বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

আন্দোলন ছাড়া কেউই রক্ষা পাবে না : মির্জা ফখরুল

যাযাদি রিপোর্ট
  ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০
মির্জা ফখরুল ইসলাম

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষাপটে গণতান্ত্রিক আন্দোলন ছাড়া কেউই রক্ষা পাবে না। এখন থেকে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন ছাড়া দেশ, গণতন্ত্র, সাংবাদিকতা কাউকেই রক্ষা করা যাবে না, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকেও রক্ষা করা যাবে না। শনিবার দুপুরে এক ভার্চুয়াল আলোচনায় বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন। 'মুক্ত সাংবাদিক অন্তর্ধান' দিবস উপলক্ষে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের উদ্যোগে সংগঠনের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলামের সঞ্চালনায় ভার্চুয়াল এ অনুষ্ঠানটি হয়েছে। মির্জা ফখরুল বলেন, অবস্থা বদলে দেওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। বদলে দেওয়ার একটাই পথ হচ্ছে, আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এই ভয়াবহ ফ্যাসিস্ট সরকারকে সরাতে হবে। গণতান্ত্রিক আন্দোলনই হচ্ছে এর একমাত্র পথ। বর্তমান অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে সবার ঐক্য দরকার। গোটা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালানোর আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই সরকারের কোনোরকমের মূল্যবোধ নেই। আওয়ামী লীগ ও গণতন্ত্র একসঙ্গে যায় না, কখনোই যায় না। ওদের যে রসায়ন তার মধ্যে গণতন্ত্র হয় না। ওদের ভাবটাই হচ্ছে যে, তারা ছাড়া আর কেউ নেই। তারাই একমাত্র দেশকে নিয়ন্ত্রণ করবে, দেশ চালাবে, তারাই সবকিছু। সেজন্য এই অবস্থা থেকে মুক্ত হতে হলে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, পারস্পরিক সমস্যাগুলোকে দূর করতে হবে। ন্যাশনাল ইউনিটি গণতন্ত্রের জন্য বেশি প্রয়োজন। গণমাধ্যমের ওপর সরকারের নিপীড়ন-নির্যাতনের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বর্তমান অবস্থা নিঃসন্দেহে সবচেয়ে খারাপ সময়, সবচেয়ে কঠিন সময়। এখানে এমন একটা অবস্থা তৈরি করে ফেলা হয়েছে বিশেষ করে ভয়ভীতি ও ত্রাস সৃষ্টি করে যে আজকে কেউ সাহস করছে না। যত সাংবাদিক এখন বেকার আছেন, এত বেকার বোধহয় কখনো ছিল না। পঁচাত্তর সালে বাকশাল করার পর ৪টি পত্রিকা রেখেছিল, বাকিগুলো চলে গিয়েছিল। এখন কিন্তু পরোক্ষভাবে ওইরকমই একটা অবস্থা তৈরি হয়েছে। তাদের কথা যারা বলবে, তাদের পক্ষে যারা থাকবে তাদের পত্রিকা চলবে, তাদের চ্যানেল চলবে, তাদের গণমাধ্যমগুলো চলবে। অন্য যারা আছে তাদেরগুলো তারা চলতে দেবে না। তিনি বলেন, সাংবাদিকরা অনেক কষ্ট করছেন, অনেকের চাকরি নেই, অনেকে জেল-জুলুমের মামলার মধ্যে পড়েছেন। সাগর-রুনি থেকে শুরু করে অনেকে খুন হয়ে গেছেন, অনেকে গুম হয়ে গেছেন, অনেককে হত্যা করা হয়েছে। তারপরও সাংবাদিকদের ঘুরে দাঁড়াতে হবে। কারণ সাংবাদিকরাই হচ্ছেন গণতন্ত্রের মূলভিত্তি। মুক্ত সাংবাদিকতা বা মুক্ত সংবাদমাধ্যম না থাকলে গণতন্ত্র কখনোই প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। গণতন্ত্রের মূল বিষয়টাই হচ্ছে গণমাধ্যম সব দেশে, সব যুগে, সব কালে সাংবাদিকরা প্রধান একটা ভূমিকা পালন করে। রুহুল আমিন গাজী বলেন, প্রবীণ সম্পাদক আবুল আসাদ গ্রেপ্তার হয়ে দীর্ঘদিন কারাগারে আছেন, জামিন পাচ্ছেন না। জনপ্রিয় টিভি চ্যানেল দিগন্ত টিভি, চ্যানেল ওয়ান বন্ধ, আমার দেশ পত্রিকা বন্ধ। লেখার তো কোনো স্বাধীনতা নেই, ক্ষমতা নেই। এভাবে আইন করেছে যে, আপনি কিছুই করতে পারবেন না। ভিন্নমত পোষণকারী কোনো সংবাদপত্র কোনো ধরনের বিজ্ঞাপন পাচ্ছে না। কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি বিজ্ঞাপন দিলেও তাকে নির্যাতনের শিকার হতে হয়। এইভাবে সাংবাদিক নির্যাতন হচ্ছে। এই অবস্থার অবশ্যই পরিবর্তন আনতে হবে, গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে। সভাপতির বক্তবে কাদের গনি চৌধুরী বলেন, সাধারণ মানুষের বাক্‌স্বাধীনতার ক্ষেত্রে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন মূর্তিমান আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করার মধ্য দিয়ে এই আইন সাংবাদিকদের কলমকে, মানুষের মুখকে বন্ধ রাখার চক্রান্ত হচ্ছে, ভিন্নমত দমনে এই আইন বড় হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে। এটা সংবিধানবিরোধী আইন। আইনটি অবিলম্বে বাতিলের দাবি জানান তিনি। ভার্চুয়াল এই আলোচনায় জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া মো. গোলাম পারোয়ার, বিএফইউজের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, বিএফইউজের মহাসচিব এম আবদুলস্নাহ, সাবেক মহাসচিব এম এ আজিজ, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, ডিইউজে নেতা বাকের হোসাইন, আবদুল আউয়াল ঠাকুর, নুরুল আমিন রোকন, বাছির জামাল, রাশেদুল হক, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুরসালীন নোমানী, ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি একেএম মহসিন বক্তব্য রাখেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে