শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

এবার চামড়ার দাম নিয়ে সন্তুষ্ট আড়তদাররা

যাযাদি ডেস্ক
  ১৬ আগস্ট ২০২০, ০০:০০
চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণে ব্যস্ত ট্যানারি শ্রমিকরা -ফাইল ছবি

এবারের ঈদে পশু কোরবানির পর চামড়া বিক্রি করতে গিয়ে বেশ বিপাকেই পড়তে হয়েছিল ব্যক্তি ও চামড়া সংগ্রহকারী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে; অন্য বছরগুলোর চেয়ে অনেক কমে প্রায় পানির দরে বিক্রি হয়েছে চামড়া। তবে কোরবানির এক সপ্তাহ পর ট্যানারি মালিকরা সরকার নির্ধারিত দামে ও অনেক ক্ষেত্রে কিছুটা বেশি দামে লবণযুক্ত চামড়া কেনায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন আড়তদাররা। ঢাকায় লবণযুক্ত চামড়া প্রতি বর্গফুট ৩৫-৪০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ২৮-৩২ টাকায় কেনা হয়েছে চামড়া। সেই হিসাবে ট্যানারি মালিকদের কাছ থেকে প্রতিটি চামড়ার জন্য ৭০০-৯০০ টাকা পর্যন্ত পেয়েছেন ব্যাপারী ও আড়তদাররা। বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আফতাব আলী বলেন, অন্য বছরের তুলনায় এবার অল্প সময়ের মধ্যে কোরবানির চামড়া বিক্রি হয়ে গেছে। সরকার নির্ধারিত দামেই পোস্তার প্রায় ৯০ ভাগ চামড়া বিক্রি হয়ে গেছে। এর মধ্যে ৫০ শতাংশ চামড়া ট্যানারিতে স্থানান্তরও হয়ে গেছে। 'আকিজ ট্যানারি, এপেক্স, বে-ট্যানারিসহ অনেকগুলো \হট্যানারি কিছু কিছু চামড়া সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দাম দিয়ে কিনেছে। কারণ, তারা যাচাই-বাছাই করে নিম্নমানের চামড়া বাদ দিয়েছে।' ঈদের দিনের কাঁচা চামড়া সংগ্রহের ক্ষেত্রে দামের বিশৃঙ্খলার কথা তুলে ধরে এই ব্যবসায়ী বলেন, তারা এবারও সরকারের কাছে একেবারে কাঁচা চামড়ার দাম নির্ধারণের সুপারিশ করেছিলেন। কিন্তু সরকার শুনেনি। 'সরকার যেভাবে লবণযুক্ত চামড়ার দাম বেঁধে দিয়েছে, একইভাবে যদি মাঠপর্যায় থেকে কাঁচা চামড়ার একটা দাম বেঁধে দেওয়া যেতে, তাহলে এতটা হা হুতাশ হতো না। কেউ চাইলেও অনৈতিক মুনাফা করতে পারত।' এই সমিতির হিসাবে, এবারের কোরবানিতে সারাদেশে প্রায় ৪০ লাখের মতো পশু জবাই হয়েছে। আর ঢাকার আড়তগুলো থেকে প্রায় পাঁচ লাখ চামড়া সংগ্রহ করেছে ট্যানারিগুলো। বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত উলস্নাহ জানান, এবার ময়মনসিংহের শ্বম্ভুগঞ্জ হাটের আড়ত থেকে কোরবানির পশুর চামড়া কেনা শুরু করেছেন তারা। আরও এক থেকে দেড় মাস ট্যানারি মালিকরা আড়তদারদের সঙ্গে বোঝাপড়া করে সারাদেশ থেকে চামড়া কিনবেন। তবে ট্যানারিগুলোতে এখনো আগের অন্তত তিন হাজার কোটি টাকার চামড়া মজুত পড়ে থাকায় ট্যানারিগুলো নতুন করে কাঁচা চামড়া কেনার আগ্রহ দেখাচ্ছে না বলে জানান বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন-বিটিএর সভাপতি শাহীন আহমেদ। বাংলাদেশে উৎপাদিত ফিনিশড লেদারের অধিকাংশই রপ্তানি হয় চীনে। তবে চলতি বছরের শুরুতে মহামারি দেখা দেওয়ার পর এই রপ্তানি ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এ কারণে ট্যানারিগুলোতে চামড়ার চাহিদা কম বলে জানিয়েছেন ট্যানারি মালিকরা। বিটিএর সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত বলেন, চলতি বছরের শুরুতে চীন এ দেশের অনেক অর্ডার বাতিল করেছে। সেই বাতিল হওয়া পণ্যগুলো এখন অর্ধেক দামে কিনে নিতে চাচ্ছে। চামড়া খাত-সংশ্লিষ্টদের মতে, প্রতিবছর কোরবানিতে সারাদেশে গরু, ছাগল, মহিষ মিলিয়ে প্রায় ৬০-৭০ লাখ পশু কোরবানি দেওয়া হয়, যা সারাবছর জবাই হওয়া পশুর অর্ধেকেরও বেশি। এর মধ্যে প্রায় ৪০ লাখ গরু জবাই দেওয়া হয় বলে খাত সংশ্লিষ্টদের হিসাব। তবে এবার মহামারি ও বন্যার কারণে পশু কোরবানি প্রায় ৪০ শতাংশ কমে গেছে। ২০১৫-২০১৭ সালের দিকে প্রতিটি গরুর কাচা চামড়া গড়ে ৮০০-১০০০ হাজার টাকায় বিক্রি করা গেলেও এ বছর ২৫০ টাকা থেকে ৩০০-৪০০ টাকায় চামড়া কিনেছেন ফড়িয়ারা; যা সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে প্রায় অর্ধেক কম। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে সরকার নির্ধারিত মূল্যে চামড়া বিক্রি হয়েছে। গত বছর ফড়িয়ারা গড়ে ৫০০-৬০০ টাকা করে কোরবানির পশুর চামড়া কিনলেও পরে তা বিক্রি করতে গিয়ে সঠিক লভ্যাংশ অর্জন করতে পারেননি। ফলে এবার অনেক ফড়িয়ায়ই চামড়া কিনতে মাঠে নামেননি; আবার যারা নেমেছেন, তারা পেয়েছেন অস্বাভাবিক মুনাফা করার সুযোগ। বিডিনিউজ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে