বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যাপক সরবরাহ তবুও তেজি সবজির বাজার

প্রতি কেজিতে বেড়েছে পাঁচ থেকে ১০ টাকা হ ২০০ থেকে আড়াইশ টাকার ঘরে কাঁচা মরিচ হ কমেছে রসুনের দাম হ সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ
যাযাদি রিপোর্ট
  ০৮ আগস্ট ২০২০, ০০:০০

পবিত্র ঈদুল আজহার পরে রাজধানীর বাজারগুলোতে প্রচুর সরবরাহ থাকা সত্ত্বেও চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে সবজি। আলু, পটোল, বরবটি, ঢ্যাঁড়স, ধুন্দল, ঝিঙ্গা, করলা, পেঁপেসহ প্রায় সব ধরনের সবজির দাম সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে। ক্রেতাদের অভিযোগ, চলমান বন্যার অজুহাতে ব্যবসায়ীরা সব ধরনের সবজির দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। সবজিভেদে কেজিতে পাঁচ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

শুক্রবার রাজধানীর মগবাজার, মালিবাগ, মালিবাগ রেলগেট বাজার, খিলগাঁও, শান্তিনগর ও সেগুনবাগিচার কাঁচা বাজার এবং এসব এলাকার অস্থায়ী বাজার ঘুরে এ চিত্রই দেখা গেছে।

গত কয়েকদিন ধরে দাম ওঠানামা করছে কাঁচা মরিচের। বর্তমানে ২০০ থেকে আড়াইশর ঘরে রয়েছে রান্নায় অতি প্রয়োজনীয় এ পণ্যটির দাম।

বিক্রেতারা বলছেন, বন্যায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় পাইকার বাজারে সবজির সংকট রয়েছে। এ কারণে দাম বাড়তি। আর ক্রেতারা বলছেন, বন্যা কোনো ইসু্য নয়, প্রতি ঈদের পরেই ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেওয়ার কাজটি করে থাকে।

গতকাল বাজারে প্রতি কেজি ঝিঙা, চিচিঙ্গা, ধুন্দল বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়, কচুর লতি ৬০ থেকে ৭০ টাকায়, টমেটো ১১০ থেকে ১২০ টাকায়, কাঁকরোল আকার ভেদে ৫০ থেকে ৮০, বরবটি ৭০ থেকে ৮০, কচুর ছড়া ৬০ থেকে ৭০, ঢঁ্যাড়স ৪০ থেকে ৫০, পটোল ৪০ থেকে ৫০, পেঁপে ৪০ থেকে ৫০, দেশি শসা ৬০ থেকে ৮০, হাইব্রিড শসা ৫০ থেকে ৬০ এবং আলু ৩৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।

বর্তমানে প্রতি কেজি দেশি কাঁচা মরিচের দাম ২০০ টাকা আর আমদানি (ভারতীয়) করা কাঁচা মরিচের দাম ১৬০ টাকা।

সবজির বাড়তি দাম নিয়ে ভিন্নমত দেখা দিয়েছে ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে। আবদুর রহিম নামে শান্তিনগর বাজারের এক বিক্রেতা বলেন, দেশে বন্যায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় পাইকার বাজারে পণ্য আসছে কম। পাইকার বাজারে পণ্যের সংকটের কারণে বাড়তি দাম রাখা হচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে খুচরা বাজারেও।

তবে তার সঙ্গে একমত নন এ বাজারের ক্রেতা আনোয়ারা। তিনি জানান, বন্যা কোনো ইসু্য নয়, প্রতি ঈদের পরেই ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন। এখন বাজারে ক্রেতা নেই, পণ্য আছে ভরপুর, অথচ বাড়তি দাম রাখছেন ব্যবসায়ীরা। এসব দেখার যেন কেউ নেই।

দাম বেড়েছে ডিমের :ঈদের পর পরই ডিমের দাম বেড়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে ডিম ভেদে

ডজনে বেড়েছে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত। বাজারে প্রতি ডজন লাল ডিম (ছোট) বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা, লাল (বড়) ১২০ টাকায়, দেশি মুরগির ১৭০ টাকায়, সোনালি মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়, হাঁস ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায়।

এদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ১০০ টাকা পর্যন্ত কমেছে ইলিশের দাম। বর্তমানে এসব বাজারে সোয়া কেজি থেকে দেড় কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১০০০ থেকে ১১০০ টাকা, এক কেজি ওজনের ইলিশ ৯০০ থেকে ১০০০ টাকা, ৭৫০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৬৫০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা, ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৪৫০ থেকে ৫৫০ টাকায়। এছাড়া ছোট ইলিশ বিক্রি হচ্ছে আকারভেদে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকার মধ্যে।

কমেছে রসুনের দাম :প্রতি বছর ঈদুল আজহার আগেই গরম মসলার দাম বাড়লেও এবার ব্যতিক্রম ছিল। দাম না বেড়ে নির্ধারিত দামেই বিক্রি হয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, চাহিদার তুলনায় আমদানি বেশি হওয়ায় দাম ছিল সাধ্যের মধ্যে।

ঈদুল আজহার পরেও অপরিবর্তিত আছে গরম মসলার দাম। অন্যদিকে মসলাজাতীয় পণ্যের দাম না বাড়লেও কিছুটা কমেছে রসুনের দাম। আর ঈদের আগে ও পরে দাম ওঠানামার মধ্যে আছে কাঁচা মরিচের। কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা কমে বর্তমানে প্রতি কেজি রসুন বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে।

মসলা ব্যবসায়ীদের তথ্য মতে, দেশে প্রতি বছর জিরার চাহিদা ২০ হাজার মেট্রিক টন, এলাচ ৫ হাজার মেট্রিক টন, লবঙ্গ ১ হাজার মেট্রিক টন, দারুচিনি ২৫ হাজার মেট্রিক টন, গোল মরিচ ২ হাজার মেট্রিক টন। চাহিদার বিপরীতে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ২৫ হাজার মেট্রিক টন জিরা, এলাচ ২ হাজার ৭৫০ মেট্রিক টন, লবঙ্গ ১ হাজার ৬৫০ মেট্রিক টন, দারুচিনি ১৬ হাজার মেট্রিক টন, গোল মরিচ ১ হাজার ৭০ মেট্রিক টন আমদানি করা হয়।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশে প্রতি বছর ঈদুল আজহার আগে আমদানি চালান আসে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে চাহিদার তুলনায় আমদানি বেশি হওয়ায় দাম ঈদের আগে-পরে গরম মসলার দাম বাড়েনি। একই কথা জানান আদা, রসুন ও পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা। চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে বলে জানান তারা।

বর্তমানে এসব বাজারে প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে (মানভেদে) ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, প্রতিকেজি আদা বিক্রি হচ্ছে (মানভেদে) ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি দরে। যা ঈদের আগেও এ দামেই বিক্রি হয়েছিল।

তবে ঈদের আগের বাজারের তুলনায় খুচরায় কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা কমেছে রসুনের দাম। বর্তমানে খুচরা বাজারে প্রতিকেজি রসুন বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে।

বাজারে ভারতীয় জিরা বিক্রি হচ্ছে ২৭০ থেকে ২৮০ টাকা, আফগানি জিরা বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকা কেজি দরে। লবঙ্গ কেজিতে ১০০ টাকা কমে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে (মানভেদে) ৭০০ থেকে ৮৫০ টাকা কেজি দরে। এছাড়া খুচরায় দারুচিনি (চীন) বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৩৩০ টাকা, দারুচিনি (ভিয়েতনাম) প্রতিকেজি ৩৭০ টাকা, এলাচ প্রতিকেজি ২৮০০ থেকে ৪০০০ টাকা, গোলমরিচ (সাদা) ৫৮০ থেকে ৬০০ টাকা, গোলমরিচ (কালো) ৩৮০ থেকে ৪০০ টাকা।

একই দামে এসব পণ্য ঈদুল আজহার আগেও বিক্রি হয়েছিল। এ বিষয়ে খিলগাঁও বাজারের গরম মসলা বিক্রেতা নিজাম বলেন, ঈদের আগে প্রতিবার মসলার সংকট দেখা দেয়ায় দাম বেশি থাকে। এবার চাহিদার তুলনায় বেশি মসলা আমদানি হয়েছে। এখনো বাজারে পর্যাপ্ত মসলা আছে। আবার নতুন আমদানি করা মসলাও বাজারে এসেছে। তাই সে তুলনায় ঈদের আগে বা পরে দাম বাড়েনি আর বাড়ার সম্ভাবনাও নেই।

তবে রান্নায় অতিপ্রয়োজনীয় মসলাজাতীয় পণ্য কাঁচা মরিচের দাম ওঠানামা করছে বারবার। ঈদের কয়েকদিন আগে ২০০ টাকা হলেও ঈদের আগ মুহূর্তে তা ১৬০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়।

তবে ঈদের পরে দেশি কাঁচা মরিচের দাম আবার ২০০ টাকার ঘরে চলে যায়। অন্যদিকে আমদানি করা কাঁচা মরিচ (ভারতীয়, বড় মরিচ) বাজারে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।

এ বিষয়ে মালিবাগ বাজারের খুচরা সবজি বিক্রেতা সুমন বলেন, কাঁচামালের দাম আমদানির ওপর নির্ভর করে। বাজারে মরিচ কম আসায় এখন বাড়তি দাম রয়েছে। বেশি মরিচ এলে দাম কমে যাবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<108085 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1