'স্বাস্থ্যসেবায় গ্রামের মানুষ অবিচারের শিকার'

প্রকাশ | ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
সরকারি চিকিৎসকদের গ্রামে গিয়ে সেবা দিতে 'অনীহার' বিষয়টি সামনে এনে হতাশা প্রকাশ করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। তিনি বলেছেন, 'একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আমার দুঃখ হয়, মেডিকেল প্রফেশন থেকে গ্রামাঞ্চলের মানুষের সেবার জন্য আমরা যতটুকু আশা করেছিলাম, ওই ধরনের সহায়তা আমরা পাইনি।' শনিবার ইকোনমিকস স্টাডি সেন্টার (ইএসসি) আয়োজিত 'বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের ত্রম্নটি বিশ্লেষণ : ভবিষ্যৎ নীতিনির্ধারণের প্রাসঙ্গিকতা' শীর্ষক অনুষ্ঠানে মন্ত্রীর এই মন্তব্য আসে। চিকিৎসকদের অনীহার ফলে গ্রামের মানুষ 'অবিচারের শিকার' হচ্ছে মন্তব্য করে এমএ মান্নান বলেন, এতটা অবিচারের শিকার হওয়ার কথা তাদের ছিল না। সাধারণ মানুষের অর্থেই গত ৫০ বছরে আমরা বিশাল বড় অবকাঠামো গড়ে তুলেছি। সরকারি চিকিৎসকদের মধ্যে যাদের গ্রামে বা মফস্বলে পাঠানো হয়, তাদের নিয়মিত কর্মস্থলে না থাকার আভিযোগ অনেক পুরানো। শহুরে সুযোগ-সুবিধা না পাওয়া কিংবা প্রাইভেট প্র্যাকটিসের সুযোগ কম থাকার কারণে অনেকেই মাসের পুরো সময় উপজেলা পর্যায়ে নিজের কর্মস্থলে থাকতে চান না। ফলে গ্রামাঞ্চলের মানুষ জরুরি স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হয়। এ নিয়ে খোদ সরকারপ্রধানও বিভিন্ন সময় সরকারি চাকরিতে থাকা চিকিৎসকদের হুঁশিয়ার করেছেন। বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা যাতে হাসপাতালে বসেই প্রাইভেট প্রাকটিস করতে পারেন, সে জন্য গত বছর একনেক সভায় সরকারি হাসপাতালগুলোতে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণের নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। সে প্রসঙ্গ টেনে পরিকল্পনান্ত্রী বলেন, 'হয়ত অন্তর্নিহিত বড় কোনো বাধা আছে, না হলে কেন সরকার আমাদের সামান্য সম্পদ থেকে একের পর এক নানা ধরনের ইনসেনটিভ দিচ্ছে? এরপরও তাদের (চিকিৎসকদের) গ্রামে রাখতে পারছি না। গ্রামের দিকে উনারা যেতে অনীহা প্রকাশ করেন।' নিজের চাকরিজীবনের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে সাবেক এই সরকারি কর্মকর্তা বলেন, 'আমি যখন আমলা ছিলাম তখন আমি মাঠে-ময়দানে কাজ করেছি। এখন চিকিৎসার অবকাঠামো আছে, কিন্তু গ্রামাঞ্চলের মানুষ চিকিৎসাসেবা পাচ্ছে না। এটাকে ঠিক কীভাবে বর্ণনা করব, আমার জানা নেই।' নিজের এক ছেলেও যে চিকিৎসা পেশায় আছেন, সে কথা জানিয়ে মান্নান বলেন, 'তাদের সবার প্রতি সম্মান রেখেই আমি কথাটা বলছি।' এ বিষয়ে সরকারের আন্তরিকতার বিষয়টি বোঝাতে গিয়ে তিনি বলেন, 'কোভিড-১৯ এর টেস্টের অবকাঠামো, যেটা করতে ছয় থেকে ৯ মাস সময় লাগত, সেই কাজ আমরা মাত্র ২৪ ঘণ্টায় করে আড়াই হাজার কোটি টাকার সক্ষমতা বৃদ্ধির কাজ করে দিয়েছি। ডাক্তারদের এসব কর্মকান্ড নাগরিকদের পীড়া দেয়।' এর আগে টিকা দেওয়ার মাধ্যমে ম্যালেরিয়া, যক্ষ্‌মা, কালাজ্বরের মতো রোগ নিয়ন্ত্রণে 'দৃশ্যমান সাফল্য' পাওয়ার কথা তুলে ধরে পরিকল্পনান্ত্রী দাবি করেন, কোভিড-১৯ সংক্রমণকেও 'দ্রম্নত সহনীয় পর্যায়ে' নিয়ে আসতে উন্নত অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশ 'ভালো করেছে'। কোভিড-১৯ মোকাবিলায় বরাদ্দ অর্থের অপচয়, ভুলভাবে ব্যয় করাসহ বিভিন্ন অনিয়মের কথা স্বীকার করেই চলমান সংকটে স্বাস্থ্য খাতে যত দ্রম্নত সম্ভব বরাদ্দ বাড়ানোর কথা বলেন মান্নান। বিদ্যমান বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করে বাংলাদেশে 'সার্বজনীন স্বাস্থ্য মান' অর্জন করার আশাবাদের কথাও তিনি বলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. রুমানা হকের সঞ্চালনায় ভার্চুয়াল এই অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. তৌফিক জোয়ারদার দেশের জনস্বাস্থ্য বিভাগে 'দক্ষকর্মীর' অভাব থাকার বিষয়টি তুলে ধরেন। এ ক্ষেত্রে 'যথার্থ পেশাদার পথে দক্ষ লোক' নিয়োগের জন্য সরকারি চাকরিতে 'পাবলিক হেলথ সেক্টরে' আলাদাভাবে নিয়োগ শুরুর সুপারিশ করেন তিনি। প্যানেল আলোচনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক শাহাদাত হোসেন বলেন, 'আমাদের যা সম্পদ আছে, তা ব্যবহারের ক্ষেত্রেও ঘাটতি রয়েছে।' হাওড় অঞ্চলের চিত্র তুলে ধরে তিনি সম্পদ বণ্টন ও ব্যবহারে বিরাজমান বৈষম্য কমিয়ে আনার তাগিদ দেন। স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ বলেন, দেশের ১৬ কোটি ৪০ লাখ মানুষের যথার্থ সেবা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্যসেবাকে ঢেলে সাজাতে হবে। সে জন্য স্বাস্থ্য খাতের জন্য মহাপরিকল্পনা করে সমন্বয়ের মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন করতে হবে।