাকা পস্নাবিত হয়েছে। বিপৎসীমা অতিক্রম করলে মূল শহরের অনেক এলাকায় পানি ঢুকে পড়তে পারে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। আগামী ৭ থেকে ৮ দিন এই পানি থাকতে পারে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এরই মধ্যে চারপাশের নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় ঢাকার নিম্নাঞ্চলে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বেশ কয়েকটি ওয়ার্ড বানের পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব এলাকার বেশিরভাগ রাস্তাঘাট পানির নিচে। ঘরবাড়িতেও পানি ঢুকে পড়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, নগরীর পূর্বাঞ্চল অপেক্ষাকৃত নিচু হওয়ায় স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে এ এলাকার পানির স্রোত বেশি। দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে ধেয়ে আসা বন্যার পানির কারণে রাজধানীসংলগ্ন নদীতে পানি বেড়েছে। আগামী এক সপ্তাহ বালু নদের পানি বিপৎসীমার ওপরে থাকবে। তাই নতুন করে আরও অনেক এলাকা বন্যার পানিতে পস্নাবিত হবে বলে মনে করছেন তারা। যেসব এলাকায় এখনো পানি ঢুকেনি তারাও বন্যার জন্য সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন। অনেকেই বাঁশের মাচা বানিয়ে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সংরক্ষণ ও নিজেদের থাকার জায়গা তৈরি করছেন। এ প্রসঙ্গে আলাপকালে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী খন্দকার মনজুর মোর্শেদ যায়যায়দিনকে বলেন, পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলে দেশে বন্যা হয়েছে। এর প্রভাবেই ঢাকার নিম্নাঞ্চল পস্নাবিত হয়েছে। শহর রক্ষায় কার্যকরী বাঁধ না থাকায় বন্যার পানি রাজধানীতে ঢুকে পড়েছে। এবারের বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে উলেস্নখ করে তিনি আরও বলেন, একেবারে মূল শহরে বন্যা না হলেও পানি কাছাকাছি চলে আসতে পারে। দেখা যায়, উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি কমলেও মানুষের দুর্ভোগ কমেনি। নিম্নাঞ্চলের অনেক পরিবার এখনো পানিবন্দি রয়েছে। পানিবাহিত রোগ নিয়ে বিপাকে বানভাসি। ত্রাণ বিতরণ হলেও চাহিদার তুলনায় তা অপ্রতুল বলে জানান ভুক্তভোগীরা। গাইবান্ধায় দুই দফা বন্যায় গাইবান্ধা চার উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা পানির নিচে। নদ-নদীর পানি কমেনি। দীর্ঘ বন্যায় মানুষ পড়েছে খাদ্য সংকটে। ঢাকার অদূরে টাঙ্গাইলে যমুনাসহ অন্যান্য নদীর পানি কমলেও সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। নওগাঁ এলাকায় পুংলী নদীর বাঁধ ভেঙে গেছে। পস্নাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। দুর্গত এলাকায় দেখা দিয়েছে খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট। পার্শ্ববর্তী জেলা সিরাজগঞ্জে যমুনার পানি কমলেও বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। গত এক মাসের অধিক সময় ধরে বন্যার পানি থাকায় চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে নদী পাড়ের চৌহালী, বেলকুচি, শাহজাদপুর, সদর, কাজিপুর উপজেলার বানভাসি সাড়ে ৩ লাখ মানুষ। শরীয়তপুরে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। পানির তোড়ে শরীয়তপুর-মাওয়া সড়কের বিভিন্ন স্থান ভেঙে গেছে। এতে ঢাকা থেকে ঈদে ঘরে ফেরা মানুষের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। অন্যদিকে ফরিদপুরের পদ্মা, মধুমতি ও আড়িয়াল খাঁ নদ-নদীর পানি কমলেও এখনো বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় শহরের আলীয়াবাদ, বিলমামুদপুর, সাদিপুরের নতুন নতুন এলাকা পস্নাবিত হয়েছে। ৭ উপজেলার পানিবন্দি প্রায় ২ লাখ মানুষ। আগস্টের শুরুতেই বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে দেশের বন্যা পরিস্থিতি আগস্টের প্রথম সপ্তাহ থেকেই ক্রমান্বয়ে উন্নতি হবে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। মধ্যমেয়াদি এক পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, গঙ্গা-পদ্মার পানি সমতল কমতে শুরু করেছে। এক্ষেত্রে চলমান বন্যা পরিস্থিতি আর একদিন অর্থাৎ জুলাই মাসের শেষ পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। এরপর আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহেই ক্রমান্বয়ে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদীর পানি সমতল বাড়তে পারে। ফলে জেলার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি আগামী আরও সাত দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। ডেমরা পয়েন্টে বালু নদী, মিরপুর পয়েন্টে তুরাগ নদী এবং রেকাবি বাজার পয়েন্টে ধলেশ্বরী নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। ফলে ঢাকা জেলার নিম্নাঞ্চলেও বন্যা পরিস্থিতি আরও সাত দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া জানিয়েছেন, বর্তমানে দেশের ১৮টি জেলার নিম্নাঞ্চল পস্নাবিত অবস্থায় রয়েছে। প্রধান প্রধান নদ-নদীর পানি ২৮ পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শুক্রবারের মধ্যে কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, জামালপুর, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, নওগাঁ, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, চাঁদপুর, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর এবং ঢাকা জেলার বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হতে পারে। এ সময় স্থিতিশীল থাকতে পারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্যা পরিস্থিতি। এছাড়া ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা সিটি করপোরেশন সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলগুলোর বন্যা পরিস্থিতি সামান্য অবনতি হতে পারে। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ এদিকে বন্যাকবলিত এলাকায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। একই সঙ্গে বন্যাকবলিত এলাকায় স্বাভাবিক মৎস্য ও প্রাণিজ উৎপাদন অব্যাহত রাখতে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়নে কর্মকৌশল নির্ধারণেরও তাগিদ দিয়েছেন তিনি। বৃহস্পতিবার মৎস্য অধিদপ্তর ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এসব নির্দেশ দেন মন্ত্রী। তার নির্দেশনার আলোকে সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরে নির্দেশনা পত্র পাঠিয়েছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। মৎস্য অধিদপ্তরে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, বন্যা-পরবর্তী মৎস্য খাতের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের কারিগরি সহায়তা দিতে মাঠপর্যায়ের মৎস্য কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে বন্যা-পরবর্তী মৎস্য চাষে পোনার চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে সরকারি-বেসরকারি মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারিদের অতিরিক্ত পোনা উৎপাদন ও মজুত করে পরবর্তীতে ব্যবহারের ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এ আলোকে সরকারি-বেসরকারি খামারে পোনা মজুতের ব্যবস্থা নেওয়া এবং চাষ করা মাছের সুরক্ষায় করণীয় সম্পর্কে মৎস্যচাষি, উদ্যোক্তা ও খামারিদের পরামর্শ এবং কারিগরি সহায়তা দেওয়ার জন্য মৎস্য অধিদপ্তরের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।