বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

রাজস্ব আদায়ে ২ মাসে ঘাটতি ১০ হাজার কোটির বেশি

যাযাদি রিপোর্ট
  ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০
আপডেট  : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:১০

করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে গত অর্থবছরের পর চলতি অর্থবছরেও রাজস্ব আদায়ে বড় ঘাটতির দিকে যাচ্ছে বাংলাদেশ। দুই মাসেই (জুলাই-আগস্ট) এই ঘাটতির পরিমাণ ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি দাঁড়িয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) রোববার রাজস্ব আদায়ের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায় চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) সব মিলিয়ে ৩০ হাজার ১৬২ কোটি ৭৫ লাখ টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছে। এই সময়ে লক্ষ্যমাত্রা ধরা ছিল ৪০ হাজার ৯৪৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। এ হিসাবে ঘাটতি হয়েছে ১০ হাজার ৭৮৪ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। শতাংশ হিসাবে এই দুই মাসে রাজস্ব আদায় লক্ষ্যের চেয়ে ২৬ দশমিক ৩৩ শতাংশ কম হয়েছে। গত বছরের একই সময়ের চেয়ে আদায় বেড়েছে মাত্র দশমিক শূন্য ১৬ শতাংশ। অথচ গত অর্থবছরের এই দুই মাসে রাজস্ব আদায় তার আগের বছরের চেয়ে ৫ দশমিক ০৭ শতাংশ বেশি হয়েছিল। ২০১৯-২০ অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট সময়ে রাজস্ব আদায় হয়েছিল ৩০ হাজার ১৩৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। আমদানি ও রপ্তানিপর্যায়ে শুল্ক-কর, স্থানীয়পর্যায়ে ভ্যাট এবং আয়কর- এই তিন খাত থেকে এনবিআর রাজস্ব আদায় করে থাকে। করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে ব্যবসা বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়ায় রাজস্ব আহরণ গতি হারালেও চলতি অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা আগের চেয়ে সাড়ে ৮ শতাংশ বাড়িয়েছেন অর্থমন্ত্রী, যা 'অবাস্তব' বলে তখনই প্রতিক্রিয়া এসেছিল অর্থনীতিবিদদের কাছ থেকে। অর্থবছরের প্রথম দুই মাসের হতাশাজনক চিত্র দেখে অর্থনীতির গবেষক আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, 'রাজস্ব আদায় কম হবে, এটা তো অবধারিতই ছিল। সরকারও জানত কম হবে; এনবিআরের কর্মকর্তারাও জানতেন কম হবে। উচ্চাভিলাষী-অবাস্তব লক্ষ্য ধরলে তো এমন হবেই।' এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, 'একটি কঠিন সময় পার করছি আমরা। এমন মহামারির মুখোমুখি কখনই হয়নি আমরা। রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে তাই কৌশলী হতে হবে। কোভিড-১৯-এর এই কঠিন পরিস্থিতিতে যেসব খাত ভালো করছে, তাদের কাছ থেকে বেশি কর আদায় করতে হবে; আর যারা খারাপ করছে তাদের ছাড় দিতে হবে।' চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে আদায়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে মূল্যসংযোজন কর বা ভ্যাট থেকে ১ লাখ ২৮ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা। এছাড়া আয়কর ও ভ্রমণ কর থেকে ১ লাখ ৫ হাজার ৪৭৫ কোটি এবং আমদানি শুল্ক থেকে ৯৫ হাজার ৬৫২ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে। এর মধ্যে জুলাই-আগস্ট সময়ে আমদানি ও রপ্তানিপর্যায়ে শুল্ক-কর থেকে ১৫ হাজার ৪৬২ কোটি ৬০ লাখ টাকা, স্থানীয়পর্যায়ে ভ্যাট থেকে ১৫ হাজার ৪৬৪ কোটি ৭৬ লাখ টাকা এবং আয়কর ও ভ্রমণ কর থেকে ১০ হাজার ২০ কোটি ১৩ লাখ টাকা আদায়ের লক্ষ্য ধরা ছিল। এনবিআরের তথ্যে দেখা যায়, ভ্যাট থেকে ১১ হাজার ৩৫১ কোটি ৭০ লাখ টাকা, আয়কর ও ভ্রমণ থেকে ৮ হাজার ৮০২ কোটি ৫৪ লাখ এবং আমদানি-রপ্তানি শুল্ক থেকে ১০ হাজার ৮ কোটি ৫১ লাখ টাকা আদায় হয়েছে। তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের জুলাই-আগস্টের চেয়ে এই বছরের জুলাই-আগস্টে আমদানি-রপ্তানি থেকে শুল্ক আদায় বেড়েছে ৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ। তবে স্থানীয়পর্যায়ে ভ্যাট আদায় কমেছে ২ দশমিক ৪১ শতাংশ। আর আয়কর ও ভ্রমণ কর কমেছে ১ দশমিক ১৮ শতাংশ। গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের মূল বাজেটেও এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ছিল ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। অর্থবছর শেষে আদায় হয় ২ লাখ ১৮ হাজার ৪০৬ কোটি ৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ গত অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ লাখ ১১ হাজার ৫৯৩ কোটি ৯৫ লাখ টাকা কম রাজস্ব আদায় হয়েছিল। পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান মনসুর বলেন, 'বাজেট ঘোষণার পরপরই আমরা বলেছিলাম, বিশাল এই লক্ষ্য অর্জন করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। করোনাভাইরাস মহামারিতে মানুষের আয়-উপার্জন নেই। সবকিছু খুলে দিলেও অর্থনীতি এখনো পুরোপুরি সচল হয়নি। কতদিনে আগের জায়গায় ফিরে আসবে নিশ্চিত করে কিছুই বলা যাচ্ছে না। এই অবস্থায় বেশি রাজস্ব আসবে কোত্থেকে? বাড়তি ট্যাক্স দেবে কে?'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে