অসময়ে বন্যায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হাওড়ে

প্রকাশ | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
সুনামগঞ্জের বালিজুড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আঙিনায় পাহাড়ি ঢলের পানি -যাযাদি
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে একাধিকবার বন্যার পরে আবারও বন্যার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। প্রাকৃতিক এ দুর্যোগে ফসলের ক্ষতির পাশাপাশি দুর্গত এলাকায় নানা ভোগান্তি সৃষ্টি হচ্ছে। ছড়িয়ে পড়ছে রোগব্যাধি। এরইমধ্যে সুনামগঞ্জ ও লালমনিরহাটে অসময়ে ও চতুর্থ দফায় বন্যার খবর পাওয়া গেছে। আমাদের সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, হাওড়ে আশ্বিন মাসে বন্যা অবিশ্বাস্য হলেও এ নিয়ে চলতি বছর ৫ বার বন্যা দেখা দিয়েছে ওই অঞ্চলে। আবার যে হবে না তার নিশ্চয়তা মেলা কঠিন। টানা দু-তিন দিন বৃষ্টি হলেই পাহাড়ি ঢল, আর পাহাড়ি ঢল মানেই নিশ্চিত বন্যা। এর আগে এ রকম বন্যার মুখোমুখি পড়তে হয়নি হাওড়বাসীকে। গত মঙ্গলবার থেকে সারা দেশে মেঘবলয় সক্রিয় থাকায় দেশের সর্বত্রই বৃষ্টিপাত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় তাহিরপুরেও প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে সীমান্ত নদী যাদুকাটা ও আশপাশের নালা দিয়ে প্রচুর পাহাড়ি ঢলের পানি নামে। এতে একদিকে যেমন হাওড়ের নিম্নাঞ্চল পস্নাবিত হয় অন্যদিকে পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে যায় সীামন্ত অঞ্চলের আমন ফসল ও রবি শস্য। \হসেই সঙ্গে ঢলের পানি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে বন্ধ হয়ে পড়ে তাহিরপুর উপজেলা সদরসহ আশপাশের ইউনিয়ন ও জেলা সদরের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ। শুক্রবার টাঙ্গুয়া হাওড় ঘুরতে আসেন ভ্রমণ গ্রম্নপ এডভ্যাঞ্চার ম্যাডনেস। কথা হয় গ্রম্নপের এডমিন ইমতিয়াজ ফরহাদের সঙ্গে। তিনি জানান, তাহিরপুর-সুনামগঞ্জ সড়কে ৩ স্থানে, পানি থাকার কারণে তিনি অনেক কষ্ট করে তাহিরপুর পৌঁছেন। উজান তাহিরপুর (পূর্বের বাড়ির) গ্রামের প্রবীণ নুরুল ইসলাম, তিনি বলেন, জীবনে প্রথম বন্যা দেখলাম আশ্বিন মাসে। এর আগে কখনো আশ্বিন মাসে এত পানি হতে দেখিনি। উপজেলার সদর ইউনিয়ন জামালগড় গ্রামের সবজি চাষি সবুজ মিয়া। তিনি বলেন, দু-চার দিন \হএকটু বেশি বৃষ্টি হলেই বন্যা দেখা দেয়। কি করব এ নিয়ে ৩ বার সবজি বীজ তলা তৈরি করেছি আর তিন বারই ঢলের পানিতে বীজতলা নষ্ট হয়েছে। বালিজুরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হারুনর রশিদ। তিনি বলেন, এ নিয়ে বন্যার পানি ৫ বার আমার বিদ্যালয় আঙিনা ও বিভিন্ন কক্ষে প্রবেশ করেছে। বিগত বছরগুলোতে এতবার বন্যার মুখোমুখি হতে হয়নি। বাদাঘাট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আফতাব উদ্দিন, তিনি বলেন, চলমান ঢলে সৃষ্ট বন্যার পানিতে আমনের বেশি ক্ষতি হয়েছে। সেই সঙ্গে হাজারো কৃষকের সবজি খেত বিনষ্ট হয়েছে বলেও তিনি জানান। তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল বলেন, অসময়ের বন্যায় তাহিরপুরে ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে। অসংখ্য কৃষক জানিয়েছেন ঢলের পানিতে তাদের আমন জমির রোপণকৃত ধান তলিয়ে গেছে এবং সবজি খেতে পানি জমে নষ্ট হয়ে গেছে। \হএদিকে লালমনিরহাট প্রতিনিধি জানান, এ জেলায় ৪র্থ দফার বন্যায় ভোগান্তিতে পড়েছে বন্যার্তরা। উজানের ঢল আর টানা বর্ষণের কারণে তিস্তায় পানি বৃদ্ধি পেয়ে নিম্নাঞ্চল পস্নাবিত হয়েছে। এবারের বন্যায় জেলার ১৫টি গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। মানুষজন উঁচু সড়কে আশ্রয় নিয়েছে। বাড়িঘরে পানি ওঠায় ভোগান্তিতে রয়েছে তারা। পানিতে এক হাজার ৫ হেক্টর জমির আমন ধানসহ বাদাম ও সবজি খেত নষ্ট হয়ে গেছে। এদিকে পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নদীভাঙন অব্যাহত রয়েছে। ভাঙনকবলিত এলাকার লোকজন তাদের বাড়িঘর সরিয়ে নিরাপদ স্থানে যাচ্ছেন। লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর জানান, বন্যার্তদের জেলা প্রশাসন ত্রাণসহ বিভিন্ন সহায়তা দিয়ে আসছে। ইতোমধ্যে ১১৫ মেট্রিক টন চাল ও ৮১০ প্যাকেট শুকনা খাবার দেওয়া হয়েছে।