বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

প্রাথমিকে বেশি ঝরছে ছেলেরা

যাযাদি ডেস্ক
  ০৫ আগস্ট ২০২০, ০০:০০
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীরা -ফাইল ছবি

সরকারের নানা উদ্যোগের পরেও প্রাথমিক স্তরের ১৮ শতাংশ শিক্ষার্থী এখনো ঝরে যাচ্ছে; যাদের মধ্যে ছেলেদের সংখ্যাই বেশি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান বু্যরোর হিসাবে দেখা গেছে, প্রাথমিকে ছাত্রদের থেকে ছাত্রীদের সংখ্যা বেশি হলেও ছেলেদের ঝরে পড়ার হার বেশি। গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী মনে করছেন, আগে থেকে উপবৃত্তি পাওয়ায় ছাত্রীদের ঝরে পড়ার হার কমেছে, যা ছাত্রদের ক্ষেত্রে শুরু হয়েছে কয়েক বছর আগে। তবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব আকরাম-আল-হোসেনের দাবি, ঝরে পড়ার যে সংখ্যা দেখানো হচ্ছে, প্রকৃত চিত্র তার থেকে 'অনেক ভালো', সরকারের নানান উদ্যোগে এই হার কমেছে। দেশের সরকারি-বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ২০১৯ সালে দুই কোটি এক লাখ ২২ হাজার ৩৩৭ জন শিক্ষার্থী ছিল। এর মধ্যে এক কোটি দুই লাখ ৭৮ হাজার ৮৪৪ জন ছাত্রী; যা মোট শিক্ষার্থীর ৫১ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০১৯ সালে সারাদেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিল ২৮ লাখ দুই হাজার ৫৩৫ জন, যাদের মধ্যে ১৪ লাখ ২৮ হাজার ৯৪২ জন ছাত্র এবং ১৩ লাখ ৭৩ হাজার ৫৯৩ জন ছাত্রী। ২০০৫ সালে প্রাথমিকে ৪৭ দশমিক ২০ শতাংশ শিক্ষার্থী ঝরে পড়ে। ২০১০ সালে এই হার দাঁড়ায় ৩৯ দশমিক ৮০ শতাংশে। এর মধ্যে ৪০ দশমিক ৩০ শতাংশ ছাত্র এবং ৩৯ দশমিক ৩০ শতাংশ ছাত্রী। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সবশেষ জরিপ অনুযায়ী ২০১৯ সালে প্রাথমিকের ১৭ দশমিক ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবনের সমাপ্তি ঘটেছে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির মধ্যেই। এর মধ্যে ১৯ দশমিক ২০ শতাংশ ছাত্র ও ১৫ দশমিক ৭০ শতাংশ ছাত্রী। ছাত্রীদের থেকে ছাত্রদের ঝরে পড়ার হার ৩ দশমিক ৫০ শতাংশ পয়েন্ট বেশি। আগে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের উপবৃত্তি দিত সরকার। ২০১৫ সাল থেকে কয়েকটি শর্তে ছাত্রীদের সঙ্গে সব ছাত্রকেও উপবৃত্তি দেওয়া হচ্ছে। এখন প্রাথমিকের এক কোটি ৪০ লাখ শিক্ষার্থী উপবৃত্তি পাচ্ছে। গত জানুয়ারি থেকে প্রাক-প্রাথমিকের একজন শিক্ষার্থীকে মাসে ৭৫ টাকা, প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মাসে ১৫০ টাকা এবং যেসব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি খোলা হয়েছে সেসব স্কুলের ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মাসে ২০০ টাকা করে উপবৃত্তি দেওয়া হচ্ছে। গণস্বাক্ষরতা অভিযানের রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ছাত্রীদের সঙ্গে এখন ছাত্রদের উপবৃত্তি দেওয়া হলেও এর সুফল পেতে কিছুটা সময় লাগবে। আগে থেকে উপবৃত্তি না পাওয়ায় ছেলেদের ঝরে পড়ার হার বেশি বলে মত দিয়ে তিনি বলেন, মূল ধারার সব বিদ্যালয় এবং উপানুষ্ঠানিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির আওতায় আনতে হবে। 'কারণ সুবিধাবঞ্চিতরাই উপানুষ্ঠানিক শিক্ষায় পড়াশোনা করে; কিন্তু তারাই উপবৃত্তি পাচ্ছে না। শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার আরও কমাতে সরকারকে উপবৃত্তির পরিধি বাড়াবে হবে।' দেশের কোনো কোনো অঞ্চলে ঝরে পড়ার হার বেশি জানিয়ে রাশেদা চৌধুরী বলেন, দারিদ্র্যের কারণে অনেকেই পারিবারিক কাজে বাচ্চাদের সম্পৃক্ত করছেন। 'নরসিংদীর যেসব এলাকায় তাঁত রয়েছে, সেখানে অল্প বয়সের শিশুদের দিয়ে তাঁতের কাজ করানো হয়, এভাবে অনেক শিশু প্রাথমিক স্তর থেকেই ঝরে পড়ে।' প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব আকরাম-আল-হোসেন বলেন, 'রিপিটেশন না ধরলে ঝরে পড়া হার আসলে এর থেকে অনেক কম, এটা সিঙ্গেল ডিজিটে চলে এসেছে।' এখন যেভাবে ঝরে পড়ার হার নির্ধারণ করা হচ্ছে, তা থেকে বের হয়ে এসে অন্যভাবে এই হার কীভাবে নির্ধারণ করা যায় সে বিষয়ে কাজ চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, 'আমাদের উন্নয়ন সহযোগীরাও বলছেন, প্রাথমিকে ঝরে পড়ার হার বাস্তবে আরও কম।' মেয়েদের পাশাপাশি ছেলেদের উপবৃত্তি দেওয়ায় ঝরে পড়ার হার কমেছে মত দিয়ে গণশিক্ষা সচিব বলেন, 'এছাড়া মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগও এখানে ভূমিকা রাখছে।' বিডিনিউজ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে