খুন করে দাফনে অংশ নিল বন্ধু

প্রকাশ | ০৮ আগস্ট ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
চট্টগ্রাম নগরে স্কুলপড়ুয়া মো. রাসেল হত্যায় তার বন্ধু এক ইলেকট্রিক মিস্ত্রি কিশোরকে বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সন্ধ্যায় সে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে খুনের বর্ণনা দিয়েছে। দুজনই কিশোর। একজন স্কুলছাত্র (১৩), আরেকজন ইলেকট্রিক মিস্ত্রি (১৫)। তারা বন্ধু। পাশাপাশি বাসা। সেই সুবাদে প্রায়ই আড্ডা দেয় তারা। কিছুদিন আগে একজনের সঙ্গে আরেকজনের কথাকাটাকাটি হয়। কথাকাটাকাটির জেরে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি কিশোর তার স্কুলপড়ুয়া বন্ধু মো. রাসেলকে খুনের ফন্দি আঁটে। সেই মতো একদিন রাসেলকে সঙ্গে নিয়ে ছুরি কেনে কিশোর। পরে রাসেলকে ডেকে পাহাড়ের চূড়ায় নিয়ে তাকে ছুরিকাঘাতে খুন করে কিশোর। এরপর সে ফিরে এসে তার রক্তমাখা পোশাক পরিবর্তন করে ঘুমিয়ে পড়ে। রাসেলের লাশ যখন উদ্ধার করা হয়, তখন বন্ধুর জন্য কান্নাকাটি করতে থাকে কিশোর। শোকার্ত মনে সে তার বন্ধুর জানাজা ও দাফন-কাফনেও অংশ নেয়। পরে রাসেলের খুনের রহস্য উদ্‌ঘাটন করে পুলিশ। বৃহস্পতিবার কিশোরকে চট্টগ্রাম নগরের খুলশী থানার জালালাবাদ হাউজিং এলাকার বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে সে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে রাসেলকে খুনের বর্ণনা দেয়। গত সোমবার রাত সাড়ে আটটার দিকে নগরের খুলশী থানার পশ্চিম জালালাবাদ শাকবাজার-সংলগ্ন একটি পাহাড় থেকে মো. রাসেল ১৩ নামের এক স্কুলছাত্রের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। রাসেল জালালাবাদ হাউজিং সোসাইটির বালুরপাড় প্রিন্সের কলোনির হুমায়ুন কবিরের ছেলে। স্থানীয় কৃষ্ণচূড়া আদর্শ বিদ্যানিকেতনে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ত রাসেল। ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে গত ৩১ জুলাই বাসা থেকে বের হয় রাসেল। তারপর সে আর বাসায় ফেরেনি। অনেক খোঁজাখুঁজি করে তাকে না পেয়ে তার বাবা হুমায়ুন কবির খুলশী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রণব চৌধুরী বলেন, 'ইলেকট্রিক মিস্ত্রি কিশোর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। সে তার বন্ধু রাসেলকে হত্যার বিস্তারিত বিবরণ জবানবন্দিতে দিয়েছে।' ওসি প্রণব চৌধুরী বলেন, জবানবন্দিতে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি কিশোর বলেছে, রাসেল বন্ধুদের মধ্যে কর্তৃত্ব করত। বিষয়টি পছন্দ করত না সে (ইলেকট্রিক মিস্ত্রি কিশোর)। কিছুদিন আগে তার সঙ্গে রাসেলের কথাকাটাকাটি হয়। গত ৩১ জুলাই বিকালে রাসেলকে সঙ্গে নিয়ে নগরের নিউমার্কেট থেকে সে একটি ছুরি কিনে নিয়ে আসে। এদিন সন্ধ্যায় সে রাসেলকে বলে, পাহাড়ে চার হাজার টাকা লুকিয়ে রেখেছে। টাকা আনার জন্য সে তার সঙ্গে রাসেলকে যেতে বলে। রাসেল বন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে পাহাড়ে যায়। যাওয়ার পর মাটি থেকে একটি প্যাকেট তুলতে বললে রাসেল একটু কাত হয়। এ সময় রাসেলকে মাটিতে ফেলে তার পেটে ছুরিকাঘাত করে সে। রাসেলের মৃতু্য নিশ্চিত হওয়ার পর কিশোর রক্তমাখা কাপড় নিয়ে বাসায় চলে আসে। কেউ যাতে সন্দেহ না করে, সে জন্য রাসেলের লাশ উদ্ধার হওয়ার পর তার জানাজা ও দাফনে সে অংশ নেয়। পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তার করা কিশোরকে চট্টগ্রাম কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে গাজীপুরের কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। মামলার বাদী ও নিহত কিশোরের বাবা হুমায়ুন কবির বলেন, তার ছেলেকে যে হত্যা করেছে, তার বিচার চান তিনি। এভাবে আর কোনো শিশুকে যাতে খুন হতে না হয়।