পলস্নবী থানায় বিস্ফোরণ

শহিদুলকে ৩ দিন আগেই ধরে নেওয়ার অভিযোগ

প্রকাশ | ৩১ জুলাই ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
শহিদুল ইসলাম

রাজধানীর পলস্নবী থানায় বিস্ফোরণের ঘটনায় গ্রেপ্তার ৩ জনের মধ্যে শহিদুল ইসলামকে তিন দিন আগেই ডিবি পরিচয়ে তুলে নেওয়া হয় বলে দাবি করেছেন তার স্বজনরা। এ ঘটনায় তারা পলস্নবী থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) ওর্ যাবের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। এমন পরিস্থিতিতে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার। এদিকে এ ঘটনায় দায়েরকৃত দুটি মামলায় গ্রেপ্তারকৃত রফিকুল ইসলাম, শহিদুল ইসলাম ও মোশাররফ হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল তাদের আদালতে হাজির করে দুই মামলায় ১৭ দিনের রিমান্ড চাওয়া হলে আদালত ১৪ দিন মঞ্জুর করেন। ওদিকে থানায় বিস্ফোরণের দায় স্বীকার করেছে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)। অনলাইনে জঙ্গি কার্যক্রম পর্যবেক্ষণকারী মার্কিন সাইট ইনটেলিজেন্স গ্রম্নপ আইএসের দায় স্বীকারের বিষয়টি তাদের ওয়েবসাইটে জানিয়েছে। সাইট ইনটেলিজেন্স গ্রম্নপের পরিচালক রিটা কাটজ এক টুইট বার্তায় এ তথ্য জানান। এমন পরিস্থিতিতে সার্বিক বিষয়ে গতকাল ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার আব্দুল বাতেন। তিনি বলেন, পলস্নবী থানায় হামলার ঘটনায় জঙ্গি-সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় থানায় দু'টি মামলা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্তে দেখা গেছে, বিষয়টি 'স্থানীয় আধিপত্য বিস্তার-সংশ্লিষ্ট একটি ক্রিমিনাল অ্যাক্টিভিটিস'। তারা কেন কাকে কীভাবে হত্যা করার জন্য পরিকল্পনা করেছিল সে বিষয়গুলো আমরা খতিয়ে দেখছি। ৩ দিন আগে শহিদুলকে একটি মাইক্রোতে তুলে নেওয়ার অভিযোগ বিষয়ে আব্দুল বাতেন বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। আমরা এ ধরনের কোনো তথ্য পাইনি। আমরা তাদের হাতেনাতে গ্রেপ্তার করেছি। যে বস্তুটি উদ্ধার করেছি (বোমা) সেটা আপনারা দেখেছেন। এর বাইরে যদি কোনো বিষয় থাকে সেটা আমরা তদন্ত করে দেখব।' এর বাইরে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে গ্রেপ্তারকৃত শহিদুলের বড় ভাই রফিকুল ইসলাম দাবি করেন, গত সোমবার সন্ধ্যায় শহিদুলকে তুলে নেওয়া হয়। এ ধরনের সিসি ফুটেজ পাওয়ার পর তারা পলস্নবী থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। ঘটনাটির্ যাবকেও লিখিত আকারে জানানো হয়েছে। শহিদুল মিরপুর-১১ নম্বর সেকশনের বাউনিয়াবাদ এলাকায় সবজি বিক্রেতা আব্দুল কাদেরের ছেলে। ৪ ছেলে এক মেয়ের মধ্যে শহিদুল (২৩) চতুর্থ। শহিদুল বাসচালক। ঘটনার পর থেকে তারা শহিদুলের সন্ধান করছিলেন। এরপর তারা বুধবার সকালে তার ভাইয়ের গ্রেপ্তারের বিষয়টি দেখতে পেয়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে ধরনা দিয়েও কোনো উত্তর পাননি। রফিকুল বলেন, বাসার কাছে আক্কাস আলীর চা-বিস্কুটের দোকান থেকে সোমবার বিকালে শহিদুলকে তুলে নিয়ে যাওয়া। একটি নীল নোয়া মাইক্রোবাসে আসা যুবকরা নিজেদের ডিবি পরিচয় দিয়ে তাকে তুলে নেন। রফিকুলের এমন অভিযোগের প্রেক্ষিত্রে একটি সূত্র দাবি করেছে, শহিদুল বাসচালক কিনা সেটা তারা তার বড় পরিচয় না। এর আড়ালে তিনি একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সক্রিয় সদস্য ছিল। সম্প্রতি তারা মিরপুর এলাকার যুবলীগের এক নেতাকে খুন করার পরিকল্পনা করে। সেই পরিকল্পনার তথ্য জানার পর শহিদুলকে তুলে নেওয়া হয়। এরপর তার দেওয়া তথ্যমতে বাকি দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর তাদের কাছ থেকে অস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধার করে থানার ইন্সপেক্টর অপারেশন ইমরান হোসেনের কক্ষে এনে রাখা হয়। সেখানেই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এদিকে এ ঘটনায় দায়েরকৃত দুটি মামলায় গ্রেপ্তার তিনজনের ১৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। গতকাল বৃহস্পতিবার তাদের ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হলে উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালক অস্ত্র মামলায় সাত দিন ও বিস্ফোরক আইন মামলায় সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ওদিকে ২৯ জুলাই বিস্ফোরণের দায় স্বীকার করেছে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)। অনলাইনে জঙ্গি কার্যক্রম পর্যবেক্ষণকারী মার্কিন সাইট ইনটেলিজেন্স গ্রম্নপ আইএসের দায় স্বীকারের বিষয়টি তাদের ওয়েবসাইটে জানিয়েছে। সাইট ইনটেলিজেন্স গ্রম্নপের পরিচালক রিটা কাটজ এক টুইট বার্তায় বলেন, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় পুলিশের একটি দপ্তরে হামলার দায় স্বীকার করেছে আইএস। উলেস্নখ্য, বুধবার ভোরে পলস্নবী থানায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে চার পুলিশ সদস্যসহ অন্তত পাঁচজন আহত হন। তারা হলেন, ইন্সপেক্টর অপারেশন ইমরান, উপপরিদর্শক (এসআই) সজিব খান, শিক্ষানবিশ উপপরিদর্শক (পিএসআই) রুমি, শিক্ষানবিশ উপপরিদর্শক (পিএসআই) অঙ্কুশ। এছাড়া রিয়াজ নামে একজন অফিস স্টাফ আহত হন। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা দায়ের করেন। মামলা তদন্তের দায়িত্বে রয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের মিরপুর বিভাগ।