শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৯১তম জন্মদিন আজ

প্রকাশ | ০৮ আগস্ট ২০২০, ০০:০০

বিশেষ সংবাদদাতা
শেখ ফজিলাতুন্নেছা

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিণী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মা বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৯১তম জন্মদিন আজ। ১৯৩০ সালের ৮ আগস্ট গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এই মহীয়সী নারী। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাতে নিষ্ঠুর, বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়ে তিনি শাহাদাৎ বরণ করেন। মাত্র ৪৫ বছর বয়সে স্বামীর সহযাত্রী হয়ে তিনি পৃথিবী থেকে বিদায় নেন। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন ছাড়াও মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় করোনাকালীন স্বাস্থ্যবিধি মেনে জাতীয়ভাবে দিবসটি উদযাপন করবে। আমৃতু্য মানবিক ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ডাক নাম ছিল রেনু। ছোটবেলায় বাবা-মাকে হারিয়ে স্বজনদের সঙ্গে বেড়ে উঠেন তিনি। মাত্র ৩ বছর বয়সে বাবা শেখ জহুরুল হক ও ৫ বছর বয়সে মা হোসনে আরা বেগম পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নেন। গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলে পড়ার সময় দাদা শেখ কাসেম চাচাতো ভাই শেখ লুৎফর রহমানের ছেলে শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে ফজিলাতুন্নেছার বিয়ে দেন। বিয়ের পর সামাজিক রীতিনীতির কারণে স্কুলের বদলে গৃহশিক্ষকের কাছে লেখাপড়া করেন তিনি। শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছোটবেলা থেকেই গৃহিণী ছিলেন। পরিবারের সদস্যদের প্রতি তিনি সবসময় দায়িত্বশীল ছিলেন। জীবদ্দশায় স্বামী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নানা পরামর্শ ও নির্দেশনা দিয়ে লড়াই-সংগ্রামের প্রেরণা যুগিয়েছেন। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধসহ তৎকালীন সব সংগ্রামে তিনি গণমানুষের পক্ষে নিজ অবস্থান ব্যক্ত করেছেন। বঙ্গবন্ধুর জীবনে সমস্যা-সংকটে তিনি যেমন পরিবারের দায়িত্ব পালন করেছেন পরম মমতায়, তেমনি সাংগঠনিক দায়িত্বও পালন করেছেন যথেষ্ট সাহসিকতার সঙ্গে। বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে মহীয়সী ফজিলাতুন্নেছা মুজিব দিকনির্দেশনা দিয়ে দলীয় নেতা-কর্মী ও অনুসারীদের সক্রিয় রাখতেন। কারাবন্দি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ ও নির্দেশনা নেতা-কর্মীদের জানাতেন। ১৫ আগস্ট বুলেটের সামনে দাঁড়িয়েও বিন্দুমাত্র বিচলিত হননি। হত্যাকারীদের এই জঘন্য কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করেছেন বিপুল বিক্রমে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, বঙ্গবন্ধুর সব সাহসী পদযাত্রায় বেগম মুজিব ছিলেন সক্রিয় সহযাত্রী। আগরতলা মামলায় বঙ্গবন্ধু কারারুদ্ধ হবার পরে তার প্যারোলে মুক্তির জন্য সক্রিয় গ্রম্নপটি সফল হতে পারেনি বঙ্গমাতার জন্য। বাঙালির স্বাধীনতা ও মুক্তির চূড়ান্ত মাহেন্দ্রক্ষণে বঙ্গমাতাই তার জীবনসঙ্গী বঙ্গবন্ধুকে সঠিক পথ বাতলে দিয়েছিলেন। বিশ্বঐতিহ্যের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ নিয়ে দলের নেতাসহ বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নানা পরামর্শ ও নির্দেশনা ছিল। সেসব নিয়ে বঙ্গবন্ধু যখন দোটানায় তখন স্ত্রী ফজিলাতুন্নেছা মুজিবই তাকে বলেছিলেন, কারো নির্দেশনা বা পরামর্শ নয়, তোমার যা মনে আসে তাই বলো। অন্তরের অন্তস্থল থেকে উৎসারিত ১৯ মিনিটের সে ভাষণটি শুধু বাংলাদেশের স্বাধীনতার অনানুষ্ঠানিক ঘোষণাই ছিল না, পৃথিবীর ইতিহাসের একটি বহুল প্রচারিত ও সেরা ভাষণ হিসেবে বিবেচিত হয়। কর্মসূচি বঙ্গমাতার জন্মদিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। আজ সকাল ৯টায় বনানী কবরস্থানে তার সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করা হবে। একই স্থানে কোরআনখানি ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ, অঙ্গ-সহযোগী, ভ্রাতৃপ্রতীম ও সমমনা সংগঠনগুলোসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কর্মসূচি পালনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বঙ্গমাতার জন্মদিন উপলক্ষে আজ বেলা ১২টায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বাংলাদেশ কৃষক লীগ আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে। অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। এছাড়া বঙ্গমাতা স্মরণে যুব মহিলা লীগ ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে মোমবাতি প্রজ্বলন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের করোনাকালীন স্বাস্থ্যবিধি মেনে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মবার্ষিকী যথাযথ মর্যাদায় পালন করার জন্য আওয়ামী লীগ, অঙ্গ-সহযোগীসহ সংগঠনের সব স্তরের নেতা-কর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মসূচি 'বঙ্গমাতা: ত্যাগ ও সুন্দরের সাহসী প্রতীক' প্রতিপাদ্যে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের জন্মবার্ষিকী জাতীয়ভাবে উদযাপন করবে। রাজধানীর শিশু একাডেমি মিলনায়তনে বঙ্গমাতার জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত সীমিত পরিসরের আলোচনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা। প্রধান অতিথি হিসেবে এতে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী। একইভাবে সারা দেশে জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে সমন্বয় করে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন দপ্তর-সংস্থা দিবসটি উদযাপনে আলোচনা সভার আয়োজন করবে। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তাঁর গৌরবময় কর্মজীবনের উপর প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ, পরিবেশনা ও স্মরণিকা প্রকাশ করা হবে। বঙ্গমাতার জন্মবার্ষিকীতে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে করোনায় দেশের সব জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত ও দুস্থ নারীদের আর্থিক সাহায্য ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে সেলাই মেশিন ও মোবাইল ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে নগদ অর্থ প্রদান করা হবে। ৬৪ জেলায় তিন হাজার দুইশ' সেলাই মেশিন ও তেরশ জন দুস্থ ও অসহায় নারীর মধ্যে দুই হাজার করে মোট ছাব্বিশ লাখ টাকা প্রদান করা হবে। একই সাথে গোপালগঞ্জ জেলার দরিদ্র-মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্যে একশ' ল্যাপটপ বিতরণ করা হবে। এছাড়াও মহীয়সী নারী বঙ্গমাতার জন্মদিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারসহ অন্যান্য ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করবে। \হ