শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
দুর্ভোগ কমেনি বানভাসিদের

কমছে পানি, বাড়ছে রোগবালাই

আমাশয়, ডায়রিয়ার মতো পানিবাহিত রোগের সঙ্গে রয়েছে চর্মরোগ। দীর্ঘদিন পানিবন্দি থাকায় মানুষের হাত, পা ও আঙুল ফেটে ঘা হয়ে যাচ্ছে
যাযাদি ডেস্ক
  ১২ আগস্ট ২০২০, ০০:০০
বন্যায় উত্তরাঞ্চলের অনেক এলাকায় রাস্তাঘাট এখনো তলিয়ে আছে। ভোগান্তি নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ চলাফেরা করছে মানুষ। ছবিটি মঙ্গলবার বগুড়ার শেরপুর উপজেলার চৌবাড়িয়া গ্রাম থেকে তোলা

দেশের চলমান বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকা বন্যামুক্ত হচ্ছে। তবে দুর্ভোগ কমেনি বানভাসিদের। পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে নানা রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ছে। আমাশয়, ডায়রিয়ার মতো পানিবাহিত রোগের সঙ্গে রয়েছে চর্মরোগ। দীর্ঘদিন পানিবন্দি থাকায় মানুষের হাত, পা ও আঙুল ফেটে ঘা হয়ে যাচ্ছে। পানি কমতে শুরু করার সঙ্গে দেখা দিয়েছে খাবার পানির সংকট। টিউবওয়েল ডুবে গেছে। আর যেসব টিউবওয়েল জেগেছে সেগুলো দিয়ে পানি উঠছে না। নদী ও খাল-বিলের পানিতে বিভিন্ন আবর্জনা ভাসছে। পানি ফুটিয়ে বা অন্য কোনো উপায়ে খাওয়ার উপযোগী করার উপায় নেই। এদিকে, দুর্গত এলাকার লোকজন রোগব্যাধি নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। কারণ বর্তমান পরিস্থিতিতে চিকিৎসাসেবা-সহায়তা মিলছে না। তার উপর মানুষের হাতে কাজ নেই; ফলে হাতে নেই টাকা পয়সা। এতে করে ঘরবাড়ি মেরামত করা, ভেঙে পড়া নলকূপ ও বাথরুম সংস্কার নিয়ে মানুষ বিপাকে পড়েছেন। এই অবস্থায় সরকারি ও বেসরকারিভাবে ত্রাণ তৎপরতা চললেও প্রয়োজনের তুলনায় তা অপ্রতুল বলছেন বানভাসিরা। মানুষের পাশাপাশি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে গবাদি পশুও। একই সঙ্গে পশু খাদ্যেরও তীব্র সংকট। বেশিরভাগ গরু লাম্পি স্কিন ডিজিজে আক্রান্ত হয়েছে। এদিকে, নাটোর, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী এবং ফরিদপুর জেলার বন্যা পরিস্থিতির আগামী ২৪ ঘণ্টায় উন্নতি হতে পারে বলে মঙ্গলবার বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্রের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে। এছাড়াও আগামী ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা সিটি করপোরেশন সংশ্লিষ্ট নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে, অপরদিকে যমুনা নদীর পানি সমতল হ্রাস পাচ্ছে, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি সমতল বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। যমুনা নদীর পানি সমতল আগামী ২৪ ঘণ্টায় স্থিতিশীল থাকতে পারে। গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি সমতল হ্রাস পাচ্ছে। যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। কুশিয়ারা ব্যতীত উত্তরাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদীসমূহের পানি সমতল হ্রাস পাচ্ছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। পর্যবেক্ষণাধীন ১০১টি পানি সমতল স্টেশনের মধ্যে বৃদ্ধি ২৭টির, হ্রাস ৭২টির, বন্যা আক্রান্ত জেলার সংখ্যা ৪টি, বিপৎসীমার উপরে নদীর সংখ্যা ৬টি, অপরিবর্তিত ২টি এবং বিপৎসীমার উপরে স্টেশনের সংখ্যা ৭টি। ক্ষতিগ্রস্ত সাড়ে ৫৪ লাখ মানুষ মৃত ৪৩ জন দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে বিস্তৃত বন্যায় এ পর্যন্ত অর্ধকোটিরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে এখন বন্যা পরিস্থিতি ক্রমে উন্নতির দিকে। এর মধ্যেই ফের ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বাড়তে শুরু করেছে। মঙ্গলবার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের জাতীয় দুর্যোগ সাড়াদান ও সমন্বয় কেন্দ্র এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। দুর্যোগ সাড়াদান ও সমন্বয় কেন্দ্রের সর্বশেষ সোমবারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বন্যায় \হদেশের ৩৩টি জেলার ৯ লাখ ৭৪ হাজার ৩১৩টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এসব পরিবারের ৫৪ লাখ ৫১ হাজার ৫৮১ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যায় এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৪৩ জন। ১৬৫টি উপজেলা বন্যাকবলিত হয়েছে। উপদ্রম্নত ইউনিয়নের সংখ্যা এক হাজার ৬৬টি। মারা যাওয়াদের বেশিরভাগই শিশু। তারা পানিতে ডুবে মারা গেছে। জামালপুরে সবচেয়ে বেশি ১৫ জন বন্যার পানিতে ডুবে মারা গেছেন। লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নীলফামারী, রংপুর, সুনামগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, জামালপুর, সিলেট, টাঙ্গাইল, রাজবাড়ী, মাদারীপুর, মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, নেত্রকোনা, নওগাঁ, শরীয়তপুর, ঢাকা, মুন্সীগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, নোয়াখালী, লক্ষ্ণীপুর, নাটোর, হবিগঞ্জ, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, মৌলভীবাজার, গাজীপুর, গোপালগঞ্জ ও পাবনা জেলা বন্যাকবলিত হয়েছে বলে জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। বন্যাদুর্গত এলাকায় এ পর্যন্ত ১৯ হাজার ৫০০ টন ত্রাণের চাল, চার কোটি ২৭ লাখ টাকা, শিশুখাদ্য কেনা বাবদ এক কোটি ৫৪ লাখ টাকা, গো-খাদ্য কেনা বাবদ তিন কোটি ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া এক লাখ ৬৮ হাজারটি শুকনা খাবারের প্যাকেট, ৪০০ বান্ডিল ঢেউটিন এবং গৃহ নির্মাণের জন্য ১২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছে মন্ত্রণালয়। দুর্যোগ প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, বন্যাকবলিত ৩৩টি জেলায় এক হাজার ২৯৫টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ৪০ হাজার ৩৬০ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। আশ্রয়কেন্দ্রে আনা গবাদিপশুর সংখ্যা ৬৭ হাজার ৪০৮টি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে