লেবাননে নিহত রনির মায়ের আর্তনাদে ভারী ভাদেশ্বরা গ্রাম

প্রকাশ | ০৬ আগস্ট ২০২০, ০০:০০

স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
বৈরুতে বিস্ফোরণের ঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মেহেদী হাসান রনির নিহত হওয়ার খবর পেয়ে মায়ের আহাজারি -ফোকাস বাংলা
লেবাননের বৈরুতে বিস্ফোরণের ঘটনায় মারা গেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ভাদেশ্বরা গ্রামের মেহেদী হাসান রনি (২৫) নামে এক যুবক। বুধবার সকালে রনির মৃতু্যর খবর পরিবারের কাছে পৌঁছলে সেখানে হৃদয়বিদারক এক ঘটনার অবতারনা হয়। ছেলেকে হারিয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন মা ইনারা বেগম। তিনি বিশ্বাস করতে পারছিলেন না, তার ছেলে আর বেঁচে নেই। জ্ঞান ফিরলেই তিনি জিজ্ঞাসা করেন, 'আমার জাদু কই। আমার জাদুকে আমার কোলে ফিরিয়ে দাও।' কখনোবা বলছেন, 'আমার ছেলের কিছু হয় নাই। আবার ফিরে আসবে। আমার বাবারে আবার দেখতে চাই।' ছেলের অকাল মৃতু্য কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না তিনি। একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন বাবা তাজুল ইসলামও। পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, চার ভাই-বোনের মধ্যে সবার বড় ছিলেন রনি। গ্রামের একটি স্কুলে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন তিনি। পরে অভাব-অনটনের কারণে আর পড়াশোনা করতে পারেননি তিনি। প্রবাসী বাবা তাজুল ইসলাম বাহরাইনে তেমন সুবিধা করতে না পারায় পরিবারের কথা ভেবে রনিকে বিদেশে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন। ধারদেনা ও সুদে টাকা এনে ২০১৪ সালের ৯ মার্চ লেবাননে পাড়ি জমান রনি। রনি লেবাননে চলে যাওয়ার পর তার বাবা বাহরাইন থেকে দেশে চলে আসেন। ফলে পরিবারের পুরো চাপ পড়ে রনির ওপর। লেবাননের বৈরুতে একটি বিপণিবিতানে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ করতেন রনি। মাসে ২০ হাজার টাকা বাড়িতে পাঠাতে পারতেন তিনি। টানা ৬ বছর পর গত মার্চে দেশে ফেরার কথা ছিল তার। দেশে ফেরার সব প্রস্তুতিও নিয়েছিলেন তিনি; কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে সবকিছু উলটপালট হয়ে যায়। কাজ বন্ধ থাকায় বাড়িতেও টাকা পাঠাতে পারছিলেন না তিনি। গত ঈদুল আজহায় তিনি মাত্র ১৬০০ টাকা পাঠিয়েছিলেন বাড়িতে। রনির বাবা তাজুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার দুপুরে সর্বশেষ রনির সঙ্গে মুঠোফোনে তার কথা হয়। বাবার সঙ্গে কথা বলে মায়ের সঙ্গেও কথা বলেন রনি। রাতে রনির এক সহকর্মী ফোন করে জানান, রনি অসুস্থ, তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বুধবার ভোরে আবার ফোন করে জানানো হয় রনি মারা গেছেন। একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে দিশেহারা বাবা এখন ছেলের লাশ দেশে আনার দাবি জানিয়েছেন সরকারের কাছে। রনির ছোট বোন জেসমিন আক্তার হ্যাপি বলেন, 'প্রতিদিন কাজে যাওয়ার আগে ভিডিও কল দিয়ে আমার দুই মেয়ের সঙ্গে কথা বলতেন ভাই। দেশে আসবে বলে দুই ভাগ্নির জন্য চকোলেট ও খেলনা কিনে রেখেছিল। বাড়ির সবার জন্য কেনাকাটাও করেছিল; কিন্তু লকডাউনের কারণে দেশে ফিরতে পারছিলেন না। এ ব্যাপারে মাছিহাতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আল আমিনুল হক পাভেল বলেন, 'ঘটনার পর থেকেই আমি রনির পরিবারের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি। লাশ দেশে আনার জন্য কিছু নিয়ম অনুসরণ করতে হয়। সে জন্য আমরা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করছি। লাশ আনার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।