বিনা বিচারে হত্যা মানবতাবিরোধী অপরাধ :মির্জা ফখরুল

প্রকাশ | ১৪ আগস্ট ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
মির্জা ফখরুল ইসলাম
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিনা বিচারে মানুষ খুন-গুম কখনো মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে যায় না। সংবিধান এটাকে সমর্থন করে না। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য, ভিন্ন মতকে দমন করার জন্য এই ধরনের গুম-খুন-অত্যাচার-নিপীড়ন-নির্যাতন ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম ট্রাইবু্যনাল অ্যাক্ট ১৯৭৩ ধারা-২(২)(ক) অধীনে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়। আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে, সংবিধানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, গণতন্ত্রের বিপক্ষে গিয়ে স্বৈরাচারী পথে হেঁটে মানবতা বিরোধী একটা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছে এবং তারা এই ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে উত্তরার বাসা থেকে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে ফখরুল এসব কথা বলেন। বিএনপি মহাসচিব বলেন, ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত এই সরকারের অধীনে এদেশে প্রায় তিন হাজার মানুষ পুলিশ,র্ যাব, ডিবির হাতে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছে। এদের অধিকাংশই বিরোধী দলের নেতা-কর্মী। গত ১০ বছর জেল কাস্টডিতে মারা গেছে ৭৯৫ জন মানুষ, গুম হয়েছে ৬০১ জন, ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৭৮০৬ জন নারী, ১৯৩৪ জন শিশু নির্যাতিত হয়েছে, ১৮ জন শিশু হত্যার শিকার হয়েছে। বিএনপির নেতা-কর্মীদের নামে এক লাখের উপরে রাজনৈতিক মামলা হয়েছে এবং সেখানে আসামি করা হয়েছে প্রায় ৩৫ লাখের উপরে। এই চিত্র বলে দেয়, মহান স্বাধীনতার স্বদেশ প্রিয় জন্মভূমি আজ মৃতু্য উপত্যকা, জলস্নাদের রঙ্গমঞ্চ। বিএনপি অবশ্যই সকল বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের বিচার চায়। গণমাধ্যমে প্রকাশিত আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পরিসংখ্যান তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ২০২০ সালে জানুয়ারি থেকে ২৮ জুলাই পর্যন্ত ১৯৬ জন এক্সট্টা জুডিশিয়াল কিলিং অথবা কাস্টোডিয়াল ডেথের শিকার হয়েছে। ২০১৯ সালে ৩৮৮ জন, ২০১৮ সালে ৪৬৬ জন, ২০১৭ সালে ১৬২ জন, ২০১৬ সালে হয়েছে ১৯৫ জন। তিনি বলেন, অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহাকে পুলিশ হত্যা করেছে বলে পরিবারের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্টভাবে অভিযোগে মামলা করা হয়েছে। সাধারণ মানুষ পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করতে সাহস পায় না। গর্বিত সেনা বাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত মেজরের এই ধরনের হত্যাকান্ডের জন্য অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তারা, সমগ্র জাতি যেভাবে প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠেছে তাতে সিনহার পরিবার সাহস পাচ্ছে, বিচার প্রার্থী হতে পারছে। বিএনপি সব বিনা বিচারে হত্যাকান্ডের বিচার চায় এবং এ দেশের মাটিতে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে এর বিচার হবে বলে মনে করে। তিনি বলেন, সিনহা হত্যাকান্ডের পর আইএসপিআর থেকে জানানো হয়েছে, পুলিশের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হয়েছে ভবিষ্যতে আর এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি করা হবে না। যদি তাই হয়, তাহলে ক্রস ফায়ারে হত্যাকান্ড ঘটানো বা না ঘটানো পুলিশ বাহিনীর সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে ঠান্ডা মাথার সুপরিকল্পিত সিদ্ধান্ত। এতদিন বিএনপির পক্ষ থেকে এটাই বলে আসা হয়েছে। বারবার বলা হয়েছে, ক্রসফায়ারে সাজানো গল্প মিথ্যা, বানোয়াট এবং এটা সরকারের ক্ষমতায় টিকে থাকার নীল-নকশার অংশ। সিনহা হত্যাকান্ডের মাধ্যমে প্রমাণিত বিএনপির অভিযোগ সত্য। সরকার পুলিশ ওর্ যাবের ওপর নির্ভরশীল হয়ে জনগণের অধিকার হরণ করে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে 'হত্যা-খুন-গুম করে' ক্ষমতায় টিকে আেেছ। তিনি আরও বলেন, আজকে কোভিড-১৯ এর আগ্রাসনে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভঙ্গুর হয়ে গেছে, মানুষের নূ্যনতম স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার যে অধিকার তা ধবংস হয়ে গেছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন বিখ্যাত মানুষ মিঠু। পত্রিকার তথ্য অনুযায়ী সে বহাল তবিয়তে দেশ ছেড়ে বাইরে চলে গেছে। কী চমৎকার! যারা লুণ্ঠন করেছে, তারা চলে যাবে দেশ ছেড়ে সহজেই।