বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাস্থ্যের টাকার কুমির ড্রাইভার মালেক অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার

যাযাদি রিপোর্ট
  ২১ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০
আব্দুল মালেক

তিনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিবহণ পুলের সামান্য একজন গাড়িচালক। শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণি পাস। ১৯৮২ সালে সাভার স্বাস্থ্য প্রকল্পে চালক হিসেবে যোগদান করেন। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তৃতীয় শ্রেণির সাধারণ কর্মচারী হয়েও ঢাকার বিভিন্ন স্থানে গড়ে তুলেছেন একাধিক বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি আলোচিত এই গাড়িচালক আব্দুল মালেক ওরফে ড্রাইভার মালেকের (৬৩)। গতকাল রোববার ভোরে রাজধানীর তুরাগ এলাকা থেকে অবৈধ অস্ত্র, জাল নোটের ব্যবসা ও চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগের্ যাবের একটি দল তাকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় তার কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন, পাঁচ রাউন্ড গুলি, দেড় লাখ বাংলাদেশি জাল নোট, একটি ল্যাপটপ ও মোবাইল সেট উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা করা হয়েছে। জানা গেছে, গ্রেপ্তার মালেক এলাকায় চাঁদাবাজিতেও জড়িত। এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে রোববার ভোরের্ যাব-১ এর একটি দল আব্দুল মালেকের তুরাগ থানাধীন কামারপাড়ার বামনেরটেকের ৪২নং হাজী কমপেস্নক্সে অভিযান চালায়। এ সময় সেখান থেকে তাকে বিদেশি পিস্তল, ম্যাগাজিন, গুলি, জাল নোটসহ গ্রেপ্তার করা হয়। র্ যাব-১ এর অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাফী উলস্নাহ বুলবুল যায়যায়দিনকে বলেন, সম্প্রতিক সময়ে নানা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে সরেজমিনে অনুসন্ধান শুরু করের্ যাবের গোয়েন্দারা। এতে দেখা যায়, সাধারণ মানুষকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে শক্তির মহড়া ও দাপট দেখিয়ে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছেন এবং জনজীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছেন ড্রাইভার মালেক। তার ভয়ে এলাকায় সাধারণ মানুষের মনে সর্বদা আতঙ্ক বিরাজ করে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় চাঁদাবাজি, অবৈধ অস্ত্রব্যবসা এবং জাল নোটের ব্যবসা করে আসছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতের্ যাব-১ বিষয়টি আমলে নিয়ে গতকাল ভোরে তাকে গ্রেপ্তার করে। তিনি জানান, প্রাথমিক 'অনুসন্ধানের একপর্যায়ে তার আয়-ব্যয়ের সঙ্গে দৈনন্দিন জীবনযাত্রার মান ও সম্পদের বিস্তার অসামঞ্জস্যতা লক্ষ করা গেছে। একজন তৃতীয় শ্রেণির সাধারণ কর্মচারী হয়েও ঢাকার বিভিন্ন স্থানে তার একাধিক বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন ব্যাংকে নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণে অর্থ গচ্ছিত আছে বলে জানা যায়।' তার সম্পদের মধ্যে রয়েছে, তুরাগের দক্ষিণ কামারপাড়ায় তার স্ত্রীর নামে ২টি ৭ তলা ভবন ও হাতিরপুলে ৪ কাঠা জমিতে নির্মাণাধীন ১০ তলা ভবন রয়েছে। এছাড়া তুরাগের কামারপাড়ায় ১৫ কাঠা জমিতে একটি ডেইরি ফার্ম ও বিভিন্ন ব্যাংকে তার নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ টাকা জমা রয়েছে। লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাফী উলস্নাহ বুলবুল, 'তিনি পেশায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিবহণ পুলের একজন চালক। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণি। ১৯৮২ সালে সাভার স্বাস্থ্য প্রকল্পে চালক হিসেবে যোগদান করেন।' পরে ১৯৮৬ সালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিবহণ পুলে চালক হিসেবে চাকরি শুরু করেন। বর্তমানে তিনি প্রেষণে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা অধিদপ্তরে কর্মরত। এ ঘটনায় মালেকের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও জাল নোটের ব্যবসায় জড়িত থাকা এবং অস্ত্র ও জাল নোট উদ্ধারের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট আইনে পৃথক দুটি মামলা করা হয়েছে। পাশাপাশি তিনি কীভাবে এত টাকার মালিক হয়েছেন সে বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তার এসব টাকা অবৈধভাবে উপার্জন করা বলে স্বীকার করেছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে