শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

দুইশ বছরের পুরানো পেশা ধরে রেখেছেন তাবিজ কারিগররা

যাযাদি রিপোর্ট
  ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০
আপডেট  : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:১০
তাবিজের খোল গুছিয়ে রাখছেন এক নারী -যাযাদি

গ্রামের ভেতরে ঢুকতেই চারদিকে হাতুড়ির খট খট শব্দ শোনা যায়। কাছে যেতেই দেখা যায়, এ গ্রামের প্রায় প্রতিটি পরিবারের নারী-পুরুষ-শিশুরা তাবিজ তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ তাবিজের তৈরির কাঁচামাল তৈরি করছেন, কেউবা আগুনে দিয়ে তাবিজ গড়ছেন। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের সদর ইউনিয়নের মুশুরী, দক্ষিণবাগ ও ভিংরাবো এই তিন গ্রামের প্রায় ৫শ' পরিবার বাপ-দাদার দুইশ' বছরের পুরানো পেশা ধরে রেখে নিজেদের জীবিকা নির্বাহ করছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি মাসে এক একটি পরিবার প্রায় ৬ থেকে ৮ হাজার তাবিজ তৈরি করেন। সে হিসাবে ওই তিনটি গ্রামে তাবিজ তৈরি হয় প্রায় ৩০ লাখ। সাম্বু, বাম্বু, পাই, বড় মাজলা, ছোট মাজলা, মাস্তুলসহ এসব তাবিজের প্রায় অর্ধশত আঞ্চলিক নামও রয়েছে। এখানে তৈরি তাবিজের মধ্যে লোহার তাবিজের দাম সবচেয়ে কম। এছাড়া পিতল, রুপা ও স্বর্ণের তাবিজ আলাদা অর্ডারের মাধ্যমে তৈরি করেন তারা। যা দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলাসহ বিদেশে রপ্তানি করা হয়ে থাকে। বিশেষ করে পাকিস্তান ও ভারতে তাবিজের চাহিদা অনেক বেশি। পাইকাররা এখান থেকে তাবিজ কিনে নিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে দেশ-বিদেশে বিক্রি করেন। বর্তমানে এ পেশাটা লাভজনক হওয়ায় হিন্দু পরিবারের পাশাপাশি মুসলমান ৪ পরিবারগুলোও এ পেশার সঙ্গে জড়িয়েছেন। তাবিজ তৈরির কারিগর শহিদুল ইসলাম জানায়, প্রায় দুইশ' বছর আগে থেকে তাদের বাপ-দাদারা এ পেশায় জড়িত ছিল। তারাও এ পেশাটি ধরে রেখেছেন। তাবিজের দাম হিসেবে এর খরচ বর্তমানে অনেক বেশি। তারপরও তাবিজ তৈরি করে কারিগররা লাভ করছেন। তবে পুঁজির অভাবে তারা তাদের ব্যবসার পরিধি বাড়াতে পারছেন না। সরকারিভাবে সহজ শর্তে ঋণ পেলে এ পেশাটাকে আরও লাভজনক অবস্থায় নিয়ে যেতে সম্ভব হতো। নূরুল হক নামের এক তাবিজ কারিগর জানান, তাদের তৈরি তাবিজ কুমিলস্না, যশোর, চট্টগ্রাম, গাজীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা এসে তাবিজ কিনে নিয়ে যায়। পাইকাররা প্রতি মাসের শেষেরদিকে এসে তাবিজ কিনে নিয়ে যায়। কখনো কখনো তারা নরসিংদী, কুমিলস্নাসহ বিভিন্ন হাঁটে গিয়ে তাবিজ বিক্রি করেন। গৃহবধূ শিরিনা বেগম জানান, তিনি ঘরের কাজের পাশাপাশি অবসর সময়ে তাবিজ তৈরি করেন। এতে করে তার সংসারে বাড়তি আয়ের ব্যবস্থা হচ্ছে। তাবিজ তৈরিতে ভালো আয় হওয়ায় তিনি ও তার স্বামীর পাশাপাশি সংসার চালাতে অবদান রাখছেন। শত বছর বয়সি তাবিজ কারিগর শৈতা রানী দাস বলেন, 'বাবারে আমার শ্বশুর-শাশুড়ি এ তাবিজ বানাইত, এহন আমিও ওনাগো ঐতিহ্য ধইরা রাখছি। আমার পোলা-মাইয়া, নাতিন-নাতনীরেও কইছি তোমরা এই তাবিজ বানানের কাজ ধইরা রাখবা।' এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহ্‌ নূসরাত জাহান বলেন, তিনটি গ্রামের অনেকেই তাবিজ তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন শুনেছি। এখন তাবিজ তৈরির শিল্পটা টিকিয়ে রাখতে কারিগরদের সঙ্গে কথা বলা হবে। এছাড়া কথা বলে তাদের কি কি সুযোগ-সুবিধা দেওয়া যায় সে ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে