মহালয়ায় দেবী দুর্গাকে মর্ত্যে আবাহন

প্রকাশ | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
বৃহস্পতিবার ভোর থেকে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরসহ সারাদেশে শুরু হয় মহালয়ার আচার। ঘট স্থাপন ও পূজার মধ্য দিয়ে 'মহাশক্তি, মহামায়া, দুর্গতিনাশিনী' দেবী দুর্গাকে মর্ত্যে 'নেমে' আসার আহ্বান জানানো হয়। শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রাক্কালে মহালয়ায় তার কাছেই রোগ বিনাশের আর্জি জানালেন ভক্তরা। বাঙালি হিন্দুরা করোনাভাইরাসের প্রকোপ থেকে উত্তরণের পর সমৃদ্ধশালী পুণ্যভূমির জন্য প্রার্থনা জানান 'মাতৃরূপী' দশভুজা দেবীর কাছে। হিন্দু আচার অনুযায়ী, মহালয়া, বোধন আর সন্ধিপূজা- এই তিন পর্ব মিলে দুর্গোৎসব। সাধারণত আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠ থেকে দশম দিন হয় দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা। আশ্বিন মাসের এই শুক্লপক্ষকে বলা হয় দেবীপক্ষ। দেবীপক্ষের শুরু হয় যে অমাবস্যায়, সেদিন হয় মহালয়া; সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, মহালয়ার প্রাক-সন্ধ্যায় 'কাত্যায়নী মুনির কন্যা' রূপে মহিষাসুর বধের জন্য দেবী দুর্গার আবির্ভাব ঘটে। কিন্তু পঞ্জিকার হিসাবে এবার আশ্বিন মাস 'মল মাস', মানে অশুভ মাস। সে কারণে বৃহস্পতিবার মহালয়া হলেও দেবীর পূজা এবার আশ্বিনে হবে না। পূজা হবে কার্তিক মাসে। সেই হিসাবে এবার দেবী ১ \হদুর্গা 'মর্ত্যে পৌঁছাবেন' মহালয়ার ৩৫ দিন পরে। ঢাকেশ্বরী মন্দিরের প্রধান পুরোহিত রঞ্জিত চক্রবর্তী বলেন, 'মল মাসে পূজাদি করা যাবে না। বৈদিকভাবেই নিষেধ আছে।' বৃহস্পতিবার ভোরে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে মঙ্গল প্রদীপ জ্বালিয়ে মহালয়ার অনুষ্ঠানের সূচনা করেন বাংলাদেশে ভারতের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত রীভা গাঙ্গুলী দাস। এরপর ঢাকের বোলে চন্ডি পাঠে শুরু হয় মহালয়ার পর্ব। পুরোহিত রঞ্জিত চক্রবর্তী বলেন, প্রথমে চন্ডীপাঠ করে দেবীকে আহ্বান জানানো হয়। এ সময় মঙ্গলঘট স্থাপন করে তাতে ফুল, তুলসী ও বেলপাতা দিয়ে করা হয় পূজা। এছাড়া সারাদিনই বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা থাকে মহালয়ায়। দেবীপক্ষের আগের পক্ষ হলো পিতৃপক্ষ। হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী, জীবিত ব্যক্তির আগের তিন পুরুষ পর্যন্ত পিতৃলোক বা যমলোকে বাস করেন। আর এই পিতৃলোকের অবস্থান স্বর্গ ও মর্ত্যের মাঝামাঝি স্থানে। পিতৃলোকের শাসক মৃতু্য দেবতা যম। তিনি সদ্য মৃত ব্যক্তির আত্মাকে মর্ত্য থেকে পিতৃলোকে নিয়ে যান। এরপর পরের প্রজন্মের একজনের মৃতু্য হলে আগের প্রজন্মের একজন পিতৃলোক ছেড়ে স্বর্গে গমন করেন। একই সঙ্গে পরমাত্মায় বা ঈশ্বরে বিলীন হন। এ কারণে মহালয়ায় হিন্দুরা তাদের পূর্বে মারা যাওয়া তিন প্রজন্মের ব্যক্তিদের স্মরণ বা তর্পণ করে থাকেন। এ দিন শ্রদ্ধানুষ্ঠানের মাধ্যমে তাদের আত্মার শান্তি কামনা করে অঞ্জলি দেন তারা। শারদীয় দুর্গাপূজা বাঙালি হিন্দুদের সবচেয়ে বড় উৎসব। কিন্তু মহামারির দিনে এবারের দুর্গোৎসবে সেই আড়ম্বর আর থাকছে না, মহালয়া থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রেই থাকছে স্বাস্থ্যবিধির কড়াকড়ি। রঞ্জিত চক্রবর্তী বলেন, 'মা আসছেন। তার আগমন ধ্বনি যেন অন্তরে অন্তরে প্রতিধ্বনিত হয়। আমরা দেবী মায়ের কাছে প্রার্থনা করব, তিনি যেন এ সংকট থেকে দেশ, জাতি ও গোটা পৃথিবীকে উত্তরণ করেন। তিনি সংকটতারিণী, জগজ্জননী, বিপদনাশিনী। তিনিই পারেন আমাদের রক্ষা করতে।' মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি শৈলেন নাথ মজুমদার জানান, এ বছর ঢাকায় ২৩৮টির মতো মন্ডপে পূজা হবে। সম্প্রতি ঢাকা মহানগরের ৫০টি থানা কমিটির সঙ্গে তাদের বৈঠক হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে পূজা কীভাবে করা যাবে, তা নিয়ে আরও কয়েকটি বৈঠকের পর সারা দেশে মন্ডপের সংখ্যা নির্ধারিত হবে। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জি বলেন, পূজামন্ডপে বয়োবৃদ্ধদের আসতে নিরুৎসাহিত করা হবে। তারা যেন 'ডিজিটাল পদ্ধতিতে' অঞ্জলি দিতে পারেন, সে ব্যবস্থা রাখতে প্রতিটি কমিটিকে বলে দেওয়া হবে। পঞ্জিকা অনুযায়ী, ২২ অক্টোবর মহাষষ্ঠী তিথিতে হবে বোধন, দেবীর ঘুম ভাঙানোর বন্দনা পূজা। পরদিন শুক্রবার সপ্তমী পূজার মাধ্যমে শুরু হবে দুর্গোৎসবের মূল আচার-অনুষ্ঠান। ২৬ অক্টোবর সোমবার মহাদশমীতে বিসর্জনে শেষ হবে দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা।