কিশোর গ্যাং লিডার হূদয়সহ গ্রেপ্তার ২

'দি বস'র হাতে খুন হন কলেজছাত্র সোহাগ

প্রকাশ | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
রাজধানীর উত্তরখানে মো. সোহাগ হত্যার প্রধান দুই আসামি কাটার রাসেল ও হৃদয়কে আটকের পর মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করের্ যাব। ছবিটি কারওয়ান বাজারের্ যাবের মিডিয়া সেন্টার থেকে তোলা -ফোকাস বাংলা
কিশোর গ্যাং 'দি বস'-এর সদস্যদের হাতে খুন হন কলেজছাত্র মো. সোহাগ। এক রিকশাচালককে মারধরের প্রতিবাদ করায় তার ওপর চড়াও হয় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। তাদের উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে সোহাগের মৃতু্য হয়। এ ঘটনায় জড়িত 'দি বস ওরফে হূদয় গ্যাং'-এর প্রধান মো. হূদয়সহ দুইজনকে গ্রেপ্তারের পর মঙ্গলবার এসব তথ্য জানায়র্ যাব-১। গ্রেপ্তার অপরজন হলো- মাহবুবুল ইসলাম ওরফে রাসেল ওরফে কাটার। তাদের মধ্যে হূদয়ের বয়স ২২ ও রাসেলের বয়স ২০ বছর। রাজধানীর উত্তরখানে সোহাগ হত্যায় জড়িতদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে জানাতে গতকাল দুপুরে কারওয়ান বাজারের্ যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতের্ যাব-১ এর অধিনায়ক শাফী উলস্নাহ বুলবুল জানান, ২৭ আগস্ট রাত সাড়ে ৮টার দিকে উত্তরখানের রাজাবাড়ি খিষ্ট্রানপাড়া সড়কের ডাক্তারবাড়ি মোড়ে আড্ডা দিচ্ছিল কিশোর গ্যাং দি বসের হূদয় ও রাসেলসহ কয়েকজন। এ সময় ওই রাস্তা দিয়ে যাওয়া একটি রিকশার চাকা থেকে কাদা ছিটকে হূদয়ের গায়ে লাগে। এতে রাগান্নিত হয়ে সে রিকশাচালককে মারধর শুরু করে। অসহায় রিকশাচালককে মারতে দেখে সোহাগ এগিয়ে যান। তিনি মারধরে বাধা দিলে হূদয় ও রাসেল ক্ষিপ্ত হয়ে ফোনে গ্যাংয়ের সদস্য নাদিম, সানি, মেহেদী, সাদ ও সাব্বিরসহ কয়েকজনকে ডেকে নেয়। এরপর সবাই মিলে সোহাগের ওপর আক্রমণ চালায়। তখন নাদিমের কাছে থাকা ধারাল ছোরা নিয়ে সোহাগের পেটে উপর্যুপরি আঘাত করে রাসেল। সোহাগকে স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হলে রাত ১০টার দিকে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। সোহাগ উত্তরা পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্র ছিলেন। চলতি বছর তার এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল। লেখাপড়ার পাশাপাশি তিনি গাজীপুরের টঙ্গী বাজারে ভগ্নিপতির ব্যবসার দেখভাল করতেন। তাকে হত্যার ঘটনায় উত্তরখান থানায় মামলা হয়। পুলিশের পাশাপাশির্ যাবও এ ঘটনার ছায়াতদন্ত শুরু করে। একপর্যায়ে সোমবার গভীর রাতে দক্ষিণখানের মোলস্নারটেক এলাকা থেকে রাসেল ও হূদয়কে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছে পাওয়া যায় দুটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন ও আট রাউন্ড গুলি। ষষ্ঠ শ্রেণি পাস হূদয়ের গ্যাং 'দি বস':র্ যাবের জিজ্ঞাসাবাদে হূদয় জানায়, সে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়ার পর উত্তরার একটি ওয়ার্কশপে কাজ শুরু করে। তার সঙ্গে রাসেল, নাদিম, সানি, মেহেদী, সাদ ও সাব্বিরসহ এলাকার কিশোরদের সুসম্পর্ক ছিল। এরই সুবাদে সে তাদের সবাইকে নিয়ে কিশোর গ্যাং 'দি বস' প্রতিষ্ঠা করে এবং এর নেতৃত্ব দেয়। এই দলটি 'হূদয় গ্যাং' নামেও বহুল পরিচিত। এই গ্যাংয়ের সদস্য ১০-১২ জন। হত্যাকান্ডের পর হূদয় সবাইকে আত্মগোপনে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। ওই অবস্থায় তারা দেশত্যাগের পরিকল্পনা করে। এ বিষয়ে প্রস্তুতির জন্য তারা ঢাকায় এসেছিল। রাসেল জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, ফায়দাবাদ আলিয়া মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাসের পর সে উত্তরা আইডিয়াল কলেজে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ছে। হূদয়ের গ্যাংয়ের সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সুযোগে কোনো ঝামেলা হলেই পায়ের রগ কাটার ভয় দেখাত। সবসময় তার সঙ্গে ছুরি, ক্ষুর ইত্যাদি থাকত। পায়ের রগ কাটার হুমকি দেয় বলে সমবয়সি সবাই তাকে 'কাটার রাসেল' নামে ডাকতে শুরু করে। ঘটনার পর সে গ্রেপ্তার এড়াতে বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে ছিল। কোনো স্থানেই সে এক-দুই দিনের বেশি থাকেনি। এর আগে সোহাগ খুনের পরপরই সাব্বির নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে উত্তরখান থানা পুলিশ।