শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চিরনিদ্রায় শায়িত অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম

যাযাদি রিপোর্ট
  ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০
আপডেট  : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০৯
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের মরদেহ সোমবার হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে নিয়ে যাওয়া হলে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে তার সামরিক সচিব পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান -ফোকাস বাংলা

স্বজন-সহকর্মী ও মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। সব আনুষ্ঠানিকতা এবং জানাজা শেষে তাকে মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হয়। তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সোমবার বন্ধ রাখা হয় সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের সব কার্যক্রম। গতকাল সকালে দীর্ঘদিনের কর্মস্থলে কফিনবন্দি হয়ে আসে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের মরদেহ। এরপর সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেন প্রধান বিচারপতি, সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতি, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, আইনজীবীসহ তার দীর্ঘ কর্মময় জীবনের সহকর্মী-শুভাকাঙ্ক্ষীরা। সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটের দিকে রাজধানীর বেইলি রোডে অ্যাটর্নি জেনারেলের সরকারি বাসভবন থেকে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে নেওয়ার সময় সেখানে শোকাবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। প্রবল কান্নার মাঝে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমকে শেষ বিদায় জানিয়ে তার স্ত্রী বিনতা মাহবুব বারবার মৃত স্বামীর কাছে ক্ষমা চান। বিদায়ের মুহূর্তে তিনি লাশবাহী গাড়ি ধরে বারবার বলতে থাকেন, 'ক্ষমা করে দিও। ক্ষমা করে দিও তুমি। আমাকে ক্ষমা করে দিও।' এ সময় বিনতা মাহবুব স্বামীর জন্য দোয়া পড়তে থাকেন। পরে স্বজনরা এসে তাকে বাসার দিকে টেনে নিয়ে যান। জানাজা শেষে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, 'উনি অনেক কিছু শিক্ষণীয় দেখিয়েছেন, করে গেছেন এবং বলেছেন। সেই ক্ষেত্রে আমি অনুরোধ করব, যারা ওনাকে দেখে নাই, যারা ওনার সম্পর্কে জানে না, তারা তার আদর্শগুলো জেনে তা ফলো করার চেষ্টা করে।' জানাজায় অংশগ্রহণকারী আইনজীবীরা বলেন, সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে তিনি পেশাগত জীবনে কর্ম সম্পাদন করেছেন। এটি আমাদের সবার জন্যই অনুকরণীয়। তিনি একজন সৎ ও নির্ভরযোগ্য অ্যাটর্নি জেনারেল, যিনি তার দায়িত্ববোধ থেকে কখনো ব্যর্থতার পরিচয় দেননি। জানাজার পর মাহবুবে আলমের কফিনে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এছাড়া শ্রদ্ধা জানান প্রধান বিচারপতি, আইনমন্ত্রী, ল' রিপোর্টার্স ফোরামসহ বিভিন্ন সংগঠন। আনুষ্ঠানিকতা শেষে তাকে মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মাহবুবে আলম ২০০৯ সালের ১৩ জানুয়ারি দেশের ১৫তম অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ পান। মৃতু্যর আগ পর্যন্ত তিনি এই পদে দায়িত্ব পালন করছিলেন। ১৯৪৯ সালের ১৭ ফেব্রম্নয়ারি মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার মৌছামান্দ্রা গ্রামে জন্মগ্রহণকারী মাহবুবে আলম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৮ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স ও ১৯৬৯ সালে লোক প্রশাসনে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৭২ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৭৩ সালে তিনি বাংলাদেশ বার কাউন্সিলে তালিকাভুক্ত হয়ে ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্য হন। ১৯৭৫ সালে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে এবং ১৯৮০ সালে আপিল বিভাগে আইন পেশা পরিচালনার অনুমতি পান। ১৯৯৮ সালে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন মাহবুবে আলম। এছাড়া তিনি ১৯৭৯ সালে ভারতের নয়া দিলিস্নর 'ইনস্টিটিউট অব কনস্টিটিউশনাল অ্যান্ড পার্লামেন্টারি স্টাডিজ' থেকে সাংবিধানিক আইন ও সংসদীয় প্রতিষ্ঠান ও পদ্ধতি বিষয়ে ডিপেস্নামা ডিগ্রি অর্জন করেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকান্ডের মামলায় আইনজীবী হিসেবে যুক্ত থাকা মাহবুবে আলম সংবিধানের পঞ্চম, সপ্তম, ত্রয়োদশ ও ষোড়শ সংশোধনী মামলার রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবী ছিলেন। এছাড়া তিনি বিডিআর বিদ্রোহ হত্যা মামলাসহ সর্বোচ্চ আদালতে মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধ তথা যুদ্ধাপরাধ মামলার মতো ঐতিহাসিক অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ মামলা সাফল্যের সঙ্গে পরিচালনা করেছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে